পথ বেঁধে বন্ধনহী গ্রন্থি...
কীসের টানে- কেন যাওয়া জানি না, তবু যেতেই হবে। Destination Tumling। সান্দাকফুর পথে যারা ইতিমধ্যেই পথিক হয়েছেন Tumling-এর সঙ্গে তাদের নিশ্চয়ই পরিচয় হয়েছে। মানেভঞ্জন থেকে Trekking এবং গাড়িতে– দু’ভাবেই সান্দাকুফ যাওয়া যায়। পথে পড়ে তুমলিং।
মানেভঞ্জন থেকে কিলোমিটার দুয়েক এগোলেই এ পথের প্রথম গ্রাম চিত্রে। অল্প কিছু বাড়িঘর আর গোটা-দুই দোকান এই নিয়েই।চিত্রে মনেস্টারির কিছু ওপরে গাড়ির রাস্তাটা দু’টো বড়ো পাক খেয়ে দূরে হারিয়ে গেছে। জমজমাট মানেভঞ্জনের পরে খান কয়েক ঘরের এই চিত্রে-কে বড়ো নিঃসঙ্গ বলে মনে হয়। তাই তাকে ছেড়ে যেতেও মায়া হয়।
চিত্রের আরও কিছু দূর এগোলেই ছোট্ট জনপদ লামেধুরা। দূরত্ব সাড়ে তিন কিলোমিটার।মূলত রডোডেনড্রনের বন, তবে এপ্রিলের গুরাস মরসুম ছাড়া ফুল থাকে না তেমন। কেউ যেন পাখার বাতাস করতে করতে সেই বনপথে মেঘ উড়িয়ে নিয়ে চলেছে। আগে পিছে সব মেঘে ঢেকে গিয়ে হঠাৎ পথ হারানোর ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে। ফেলে আসা ধোঁয়াটে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকলে বেলা গড়িয়ে যায়৷।
কোনো কোনো জায়গায় পথ বড়োই এবড়োখেবড়ো। উঠতে নামতে বেশ কষ্ট। চলতে চলতে এক সময় আবছা কয়েকটা বাড়ি চোখে পড়ে। আরও দু’ কিলোমিটার পথ চলে এসেছি।পাহাড়ের নীচের ঢালে লামেধুরা যেন তখন শীতঘুমে জবুথবু। তিন কিলোমিটার এগোলেই মেঘমা। উচ্চতা ২৮৯৫ মিটার। সার্থক নাম। এই মেঘের রাজ্যে পা দিতে হয় নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে।
মেঘমা থেকে তুমলিং মাত্র তিন কিমি। হিমালয়ের কোলে সিঙ্গালীলা অরণ্যের অন্তর্গত ২৩৯৫ মিটার উচ্চতায় পিচকার পোস্ট কার্ড গ্রাম তুমিলিং। হাত বাড়ালেই কাঞ্চনজংঘা-সহ বেশ ক’খানি গিরিশৃঙ্গ। দুধ সাদা মেঘে যেন উপত্যকাটা মাখামাখি। তেমনই মায়াময় স্থানীয় মানুষজন, চেরা চোখের শিশুর দল।
এই মেঘ মুলুকের প্রতিটি পরতে যেন রহস্য। বিচিত্র রং আর নানা আকৃতির ফুল স্বাগত জানায় পথিককে। আর যতদূর দৃষ্টি প্রসারিত হয় দুর্জয় ঔদ্ধত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি, ‘কাঞ্চনজংঘা’। হঠাৎই বৃষ্টি নামে। মেঘ-কুয়াশ ঘিরে ধরে। গুটিসুটি শীতের চাদরে মুড়ে ঘুম দেয় তুমলিং।