সরাদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। জানলার ধারে এসে দাঁড়ায় সহেলি। পাশের বাড়ির ছাদের কার্নিশে একটা কাক ভিজে ঠকঠক করে কাঁপছে। আজ যে সহেলির কী হল কে জানে। শুধু কি আজ? নাকি প্রতিদিন?
মা, ও মা। আজ তো পঞ্চমী। আজই ঠাকুর চলে আসবে। কাল বিকেল থেকে নো এন্ট্রি। তাহলে কিন্তু এগারোটার পর বাবার স্কুটারে... তুমি তো ধ্যারধ্যারে স্কুটারে যেতে চাও না। উঁহু যেতে হবে কিন্তু।
আহা, তোমার পড়া নেই নাকি বিট্টু? পড়াশোনা না করলে বাবার তবু সেকেন্ড হ্যান্ড স্কুটার জুটেছে, তোমার ভাঙা সাইকেলও জুটবে না। যাও পড়তে বসো।
ও মা তুমি যাবে না, তোমার ফ্রেন্ডসদের সাথে রিইউনিয়নে?
যাব না, পড়তে বসো। (বেশ জোর গলায় বলে)
পাশের ঘর থেকে সহেলির শাশুড়ি বলে উঠলেন, আহা বউমা কতবার বলেছি না, আমার দাদুভাইকে সকাল সকাল উঠেই বকবে না। যাও না একটু ঘুরেই এসো। দুপুরে তো সব হয়ে যায়। আমি, নিরু আছি তো নাকি।
বউমার বিছানায় বসে নলিনীদেবী বলতে থাকেন, বউমা ভাত-কাপড়ের শাড়িটা পরে যেও। ওটা তোমায় খুব মানায়।
সহেলি খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে, তাইতো আমার বন্ধুদের আর অত ভালো শাড়ি আছে নাকি? ওরা এত ভালো শাড়ি তো চোখেই দেখেনি। নলিনীদেবী খানিকটা সংকুচিত হয়ে বেরিয়ে যান।
বর্তমানে সুনীলের ব্যাবসাটা পড়তির দিকে। অভাবের সংসারে সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় হাড়ভাঙা খাটুনি। সন্ধ্যার দিকে আবার সহেলির টিউশন ব্যাচ আসতে শুরু করবে। অলস ভাবে বিছানা ঝাড়ার ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তেই তোশকের তলা থেকে বেরিয়ে আসে ছোটো ছোটো দুটো ডেয়ারি মিল্ক। একটা চিরকুটে জড়ানো। তাতে লেখা একটা বিট্টুর আরেকটা বিট্টুর মায়ের জন্য। হ্যাপি বার্থডে।
চকোলেট দুটো নিস্পৃহ ভাবে টেবিলের পাশে তুলে রাখে। সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোনটাতে পিক পিক শব্দে একের পর এক নোটিফিকেশন আসতে শুরু করে। কালই সুনীল নেট প্যাক ভরে দিয়েছে। অভাবের সংসার হলেও সহেলির জন্য এসব ছোটোখাটো বিলাসিতা করেই ফেলে সুনীল।