বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টা জার্নি। তারপর গাড়ি থেকে নেমে এত বিস্ময় লুকিয়ে ছিল তা ধারণাতেই আসেনি! সবুজের দুনিয়া। রূপকথার মতো সুন্দর! দল ছিল তিনজনের নির্মল, সুজাতা আর আমি। কেউ যেন বলেছিলেন, সফরসঙ্গী হবে মনের মতো। নইলে ঘুরে মজা নেই। আমাদের তিনজনের এই দল বেড়াতে যাওয়ার পক্ষে একেবারে পারফেক্ট টেন।
গাড়ি এসে সটান ঢুকল হোটেলে। বিশাল এবং ঝকঝকে। আমাদের আগে বলাই ছিল। ঘর দুটি পেলাম মনোমতো। পাহাড়মুখী। ভারী পর্দা টেনে খুলে দিতেই ঘরের ভিতর হুমড়ি দিয়ে পড়ল পাহাড়ি কন্যম। হ্যাঁ, আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল কন্যম। পূর্ব নেপালের ছোট্ট এক পাহাড়ি জায়গা। আমরা যখন পৌঁছেছিলাম তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার মুহূর্ত। তাই আলো-আঁধারিতে ঠিক মাপতে পারিনি। তবে হোটেলের ঘরে কাচঘেরা অংশটি দিয়ে লক্ষ্য করেছি পাহাড়ের গায়ে বাড়িগুলোতে আলো জ্বলে উঠেছে। মনে হচ্ছিল, কেউ যেন পাহাড়ের ভালে টিপ পরিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। ভীষণ ঠান্ডা থাকায় ব্যালকনির দরজা খুলে বাইরে আর বেরোইনি।
ভাগ্যিস গতকাল সন্ধ্যায় ব্যালকনিতে যাইনি! নইলে আসল মজাটা মাঠে মারা যেত পরদিন ভোরে। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে। আড়মোড়া ভেঙে পর্দা সরাতেই বিস্মিত হই ঘুমচোখে! রং খেলা শুরু হয়েছে পুব দিগন্ত জুড়ে। লালজামা গায়ে সূর্যদেব হামা দিতে শুরু করেছেন। আর নয়। বিছানা ছেড়ে ব্যালকনিতে। ঝুলবারান্দায় দাঁড়াতেই অবাক! চারপাশ বেবাক খোলা। শুধুই চা-বাগান। মাঝেমধ্যে পাইন আছে দাঁড়িয়ে বাঁদিকে চোখ যেতেই দূরে দেখি একচিলতে কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি মারছে। সাতসকাল তাই মেঘেরা বাসা ছাড়েনি। নইলে কি কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হতো? বেলা বাড়তেই কাঞ্চনজঙ্ঘা অদৃশ্য।
আমরাও প্রাতঃরাশের অর্ডার দিয়ে তৈরি। আজ যাব লাভ পয়েন্ট। জেনে নিয়েছি সকলেরই রয়েছে সেখানে যাওয়ার অনুমতি। কোনও বিধিনিষেধ নেই। হাঁটাপথের দূরত্ব। তবে নতুন জায়গা, প্রথমদিন তাই আর ঝুঁকি নিইনি। অটো চলে এল সময়মতো। চলো পানসি লাভ পয়েন্ট। হাওয়াই গাড়ির মতো উড়ে গেল। লাভ পয়েন্ট চা-বাগানের মাঝে নিরিবিলি এক জায়গা। গাড়ি রাস্তা থেকে সামান্য কিছু চড়াই ভেঙে ওপরে উঠতে হয়। চা-গাছের মধ্যে অনেকেই বসে। তাদের কণ্ঠস্বরে সজাগ হতে হয়। লাভ পয়েন্ট জায়গাটি স্বপ্নময় সুন্দর। চারিপাশ পাহাড় ঘেরা। আর পাহাড়-শরীর জুড়ে শুধুই সবুজ। চা-বাগানের শ্যামলিমা হাতছানি দেয়! কাছে ডাকে। কত কত চা-বাগান! নীল আকাশের নীচে সবুজ গালিচা বিছানো! সত্যিই এক স্বপ্নের দেশ, রূপকথার দেশ!