আমি উত্তমকুমার।

হাবরা থানার সেকেন্ড অফিসার টেবিল থেকে মুখ তুলে দুটো ভ্রূ যথাসম্ভব কাছাকাছি আনলেন। তাঁর চোখের শ্লেষ ও বিরক্তির জিজ্ঞাসায় কিছুটা থতমত, টেবিলের অপর প্রান্তের দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি গড়গড় করে বলতে থাকে– মানে আমি উত্তমকুমার দাম। আজ ২টো ২০-র বনগাঁ লোকালে আমার পিক্পকেট হয়েছে। হাজার দেড়েক টাকা ছাড়াও ওয়ালেটে ছিল ব্যাংকের ডেবিট কার্ড। আর পকেটের মোবাইলটাও গেছে। হাবরা থানার সেকেন্ড অফিসারকে এটুকু বলতেই ঘেমে একসার। আসলে থানা-পুলিশ নিয়ে তার দুর্বলতা আছে।

সেদিনও ঘেমে নেয়ে দুপুর রোদের ভেতর এক সংবাদপত্রের অফিসের বিজ্ঞাপন বিভাগে ঢুকে কাগজে লেখা টুকরোটি দিয়েছিল। ‘আমি উত্তমকুমার দাম। বয়স পঁয়ত্রিশ। অবিবাহিত। কর্পোরেট সংস্থায় চাকুরে। বিবাহে ইচ্ছুক। দ্রুত যোগাযোগ করুন।’সেদিন মঙ্গলবার, পরের রোববারের কাগজে বেরিয়ে যাবে বিজ্ঞাপন। সুইং ডোর ঠেলে পথে নেমে পড়ে। দেখা যাক। নীরদ চৌধুরির কথাটা প্রেমে ল্যাং খাবার পর প্রতিদিনই চোখের সামনে ভেসে উঠছে– ‘বাঙালিরা কোনও কাজ নিজে নিজে করতে পারে না, এমনকী নিজের বিবাহটাও নয়।’ দেখা যাক। গোটা ব্যাপারটাই নিজের হাতে করব। ছাঁদনাতলা থেকে রাঁধুনি– সব নিজের হাতে করব। এমনকী করবীকে নিজের হাতেই বিয়ের আমন্ত্রণপত্রটি দিয়ে চা খেয়ে আসব। বিয়ের একটা ডেট ঠিক করে ফেলা যাক। ১৮ অগ্রহায়ণ। শুক্রবার। ঠিক থাকল। না অন্য কেউ দিন ঠিক করবে না। যে মেয়ে বিয়ে করবে তাকেও ওই দিনেই বিয়ে করতে হবে। কোনও পালটাপালটি নয়। কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে আজই কার্ডের নমুনা টমুনা দেখে আসতে হবে। বিয়ের কার্ড অন্তত শ’পাঁচেক ছাপতে হবে। রাসবিহারী কানেক্টরে বোসপুকুরের কাছে বিয়ে বাড়িটার যেন কী নাম– ‘নীলিমা’! অগ্রিম দিয়ে আসতে হবে। ভাবতে ভাবতে দুপুর রোদের ভেতর হেঁটে হেঁটেই ডালহউজি নিজের অফিসে ফিরে আসে।

বেশ ছটফট করছে সে। বুকের ভেতর অশান্তি নামে নাছোড় এক পদার্থ গড়িয়ে গড়িয়ে ছেয়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীরে। রক্তের প্রবাহ পথে, তার মনে হচ্ছে সমস্ত শরীরেই এই আনচান ভাবটা ঢুকে পড়েছে। মনে পড়ছে গত পরশু দিন বিকেল বেলায় ওই যে শব্দের ছোবল কানের ভেতর দিয়ে মরমে প্রবেশ করল– তারপর থেকেই এই অস্থিরতা। গত দুবছরে কতদিনই তো রেস্তোরাঁয় বসে চা-কফি খেতে খেতে পায়ের আশ্লেষে হূদয়ের আকুলতা প্রকাশ করেছে উত্তম। তাতে তো সায়ই দিয়েছে করবী, ওর নগ্ন দু-পা আরও প্রলম্বিত করে। অথচ পরশু শান্তনুর কথাটা তুলে পার্ক স্ট্রিটের ফেলিনি-তে টেবিলের তলায় পা দিয়ে পায়ে ছোঁয়া লাগাতেই, খাঁচার বাঘিনীর মতো গর্জে উঠেছে করবী। ইউ রাসকেল্ হোয়াই আর ইউ প্রেসিং সো হার্ড! মাইন্ড ইট দ্যাট ইউ আর অ্যাবভ থার্টি-ফাইভ, হোয়ারআজ  আই এম টোয়েন্টি টু অনলি। থতমত উত্তম করুণ করে বলেছিল– মানে!

