তোমার বাবা আমাকে সমস্ত কিছু বলেছেন। তোমাকে পুরো ব্যাপারটা খুলে না বললে তুমি বিন্দুবিসর্গ কিচ্ছু বুঝতে পারবে না। সেদিন তোমার বাবা অফিসের কোনও কাজে ভেলোরে যাচ্ছিলেন। সেই ট্রেনে আমি আর আমার বাবা-ও ছিলাম। বাবার হার্টের প্রবলেম অনেকদিনের। সে-বার বাড়াবাড়ি হওয়াতে ভেলোরে নিয়ে যাচ্ছিলাম। ডাক্তার দেখাতে। দু-রাত ট্রেনে থাকতে হবে। বাবা ভীষণ বাকপটু মানুষ ছিলেন। মনের মতো মানুষ পেলে আর ছাড়তেই চাইতেন না। আমাদের উলটো দিকের বার্থেই ছিল তোমার বাবার সিট। কাজেই বাবা বেশ ভাব জমিয়ে নিয়েছিল ওনার সঙ্গে। সব ঠিক ছিল, বিপত্তি ঘটল সেই রাতেই। বাবার হঠাৎ করে বুকে ব্যথা শুরু হল। চোখের সামনে মানুষটা ছটফট করছে অথচ কিছু করতে পারছি না। অবস্থা দেখে উনি এগিয়ে এসেছিলেন। প্রাথমিক ভাবে বাবাকে জল-টল খাইয়েও যখন কিছু হল না, তখন উনি চেন টেনে ট্রেন দাঁড় করালেন। ট্রেন দাঁড়াল কাঁসাদি নামক স্টেশনে। নেমেই সেখানকার লোকের সহায়তায় বাবাকে ওখানকারই একটা হাসপাতালে ভর্তি করা হল। কন্ডিশন একেবারে ভালো নয়। হার্ট বিট ফ্লাকচুয়েট করছে। প্রেসার মাত্রাতিরিক্ত। কিছুতেই কন্ট্রোলে আনা গেল না।
সকলে মন দিয়ে কাকলির কথা শুনছেন, আর তিনি একনিশ্বাসে বলে চলেছেন। ‘আইসিইউয়ের বাইরে বসে পাগলের মতো কাঁদছি। কী করব বাবা ছাড়া এ-পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। ঠিক সেই সময় ডাক্তার এসে বলেন 'পেশেন্ট-এর কন্ডিশন খুব খারাপ। আর বোধহয়...'। ছুটে গেলাম বাবার কাছে। গিয়ে দেখি বাবার দু-চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে যাচ্ছে, তোমার বাবার হাত দুটো ধরে আমার বাবা বলছেন, “আমি ছাড়া ওর যে আর কেউ নেই বাবা। একা পেয়ে ওকে যে চিল-শকুনে ছিঁড়ে খাবে। আমার মানুষ চিনতে ভুল হয় না হয় না বাবা, তুমি ওর দায়িত্ব নাও...।'
কিছু বলতে যাচ্ছিল তোমার বাবা। কিন্তু উনি বলার আগেই বাবা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন, ওনার হাত দুটো আরও শক্ত করে ধরে হাঁফাতে হাঁফাতে বলেন, 'বলো বাবা তুমি ওর দায়িত্ব নেবে। তাহলে আমি মরেও শান্তি পাব।'