রীতা শিয়ালদা স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে ভিতরের দিকে একটা সিটে গিয়ে বসল। এখন তিনটের মতো বাজে। অফিস ফেরত লোকের ভিড় এখনও শুরু হয়নি। তাই ট্রেনটা একটু ফাঁকা। বাইরে তাপমাত্রা আজ চল্লিশ ছুঁয়েছে। চারদিকে গরম বাতাস দাবানলের মতো ছুটছে। বিশ্বায়নের যুগে গাছপালা বলতে তো তেমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। দিন দিন তাই গরমও বাড়ছে।
রীতা শাড়ির আঁচলটা দিয়ে ওর ঘামে ভেজা মুখটা মুছল। সকাল আটটা নাগাদ যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল, সূর্য তখন এতটা ক্রুদ্ধ ছিল না। তখনও পৃথিবীর উপর মায়ের ঠান্ডা আঁচল বিছানো ছিল। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আঁচলটা খসে পড়েছে। পিচ গলানো তাপমাত্রায় শুধু প্রকৃতি কেন, মানুষের ভিতরের আদিম রূপটাও যেন বেরিয়ে পড়তে চায়!
রীতা চোখ বন্ধ করে বসে ভাবতে লাগল। কেমন কাটল আজকের দিনটা? কেমন হয়েছিল ওর ইন্টারভিউটা? এবারও নিশ্চয়ই চাকরিটা হবে না! জনা দশেক ছেলে মেয়ে তো ইন্টারভিউ দিল। তার মধ্যে ওর মতো অনেকেই হয়তো ইন্টারভিউ ভালোই দিয়েছে, তবুও কয়েকদিন পর চাকরিটা পায়নি জানিয়ে ওদের নামে একটা চিঠি পাঠানো হবে। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত রীতার, আজকাল অবশ্য গা-সওয়া হয়ে গেছে। বিকেলের দিকে চিঠিটা পেলে কিছুক্ষণ একটু খারাপ লাগে, তারপর আবার শুরু হয় পেপার ঘেঁটে চাকরির বিজ্ঞাপন বার করা, দরখাস্ত করা, ইন্টারভিউ দেওয়া আর সব শেষে আবার এরকমই একটা চিঠির জন্য অপেক্ষা করা।
কিন্তু কেন? কেন রীতার জীবনটা এরকম উলটো প্রবাহে বইতে শুরু করল? কী দোষ ছিল ওর? শুধুই কি গরিব বাবা-মার ঘরে জন্মানো? নাকি সমাজের সেই সব অশ্লীল নোংরা লোভী মানুষজন, যারা রীতার মতো মেয়েদের শুধু ভোগ করতে জানে, ছিঁড়ে খেতে জানে, আর তারপর নিজের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ অন্যের পাতে ছুড়ে দিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ে নুতন কিছুর সন্ধানে?
এরকম তো ঠিক হবার কথা ছিল না। রীতা কখনও ভাবেওনি এরকম হতে পারে। রীতার ভাবনায় বাধা পড়ল যখন দমদম স্টেশনে ট্রেনটা থামল। লোকজন ওঠা নামা করতে শুরু করল। হঠাৎ একটি মেয়ে কাছে এগিয়ে এসে সামনের ফাঁকা সিটটায় বসতে বসতে বলল, 'কী রে রীতা না? আমায় চিনতে পারছিস?'