কোনও মানে নেই। সব কথার উত্তর তোমাকে দিতে হবে তার কোনও মানে নেই। শান্তনুও আমার ভালো বন্ধু, তার সাথে আমি সিঙ্গাপুরে যেতেই পারি। বড়ো কথা কোম্পানি আমাদের পাঠাচ্ছে সিঙ্গাপুরে, কোম্পানির স্বার্থেই। উত্তম ভালো করে জানে না কী কোম্পানি, তাদের কী ব্যাবসা সিঙ্গাপুরে। একটা দম নিয়ে পুনরায় করবী বলে, তোমার গায়ে জ্বালা হচ্ছে যখন, লেট মি সে টাটা, বাই। করবী টেবিলটাকে এমন পুশ্ করে উঠে পড়েছিল যে ঝুঁকে থাকা উত্তমের বুকে এসে সজোরে ধাক্বা মারে। উত্তম কোনও কথা বলতে পারেনি। বুকে হাত বোলাতে বোলাতে করবীর তেজী ভঙ্গির ক্ষীপ্র গমনটিকে চোখে গেঁথেছিল, বুঝে উঠতে পারেনি। যেভাবে ভারী কোনও আঘাত প্রথমে সমস্ত ইন্দ্রিয়কে অনুভবহীন করে দেয়– কিছু পরে মস্তিষ্কের নিউরনে যন্ত্রণা পাঠাতে থাকে, তেমনই।

বিয়ে করল উত্তমকুমার। পাত্রীও তার পছন্দের। নম্রস্বভাব। সুশ্রী, সুন্দরী। বিয়ের পরেই প্রেম করবে ভাবল সে। অনেক ভালোবাসবে। ওকে ভালোবেসেই বুকের জমানো অন্ধকার দূর করে ফেলবে। বিয়ের রাতে তৃণাকে উত্তম এক অবসরে জিজ্ঞাসা করেছে– কি, বর পছন্দ? মুখে সলজ্জ হাসি টেনে মাথা নেড়ে ইতিবাচক মতামত জানিয়েছে। উত্তম জানিয়েছে দিন দশেকের মধ্যেই তারা বেরিয়ে পড়বে হানিমুনে। কাঠমান্ডু যাবে। সেখান থেকে ফেরার পথে বেনারস, লখনউ হয়ে একমাস পরে বাড়ি ফিরবে। দশ লাখ টাকা খরচ করবে হনিমুন টুরে।

এসব শোনার পর তৃণা আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেছিল উত্তমের। মেয়েবাড়িতে এর বেশি এগোনো যায় না। শুধু ছোঁয়াছুঁয়ি আর আকার-ইঙ্গিতে ভালো লাগা ব্যক্ত করা যায়। বউভাত ও তার পরের কয়েকদিন উত্তমের অসাধারণ কেটেছে। বউভাতে করবীও এসেছিল শান্তনুকে নিয়ে। উত্তম করবীকে নিয়ে বউ-এর সাথে আলাপ করিয়েছে। উদ্দেশ্য আরও কাছ থেকে দ্যাখো, দ্যাখো কে বেশি সুন্দরী– তুমি না আমার বউ। খুব বয়স নয় তৃণার, ২৫-এর কাছাকাছি হবে। উত্তম করবীর মুখের নানা পরিবর্তন দেখে নিজেকে তারিফ করেছে। করবীকে বিট্ করতে পারার এই আনন্দেই যেন কটা দিন চলে গেল। এরপর দ্বিরাগমনের প্রথা ট্রথা কাটিয়ে অফিসে জয়েন করেছে। হনিমুন ট্রিপের জন্য গোছগাছ।

এসময় উত্তমের জন্য আবার একটি ভয়ংকর আঘাত অপেক্ষা করে ছিল। অফিস ফেরত দেখে বউ বাড়ি নেই। বৃদ্ধা মা জানায় সকাল বেলায় এগারোটা নাগাদ ট্যাক্সি ডেকে একটা বড়ো সুটকেশ নিয়ে বউ বাপের বাড়ি চলে গেছে। উত্তম ফোন বাজায় কেউ ফোন ধরে না। উদ্বিগ্ন উত্তম ঠিক করেছে সকাল হলেই সে শ্বশুড়বাড়ি যাবে খোঁজখবর নিতে। পরের দিন সকালের ঘুম ভাঙে তার কলিং বেলের আওয়াজে। ঘুম চোখেই দরজা খুলে দাঁড়িয়ে দেখে একজন পুলিশ অফিসার, সঙ্গে দু-তিনজন কনস্টেবল।

– আপনি উত্তমকুমার দাম?

