মহারাষ্ট্র বললেই আমাদের ঝাঁ চকচকে শহর মুম্বইয়ের কতা মনে পড়ে৷ কিন্তু পশ্চিমঘাট পর্বতমালা আরব সাগরের সৌন্র্যে মহারাষ্ট্রে আরও অনেক কিছুই দেখার আছে৷যারা হাইকিং করতে ভালোবাসেন, আছে তাদের মন ভালো করা ট্রেক রুট৷ আর যারা স্রেফ অবসরযাপনে যেতে চান তাদেরও পছন্দসই ডেস্টিনেশন রয়েছে এই রাজ্যে৷ আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক, কী সেই ডেস্টিনেশন৷
মালসেজঘাট–শিবনেরি দুর্গ
ট্রেকার ও অ্যাডভেঞ্চার বিলাসীদের পছন্দের জায়গা হতে পারে মহারাষ্ট্রের মালসেজঘাট। বর্ষায় পরিযায়ী ফ্লেমিংগো পাখিরা এখানে আস্তানা গাড়ে। তৃতীয় শতকের প্রাচীন বৌদ্ধগুহা সম্বলিত মালসেজঘাটের বাতাসে ইতিহাসের গন্ধ মাখামাখি। ২৮ কিমি দূরে শিবনেরি দুর্গ, অর্থাত্ শিবাজির জন্মস্থান। পৌঁছোনোর জন্য নিকটস্থ স্টেশন কল্যাণ। বর্ষার রোমান্টিক জায়গাগুলির অন্যতম মালসেজঘাট। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই অঞ্চলের জলপ্রপাতগুলিতে ঢল নামে। সুন্দরী হয়ে ওঠে মালসেজঘাট। এমটিডিসি-র ফ্ল্যামিংগো হিল রিসর্ট তখন স্বর্গ হয়ে ওঠে।
ভোরবেলায় উঠে হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে ট্রেক শুরু করুন। মালসেজঘাটের জঙ্গলঘেরা পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে প্রাণভরে অনুভব করুন প্রকৃতিকে। ফুসফুসে ভরে নিন অক্সিজেন। দুপুর হবার মুখে পৌঁছে যাবেন লক্ষ্যে। এপথেই একসময় বণিকরা পাড়ি দিত। রাজার হুকুমে পথের পাশে রাখা পাথরের কলশিতে টোল ট্যাক্স বা স্বর্ণমুদ্রা ফেলতে হতো। এখনও সেই পাথরের কলশি রয়ে গেছে ইতিহাসের স্মৃতি বহন করে।
হাইকিং করে যেখানে পৌঁছোবেন বস্তুত সেটি একটি সমতল টেবিল ল্যান্ড। সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো এই প্রান্তর চোখ জুড়িয়ে দেবে।
হাইকার ছাড়া সাধারণ পর্যটকরাও যেতে পারেন মালসেজঘাটে। অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ না হলে মালসেজঘাটে মহারাষ্ট্র টুরিজমের ঘরে বসে চারপাশের নিসর্গ উপভোগ করুন। মেঘ ছুঁয়ে যাবে আপনার চিবুক। গাছের পাতায় ঝরতে থাকা বৃষ্টিবিন্দুর সোঁদা গন্ধে মন হারানোর এ এক আশ্চর্য ঠাঁই।
মালসেজঘাট গেলে দেখতে ভুলবেন না শিবনেরি দুর্গ। কথিত আছে শিবাজি এখানেই তাঁর অস্ত্র প্রশিক্ষণ করতেন। ১০৬৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই কেল্লা পর্যটকদের পরম আকর্ষণের বস্তু।
কেল্লাটির সাতটি দরজা। মহা দরওয়াজা, পারভানগিছা দরওয়াজা, হস্তি দরওয়াজা, পির দরওয়াজা, সিপাই দরওয়াজা, ফটক দরওয়াজা এবং কুলবত দরওয়াজা। পাথরের এই কেল্লার ভিতর রয়েছে একটি আস্ত হ্রদ, যার নাম বাদামি তালাও। সে আমলের কিছু ধ্বংসাবশেষ আজও দেখা যায় এখানে গেলে৷
কীভাবে যাবেন : হাওড়া থেকে কল্যাণ যাচ্ছে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস, হাওড়া-মুম্বই দুরন্ত এক্সপ্রেস ও মুম্বই মেল। কল্যাণ থেকে অটো রিকশায় পৌঁছোনো যায় মালসেজঘাট।
কোথায় থাকবেন : এমটিডিসি-র হিল রিসর্ট। কলকাতা যোগাযোগ : ১৫৫ লেনিন সরণি, কমলালয় সেন্টার, কলকাতা – ৭০০ ০১৩।
কলাবতীন ফোর্ট ট্রেক
কলাবতীন ফোর্ট : কেউ বলে কলাবতীন কেউ কলাভাঁতিন দুর্গ। যেনামেই ডাকুন সহ্যাদ্রি পাহাড় শ্রেণির ট্রেকগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ট্রেক। তবে হুঁশিয়ার হৃদয়ন্ত্র দুর্বল হলে এই দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চার না করাই ভালো। মুম্বইকরদের অনেকেরই পছন্দের ডেস্টিনেশন এটা, পুণে ও মুম্বই দু জায়গা থেকেই পেঁছোনো যায় এই ডেস্টিনেশনে।
দুপুর দুপুর রওনা দিন মুম্বই থেকে যাতে ওভারনাইট ক্যাম্প করা যায় পাহাড়ের নীচের উপত্যকায়। এর জন্য পৌঁছোতে হবে ঠাকুরওয়াড়ি গ্রামে। পানভেল স্টেশনে নেমে বাস বা অটোতে পৌঁছোনো যাবে এই গ্রামে।
গ্রাম থেকে ক্লাইম্ব শুরু হয় প্রবাল উপত্যকায় ক্যাম্প করার জন্য। ২০-টির মতো তাঁবু ফেলার জায়গা আছে সেখানে। ঘন্টা দুয়েকের চড়াই ভেঙে সূর্যাস্ত হবার আগেই পেঁছোন এই ভ্যালিতে, তারপর তারাভরা আকাশকে সাক্ষী রেখে কাটান এক সারাজীবন মনে রাখার মতো সময়।
বস্তুত কলাভাঁতিন দুর্গ হল এই প্রবাল উপত্যকা উত্তর অংশের একদম শীর্ষ বিন্দু। একটা খাড়াই সিঁড়িপথ ধরে পরদিন সকাল থেকে শুরু হোক ট্রেক। ৬৮ মিটার উচ্চতায় পেঁছে চারপাশের ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্যপট সারাজীবনের জন্য মনক্যামেরায় বন্দি হয়ে থাকবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে মাথেরান রেঞ্জও ধরা দেবে খালি চোখে। চারপাশ ঘুরে দেখে নিতে পারবেন চান্দেরি, ইরশালগড় ও কারনালা।
কীভাবে যাবেন : মুম্বই থেকে ট্রেনে বা গাড়িতে ১ ঘন্টায় পানভেল, তারপর ঠাকুরওয়াড়ি গ্রাম।
কোথায় থাকবেন : প্রবাল উপত্যকায় দু-একটি বাড়িতে হোমস্টে অপশন আছে, নয়তো তাঁবুই ভরসা।