রাতে এইসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকালে উঠতে অনেকটা বেলা হয়ে যায়। অনেকটা বেজে গেছে। জলদি তমালের টিফিন করতে হবে। ফোনটা হাতে নিতেই চার পাঁচটা মেসেজ চোখে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপে, শৈবালদা পাঠিয়েছে। তমাল আর বিমলকাকুর ছেলের ছোটোবেলাকার ছবি। কী মিষ্টি লাগছে দুজনকে। এখন উত্তর দেওয়ার সময় নেই। তবু অজান্তেই ঠোঁটের কোণে একটা আলগা হাসি জড়ো হয়।
কাল তমালের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় শৈবাল খানিক বকবক করে কস্তুরীর নাম্বারটা নেয়। বলে, ঘরে বসে বসে বোর হলে কখনও সখনও মেসেজ কোরো।
ওর আর নতুন কথা কী থাকবে? বাইরের দুনিয়া বলতে কিছুই নেই, একমাত্র বই ছাড়া। ফোনটাও নেহাত্ তমালের জন্যই নেওয়া। তমাল একরকম জোর করেছিল। বলেছিল, বাড়িতে ফোন করলে কাউকে পাওয়া যায় না। মা চব্বিশ ঘণ্টা টিভি দেখে, মোটামুটি দামের একটা মোবাইল নাও কখনও কথা বলার দরকারও তো পড়তে পারে।
এই যে, বাসি কাপড় ছেড়েছ নাকি ওটা পরেই রান্নাঘরে ঢুকলে?
না মা, আমি শাড়ি ছেড়েই এসেছি। আজ একটু উঠতে দেরি হয়ে গেল।
সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তাড়াতাড়ি নাও। ছেলেটাকে একটু পেট পুরে খাওয়াতে পারি না ইচ্ছে থাকলেও, আমার তো বয়স বাড়ছে। কতদিন আর টানব? শ্রেষ্ঠা কতকিছু করে দেয় ছোটোটাকে। এত সকালে উঠতে পারি আমি? তুমি তো ভাত ছাড়া কিছুই পারো না।
শিখে যাব মা। রান্নাঘর ঝাঁট দিতে দিতে কস্তুরী বলে।
এতখানি বয়স হল কবে আর শিখবে বলো তো?
নতুন সকাল, একটা দিনের শুরু। অথচ কস্তুরী দিন শুরুর এই মুহূর্তগুলোতে রোজই জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে এমন একটা দিন আসুক, যে-দিনটা দেখে মনে হবে, অন্তত গোটা একটা ২৪ ঘন্টা ওর নিজস্ব হল। সম্পূর্ণ নিজের।
( ৪ )
নিজেদের ডিপার্টমেন্ট তো নয় যেন পুরো বৃন্দাবন। এ ওকে দাগা দিচ্ছে, এ অন্যেরটা ভাগাচ্ছে উফঃ ফাটাফাটি। রিমলি চেঁচিয়ে বলে।
বাংলা, বৃন্দাবন, বা বাল ব্রহ্মচারী…।
চুপ করতে কত নিবি ব্রত? দেখছিস একটা সিরিয়াস ম্যাটার নিয়ে কথা বলছি। সকাল থেকে মেয়েটা কিছু খায়নি। তার ওপর ফাজলামো মারছিস। তোর মুখ না জাঙ্গিয়া রে যে খুললেই বেরিয়ে পড়ে।
রিমলির কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে ব্রত।
এই তো জীবন। যাক না যেদিকে যেতে চায় মন। বেয়ারা চালাও ফোয়ারা।
ওরে বাপ আমার। হল কী? দিল গার্ডেন গার্ডেন যে! পার্থ বলে।
আরে পার্থ। কতদিন পর। তা তোমার হাঁটু কাঁপা কমেছে বাপ?
এখন একটু কম কম। কাঁচুমাচু মুখে পার্থ ব্রত-র কথার উত্তর দেয়।
হাঁটু কাঁপে? পার্থর আর্থ্রারাইটিস হয়েছে জানতাম না তো? চোখ গোল গোল করে রিমলি জিজ্ঞেস করে।
এ হাঁটু কাঁপা সে হাঁটু কাঁপা নয় বন্ধু। এর ওষুধ স্বযং হনুমানজিও আনতে পারবেন না! দাঁত বের করে শিরশিরে মার্কা হাসি হাসে ব্রত।
উফঃ বল না? রিমলি জোর করে।
রূপার পাছা। হালকা টোনে শব্দদুটো বলে দেয় ব্রত।
সে কী? আঁতকে ওঠে রিমলি!
একদমই তাই। আজকাল রুপার পাছা দেখলে জোরসে কেঁপে উঠতে শুরু করছে আমাদের শ্রীমান পার্থর হাঁটু। অনেক চেষ্টা করেছে জানিস। কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারে না। তুই এর কোনও উপায় করতে পারিস রিমলি?
না সত্যি আমার এর কোনও সলিউশন জানা নেই। কিন্তু…।
হ্যাঁ বন্ধুবর্গ, আমরা সবাই জানি আমাদের পার্থ আপাতত পাছাতেই কাছা মেরে রেডি হয়ে আছে যদি কিছু একটা করা যায়। ব্রত হাসে।
উফ তোরা থামবি। রিমলি বলে।
আরও একবার ভয়ানক হাসির রোল ওঠে রিমলি, ব্রত, আর পার্থর মধ্যে।
কী রে কস্তুরী চললি কোথায়?
বাড়ি গিয়ে একটা পড়ানো আছে। কাঁধে ব্যাগ তুলে উঠে দাঁড়ায় ও।
কেসটা কী রে রিমলি? পার্থ আর ব্রত প্রায় সমস্বরে বলে ওঠে।
আরে সেই অশরীরী প্রেমিক।
বলিস কী? অশরীরী কেন? ব্রতর মুখের হাঁ-টা আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়।
বলছি দাঁড়া। কস্তুরী তোর এখন বাড়িতে কি না গেলেই নয়? ঘরে গিয়ে তো বালিশ ভেজাবি। আমাদের সঙ্গে থাকলে তাও মনটা…। তাছাড়া ও কোন হরিদাস পাল? তোর ওই চোখ দেখেই যে-কেউ অক্কা পাবে। দুদিনে লাইন লেগে যাবে ভাবছিস কেন? আরে আমি অনেকদিন থেকেই টের পাচ্ছি আমার এই সুন্দরী বান্ধবী তলে তলে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে। হে হে রিমলির চোখকে ফাঁকি দেওয়া কী এতটাই সোজা? তাই আমি ওর বয়ফ্রেন্ড-এর নাম রেখেছি অশরীরী। দেখা যায় না কিন্তু যার কথা শোনা যায়। হাত টেনে জোর করে কস্তুরীকে বসিয়ে রিমলি কথাগুলো বলে যায়।