ভ্যাবাচ্যাকা উত্তম কিছু না বুঝেই ঘাড় নাড়ে।

আপনি আমার সঙ্গে চলুন, কড়েয়া থানায়। আপনার উপর বধূ নির্যাতনের অভিযোগ আছে। আপনাকে দেখে সম্ভ্রান্ত মনে হয়, কিন্তু টাকার জন্য এরকম ফুটফুটে মেয়ের শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকায় বীভৎস দাগ করে দিতে পারেন? ক্যাশ টাকা দিয়েছিল ওরা তিন লাখ, আর আপনার আরও দু লাখের ডিমান্ড ছিল!

উত্তমের মাথায় কিছু ঢুকছে না। একটা বড়ো বিপদ যে আসছে বুঝতে পারল। মোবাইল থেকে সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেন্ড-ফিলসফার অফিসের শম্ভুদাকে ফোন করে বলল, কড়েয়া থানায় আসতে। শম্ভুদা ওকে জামিনে ছাড়িয়ে আনল বটে তবে উত্তমের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তিন লাখ টাকা নিঃশব্দে চলে গেল ওর বউ, মানে তৃণা নামে সেই মেয়েটির বাড়িতে। সোনা-গয়না বিয়ের দামি উপহার সামগ্রী-সহ আরও লাখ দুয়েক টাকার জিনিস মেয়েটা সুটকেস ভর্তি করে নিয়ে গিয়েছিল। হাজতেই ডিভোর্স পেপার সই হয়ে গিয়েছিল। এই তিন লাখের এক লাখ নিঃসন্দেহে থানার বড়োবাবু পেয়েছিল। না হলে এত নিখুঁত, সাজানো নাটক করা যেত না। থানার বাইরে চার-পাঁচজন মহিলাকে ও দেখেছিল পোস্টার হাতে স্লোগান দিতে– নারীনির্যাতনকারী উত্তমকুমার দামের শাস্তি চাই। এত দ্রুত, এত সকালে চলে এসেছে ওরা! বড়োবাবুও খুব ভালোমানুষের মতো উপদেশ দিয়েছে ওদের টাকাটা ফিরিয়ে দিন, আর বিয়েটা যখন ভেঙেই যাবে এখনই ডিভোর্স পেপারে সইটই করে মানসম্মান বাঁচান। এখনও লোক জানাজানি হয়নি তেমন। উত্তম বোঝাতেই পারেনি যে পণ নিয়ে ও বিয়ে করেনি। আর বধূ-নির্যাতনের কথা তো দূরঅস্ত, একটু জোরে বউয়ের নাম ধরে ডাকাও হয়ে ওঠেনি তখনও।

টাকার ক্ষতি, ক্ষতি নয়, নিজের উপর থেকে বিশ্বাসটাই চলে গেল। বুক ভেঙে গেছিল, শোবার ঘর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে বাইরেই বের হয়নি। এক সময়কার কলকাতার মাঠের ডাকসাইটে স্টপার ছিল। যত গোল করেছে তার চেয়ে ঢের বেশি করিয়েছে। কিন্তু এখন পরপর গোল খেয়ে যাচ্ছে। করবীকে টেক্বা দিতে তেমন কোনও খোঁজখবর না নিয়েই খুব দ্রুত বিয়েটা সেরেছিল। কিন্তু কী করে পারল মেয়েটা! আজও ভেবে পায় না। এখন হাবরা থানায় ডিউটিরুমে বসে এফআইআর লেখাতে লেখাতে উত্তমের মনে পড়ছিল এসব কথা। পাশের কনস্টেবল দাদার কাছ থেকে বিড়ি চেয়ে একটা বিড়ি ধরাল। মাথাটা উত্তর কলকাতার ট্র্যাফিক জ্যামের মতো জমাট হয়ে আছে।

