ঘড়িটাতে প্রায় নিভে যাওয়া টর্চের আলো ফেলতেই সুনন্দর একটা ঝটকা লাগল। অন্ধকারে এগারোটা বেজে গেছে। বাজবে না-ই বা কেন, সেই কতক্ষণ আগে সাড়ে দশটা দেখে গুটিগুটি পায়ে শেষ মোমবাতিখণ্ডটা জ্বালিয়ে, খাওয়া শেষ করেই নিভিয়ে দিয়েছে। কিছুটা গাফিলতি থেকেই ঘরে আর মোমবাতি কিনে রাখেনি। সেরকম দরকারও পড়েনি। কোনওদিন এই তিন বছরে দু পাঁচ মিনিটের জন্য কারেন্ট গেলেও সেটা ধরা ছোঁয়ার মধ্যে নয়। কিন্তু গত রাতে ঝড়ে সব লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার পর, কত যে ইলেকট্রিকের পোল উপড়ে পড়েছে তার কোনও হিসেব নেই। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোথাও তার ছিঁড়েছে তো কোথাও গাছের ডাল বা আস্ত একটা গাছই পড়ে গেছে পোলে ।

সকালে স্কুলে যে যার খুশি মতো কারেন্টের কথা বলতে আরম্ভ করেছিল। তবে ইতিহাসের তাজমুল সাহেব একটু আশার কথা শোনাল, ‘ম্যাক্সিমাম কালকের দিন, কারেন্ট চলে আসবে, জোর কাজ হচ্ছে।’ সবাই শুনে বলে উঠল, ‘আপনার মুখে ফুল চন্দন পডুক।’ সুনন্দ কিছু মন্তব্য করেনি, যে বিষয় জানে না, সে বিষয়ে কোনও রকমের মন্তব্য করা থেকে সবসময় নিজেকে সরিয়ে রাখে। তাছাড়া মাত্র তিনবছর হল এখানে এসেছে। এখনও এখানকার ইতিহাস ভূগোল সম্পর্কে কোনও জ্ঞান হয়নি বলে নিজে মনে করে। কারেন্ট না থাকলেও অর্থদফতরের একটা বিশেষ বিজ্ঞপ্তির জন্য স্কুলের সবাই বারবার মোবাইলের নেট খুলেছে। সেখানে সুনন্দের মোবাইলটাও বাদ পড়েনি। বাড়িতেও মা, ঝুমা এমনকী বিটকুর সাথে কথাও বলেছে, সকালে সন্ধেবেলাতেও। ঝুমা কারেন্টের কথাও জিজ্ঞেস করেছে। আসেনি, শুনে বলেছে, ‘তাহলে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ো।’

‘সেটা এমনিতেই করতে হবে। যা দু-এক টুকরো মোমবাতি আছে তা দিয়ে কোনও রকমে খাওয়াটুকু হবে।’ সুনন্দ বলে।

ঝুমা প্রতিবারের মতো সেই একই রেকর্ড করা কিছু বুলি আউড়ে ফোন বন্ধ করে। সুনন্দ ফোনটা কাটবার সময় লক্ষ্য করে চার্জ শেষ। ইন্ডিকেটরটাও ব্রিম করছে। উপায় না দেখে ফোনটা পুরোপুরি বন্ধ করে চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। মাঝে একবার উঠে মোম জ্বেলেই খান চার রুটি তৈরি করে দুধ গরম করে নেয়। তরকারি করতে আর ইচ্ছে করে না। আধপো দুধ, একটা মিষ্টি, তিনটে রুটি খাওয়া হয়ে যাবে। একটা বাড়তি করা থাকল। কোনদিন কীরকম খিদে থাকে। না হলে সকালে ভুলো তো আছেই। প্রতি সকালে গোপালদা দুধ দিতে আসার সময় ওটাও চলে আসে, লেজ নাড়ে। সুনন্দ রুটি, বিস্কুট কিছু একটা দিলে খেয়ে পালিয়ে যায়, পরের দিনের আগে আর ওর পাত্তা পাওয়া যায় না। এই বাড়িতে ভাড়া আসার মাস কয়েক পর থেকেই ভুলোর রুটিন মোটামুটি এই রকম। অবশ্য মাঝে কোনওসময় আর ঘুরতে আসে কিনা সুনন্দ জানে না। সারাদিন স্কুল, ফিরে সামনের লাইব্রেরিতে ছোটোখাটো একটা আড্ডা দিয়ে, রুটি তৈরি করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া। বেশির ভাগ শুক্রবার বাড়ি চলে যায়, ফেরে হয় রবিবার রাতে না হয় সোমবার সকালে। এই প্রোগ্রাম বদল বলতে মাঝে মাঝে স্কুলের কোনও স্যার বা দিদিমণিদের বাড়িতে গেট টুগেদার, তাও সব সময় যায় না।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...