তুষারের ফ্ল্যাটে আসা থেকে অসীমা এক মুহূর্তের জন্যেও বিশ্রাম নেননি। সন্ধে হলে রঞ্জনাকে এসে জিজ্ঞেস করলেন, 'রাত্তিরে তোর কী খেতে ইচ্ছে করছে বল, আমি বানিয়ে দিচ্ছি।' রঞ্জনা শাশুড়ির হাত ধরে খাটে বসিয়ে কোলে মাথা রাখল, 'তুমি যখন থেকে বাড়িতে এসেছ, এক মুহূর্তের জন্যেও বিশ্রাম নাওনি। রাত্তিরে তুমি কিচ্ছু করবে না, তুষার রেস্টুর্যান্ট থেকে খাবার নিয়ে আসবে।'
'এই অবস্থায় হোটেলের খাবার? ওই খাবার খেলে তোকে হাসপাতাল যাওয়ার হাত থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমাদের সকলের জন্যে চট করে কিছু একটা বানিয়ে নিচ্ছি যেটা খেলে তোর হজমের কোনও অসুবিধে হবে না। তার আগে তোর চুলে তেল লাগিয়ে চুলটা বেঁধে দিই চল। সন্ধে হয়ে গেছে চুল খোলা রাখতে নেই।'
তুষারও সঙ্গে সঙ্গে মায়ের সামনে উপস্থিত হল, 'মা আমাকেও মাথায় একটু তেল মালিশ করে দাও। জানো রঞ্জনা, বাড়িতে এই তেল লাগানো নিয়ে আমাদের দুই ভাই আর বাবার মধ্যে লড়াই বেধে যেত, কে আগে মায়ের কাছে বসে মালিশ করাবে।'
তেল মালিশ করে চুল বেঁধে দিতেই রঞ্জনার ঘুমে চোখ ঢুলে আসে। কখন চোখ লেগে গিয়েছিল জানে না, চোখ খুলল যখন তখন দেখে তুষার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। অসীমার আঙুলগুলো খেলা করছে তুষারের চুলের মধ্যে। মা ছেলেকে বলছেন, “আমি বাড়ি ছেড়ে কতদিন আর তোদের কাছে থাকব? রঞ্জনা খুব ভালো মেয়ে। বাড়িতে কোনও জিনিস কিনিসনি তাও ও তো কোনওরকম অভিযোগ করেনি। ওর চাহিদা খুব কম। মেয়েটার মনে কোনও লোভ নেই। এই সামান্য জিনিসেই সংসার সামলাচ্ছে। আমাকেও বারবার থেকে যাওয়ার জন্যে জোর করছে। বউমা-কে নিয়ে বাড়ি ফিরে চল। ওখানে ওকে দেখাশোনা করার জন্যে আমরা থাকব। ওর যা শরীরের অবস্থা, খাওয়াদাওয়ার উপর বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার যেটা তোর একার পক্ষে সম্ভব নয়। আর তোরা এখানে থাকলে আমার আর তোর বাবারও চিন্তার শেষ থাকবে না। রঞ্জনাকে বাড়িতে পেলে তোর বাবাও খুব খুশি হবেন।'