এখন সে বিড়ি খায়। বলে, বিড়ি না ফুঁকলে মাটির কাছাকাছি যাওয়া যায় না। আমার কাজই মাটির সাথে, মাঠের সাথে– বলে অল্প করে হাসে। এবছর উত্তম বড়ো ক্লাবের স্পটার। গোদা কথায় ছেলেধরা। ফুটবল মরশুমের আগে কলকাতার মাঠের বড়ো ক্লাবগুলির রিক্রুটারদের কাছে ওর ডিমান্ড এখন বেশ। গত নয় বছর ও এই ছেলেধরা, মানে স্পটারগিরি করছে। আচমকাই এই কাজটা শুরু হয়। করবীর কাছ থেকে আঘাত ও বিয়ের পর বউ পালানো ও থানা-পুলিশ ইত্যাদির ধাক্বায়, উত্তমকুমার বেশ গভীর একটা ডিপ্রেশনের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল। অফিসে যেত মাসে হাতে গোনা কয়েকদিন। মানুষজন পছন্দ করত না। নিজের কাছে নিজেকেই লুকোতে চাইত। সারাদিন গোটা কলকাতার খোলা মাঠের কোণটোনে বসে কাটিয়ে, অনেক রাতে ঘরে ফিরত। এরকম করতে করতে গোটা কলকাতার মাঠের ফুটবল খেলা দেখে ফেলেছিল সে বছর। একদিন উত্তর কলকাতার একটা মাঠে স্কুল ফুটবল দেখছিল। একটা বছর ১৪-১৫ ছেলের খেলা ওকে নাড়িয়ে দেয়। স্টপার। খেলা শেষে নাম জিজ্ঞাসা করে। ওর নাম হাসান। বস্তিতে থাকে। দেশবন্ধু স্কুলের ক্লাস নাইনের ছাত্র। উত্তম ছেলেটার ভেতর একদম নিজের গড়ন দেখল। বেশ লম্বা। ছ’ফুটের উপর হবে। দারুণ সম্ভাবনা। রাতে ঘুম হল না। পরের দিন অফিসে গিয়ে শম্ভুদাকে বলল, ওই ছেলেটিকে একটা ক্লাব দিতে হবে। সেই শুরু। ছেলেটিও ইতিমধ্যে ভারতীয় জার্সি গায়ে দিয়ে ফেলেছে।

গত দু’বছরে কলকাতার মাঠের তাঁবুগুলোতে তার নাম একটা বিষয়। এভারেডি ইলেভেন ২ঙ্মঙ্মজ্জ-এর ক্লাব ফুটবলের হিসেব-টিশেব সব বদলে দিয়েছে। চারটে বড়ো ক্লাবকেই গোল মেরে দিয়েছিল। দু’টোর সাথে ড্র, দুটো জয়। সেই এভারেডির দুটো স্টপারই এবছর, ২০০৭-এ গোটা ভারতের মাঠ শাসন করছে। বিড়িখোর উত্তমই ওই স্টপার দুটোর স্পটার ছিল। এবছর বড়ো ক্লাবের স্পটার হিসেবে তিনটে জায়গাতে অ্যাসাইনমেন্ট আছে। গোলকিপার, ডিপ ডিফেন্স আর তার নিজস্ব প্রিয় জায়গা স্টপার পজিশনের জন্য। মোটা টাকার চুক্তি। বছরে বিশ লাখ। দশ লাখ টাকা অ্যাডভান্স পেয়েছে। অফিসে হাজিরা খাতায় সই করে দু-এক কাপ চা খেয়ে, শম্ভু-দার সঙ্গে একবার দেখা করে কেটে পড়ে। প্লেয়ার কোটায় চাকরি হয়েছিল বছর ষোলো আগে। গ্রুপ ডি। এখন পদোন্নতি হয়েছে। গ্রুপ সি। ওর শুধু আসা-যাওয়া। কাজের মধ্যে নিয়ম করে শম্ভুদার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো। এই মানুষটাকে ও প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে আর শ্রদ্ধা করে। শ্রদ্ধা করারই মতো।

