পর্ব – ১
বেলা সোয়া দশটা নাগাদ আলিপুর থানায় একটি মারুতি ওয়ান থাউজেন্ড কার এসে থামে। গাড়ির দরজা খুলে নেমে আসেন বছর ষাটেকের এক ব্যক্তি। যথেষ্ট স্থূলকায়, মুখ চোখ ভারী ভারী, চোখের নীচে অ্যালকোহলিক ফ্যাট, ভদ্রলোক উচ্চতায় প্রায় ছ’ফুট, পরনে ক্রিমরঙা ট্রাউজারস, গায়ে হাফ হাতা নীল শার্ট ছেড়ে পরা, পায়ে এক জোড়া চপ্পল। ভদ্রলোকের চুল উশকোখুশকো। দু’চোখ ভরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে তিনি থানার প্রবেশ মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সেন্ট্রি কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসা করেন, ভাইসাব, ওসি-সাহেব কাঁহা বৈঠতে হ্যায়?
–কেন, ওসিকে কী দরকার? পালটা প্রশ্ন বাঙালি কনস্টেবলের।
–মুঝে এক ইনফর্মেশন দেনা হ্যায় উনকো। কাল রাত মেরে ঘরমে এক মৌত হো গয়ি, চাপা উত্তেজনা ভদ্রলােকের গলায় ফুটে ওঠে।
–ও আচ্ছা, আপনি এক কাজ করুন, একটু এগিয়ে বাঁদিকের ঘরে যান, ওখানে ডিউটি অফিসার মি. সান্যাল আছেন এখন চার্জে, ব্যাপারটা ওনাকে বলুন। মৃত্যুর কথাটা সেন্ট্রি কনস্টেবলকে খুব একটা নাড়া দিল বলে মনে হল না।
সেন্ট্রি কনস্টেবলের নির্দেশ মতন ভদ্রলোক এগিয়ে যান, ডিউটি অফিসারের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বলেন, মে আই কাম ইন স্যার?
সকালবেলার পেপারটা সবে মাত্র চোখ বোলাচ্ছিলেন মি. সান্যাল। টেবিলের ওপরে রাখা চা। একটু একটু করে চা পান, একটু একটু করে কাগজ পড়া, এতেই অভ্যস্ত তিনি। সেদিনও নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি। এমন সময় এই আপদ, পেপার থেকে চোখ সরিয়ে নাকের ওপর ঝুলে থাকা চশমাটা একটুও পেছনে না ঠেলেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে জরিপ করেন তিনি। মুখ থেকে স্বভাবসিদ্ধ কণ্ঠে বেরিয়ে আসে, ইয়েস্, প্লিজ কাম ইন্।
ভদ্রলোক দ্বিধাগ্রস্ত পায়ে এগিয়ে আসেন। বোধ হয় জীবনে এই প্রথম থানায় এলেন। তিনি চেয়ারের সামনে এসে দাঁড়ান।
প্লিজ সিট ডাউন, চোখের ইঙ্গিতে চেয়ারটি দেখান সান্যালবাবু, তারপর বলেন, হোয়াট ক্যান আই ডু ফর ইয়ু মিস্টার...
–আগরওয়াল, চেয়ারে বসতে বসতে কথা সম্পূর্ণ করেন ভদ্রলোক।