প্রথম দিন শম্ভুদার কাছে গল্পটা শুনেই সে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল। গল্পটা শম্ভুদার স্ত্রী আত্রেয়ীকে নিয়ে যতটা, তার চেয়ে ঢের শম্ভুদা নিজেই। লাখোটিয়া কম্পিউটার সেন্টার, কলকাতার প্রথম যুগের কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের অন্যতম। সেখান থেকে এক বছরের কোর্স করেই এন্টালির ডাকাবুকো বিএ পাস শম্ভু রাহা, এই কোম্পানির কম্পিউটার অপারেটরের চাকরিটি পায়। মাঝে মধ্যেই শম্ভুদার সহকর্মী দীপকের খোঁজ করে অফিসের ল্যান্ড ফোনে কল আসত আত্রেয়ীর। দীপক অফিসে বেশ অনিয়মিত ছিল, তাই ফোনটা ধরতেন শম্ভুদাই। প্রথম প্রথম আড়ষ্ট আলাপ, ক্রমশ বন্ধুত্ব। তারপর অন্তরঙ্গতা। এদিকে অনিয়মিত হওয়ার কারণে দীপকের চাকরিটি গেল। একদিন আত্রেয়ী চাইল দেখা সাক্ষাৎ হোক। শম্ভুদা বলল, বেশ। কোথায়, কখন তা আত্রেয়ী ঠিক করে। প্রথম দিন ছিল শনিবার, ধর্মতলায় মেট্রো সিনেমার সামনে, সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায়। কিন্তু কী করে চিনব, শম্ভুদা জিজ্ঞাসা করেছিল। আত্রেয়ী জানায় সে কালো রঙের চুড়িদার পরবে।

শম্ভুদা বলেছিল, আমি থাকব পিংক টি-শার্ট আর ব্লু জিনসে। শনিবার দুটোর পরেই ছুটি। শম্ভুদা ক্লাব, ক্যান্টিন করতে করতে চারটে বাজিয়েছে মাত্র। আরও দেড় ঘন্টা! সময় আর কাটতেই চায় না। অফিস থেকে এসপ্ল্যানেড হেঁটে দশ মিনিটের পথ। আর এই বিশেষ দিনে তো হাঁটা যায় না, ট্যাক্সি করতে হবে। শম্ভুদা সাড়ে চারটের মধ্যেই চলে এসেছে। এত আগে কী করবে, ফুটপাথে বইপত্রের দোকান থেকে বইপত্র দু-একটা তুলে তুলে দেখছে। ইতিমধ্যে সিনেমার শো ভেঙেছে। অনেক মানুষ। খুঁজে পাবে তো! মনে মনে একটা আশঙ্কাও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে, কই কালো-চুড়িদারে কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। শম্ভুদা মনে মনে ভাবল, আমার ঘড়িটা ঠিক আছে তো! ঠিক এখানটাতেই তো বলেছিল! তখনও মোবাইল ফোনের যুগ চালু হয়নি। ফলে প্রতীক্ষার দীর্ঘতা অস্বস্তি বুনে চলে মাথার ভেতর। প্রায় একঘন্টা কেটে গেছে, সাড়ে ছ’টা নাগাদ নীল শিফন শাড়ি পরা একটা মিষ্টি মেয়ে তার দিকে এগিয়ে এল। ঘন্টাখানেক আগেই ওই দীর্ঘাঙ্গী সুশ্রী মেয়েটা ওর চোখে পড়েছে। শম্ভুদা ভেবেছিল সিনেমা দেখতে এসেছে, ওর সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করছে। মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল, আপনি শম্ভু রাহা?

হ্যাঁ। কিন্তু আপনি?

মেয়েটি হেসে জবাব দেয়, সে-ই আত্রেয়ী। বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে শম্ভুদা অনেকক্ষণ ওর চোখে তাকিয়ে ছিল। কোনো অনুযোগ করেনি। পোশাক পালটানোর কারণও জিজ্ঞাসা করেনি। পরে অবশ্য জেনেছিল, ইচ্ছা করেই আত্রেয়ী নিজের পোশাকের ভুল বিবরণ দিয়েছিল যাতে না-দেখা পরিচয়ের শম্ভুদাকে অপছন্দ হলে নিঃশব্দে কেটে পড়তে পারে। শম্ভুদা বলল কোথায় বসে কথা বলা যায়! চলুন কাছেই কাফে দ্য মণিকা-র দোতলায় কফি খেতে খেতে গল্প করা যাক। কফি খেতে খেতে শম্ভুদা আত্রেয়ীর রূপে মজে যায়। বলে সংশয় ছিল, না না-দেখা আত্রেয়ীর ঘোর, দেখা আত্রেয়ী এসে যদি নষ্ট করে দেয়। কিন্তু এখন দেখছি আমার ভাবনা পেরিয়েও আপনি অপরূপা। আত্রেয়ী অল্প হাসে এবং ঘড়ির কাঁটা দ্রুত সাড়ে আটটা পার করে দেয়। আত্রেয়ী উঠব উঠব করে। শম্ভুদা বলে, রাত হয়ে গেছে। চলুন, আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। আত্রেয়ী সশব্যস্ত হয়ে বলে, না না আমি একাই যেতে পারব। শ্যামবাজার। আপনি আমাকে একটা ট্যাক্সি ধরে দিন শুধু। তারপর হাতব্যাগ খুলে ব্যাগের ভেতর খুঁজতে খুঁজতে মুখ চুন করে বলে, কিন্তু আমার মানিপার্স বাড়িতে ফেলে এসেছি। শম্ভুদা ব্যস্ত সমস্ত হয়ে নিজের মানিব্যাগ থেকে পাঁচশো টাকা বার করে হাতে গুঁজে দিয়ে তাকে ট্যাক্সিতে তুলে দেয়। এরপর প্রায় প্রতিদিনই শম্ভুদার বিকেল কেটেছে আত্রেয়ীর সাথে আড্ডায়। কখনও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের কফিহাউসে, কখনও ইডেনে, কখনও গঙ্গার ঘাটে, কখনও সেন্ট্রাল লাইব্রেরির চত্বরে, কখনও মেট্রো সিনেমা হলে। প্রায় একবছর শম্ভুদা হাবুডুবু। এই হাবুডুবুতে শম্ভুদা নজর করেনি আত্রেয়ী তার বাড়ির ঠিকানা, পরিবার পরিজন নিয়ে কোনও কথাই বলেনি কোনও দিন। কিন্তু প্রতিদিনই আত্রেয়ী হাত পেতে তার কাছ থেকে দুশো-পাঁচশো টাকা নিয়ে গেছে। এই রহস্যটা ভেঙেছিল দুর্গাপুজোর সময়। হঠাৎ কলেজস্কোয়ারের ঠাকুর দেখতে এসেছিল, ভিড়ের ভেতর একটু ছাড়াছাড়ি হয়েছে। শম্ভুদা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করে, একটা ছেলে আত্রেয়ীর হাত ধরে টানাটানি করছে। শম্ভুদা কাছে এসে সজোরে এক থাপ্পড়। ছেলেটি ছিটকে পড়ে, আর সোরগোল ফেলে দেয়। এন্টালিতে থাকা শম্ভুদাকে কলেজস্কোয়ারের অনেকেই চেনে। তখনই ও জানতে পারে, আত্রেয়ী বউবাজারের হাড়কাটাগলির যৌনকর্মী। পাঁচ মিনিটেই সামলে নিয়েছিল এই সত্যতার ঝটকা।

তারপর সেই প্যান্ডেল থেকে সোজা লালবাজার। পরিচিত পুলিশ অফিসারকে সব ব্যাপারটা খুলে বলে। রাত্রেই পুলিশ রেইড ক’রে হাড়কাটাগলি থেকে এক মাসি সহ গোটা চারেক মাস্তানকে তুলে আনে। লালবাজারে আত্রেয়ীকে দেখিয়ে অফিসার বলেছিল, এ আমার বোন, এর দিকে আর কোনও দিন চোখ তুলে যদি তাকিয়েছিস তোরা, মার্ডার কেসে সোজা সবকটাকে যাবজ্জীবন ফাঁসিয়ে দেব। তারপর দিনই কোর্ট-ম্যারেজ। ওই অফিসার তার নিজের বোনের পরিচয়ে পরিচিত করিয়ে শম্ভুদার বাড়িতে আত্রেয়ীকে তুলে দিয়েছিল। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে শম্ভুদার সুখী পরিবার এখন! শম্ভুদা সে গল্পও করে। শম্ভুদার এই সোজা-সাপটা খাদহীন ভালোবাসার কাহিনিকে আদর্শ মেনেছে উত্তম।

উত্তম, মানে উত্তমকুমার দাম এই মধ্য-চল্লিশেও মেদহীন ধনুকের ছিলার মতো শরীর রেখেছে। মাথায় কদমছাঁট চুল। শহর, শহরতলীর কোথায় কোন পাড়ায় ফুটবল টুর্নামেন্ট সেসব ওর এখন মুখস্থ। কলকাতার মাঠে কম যায়। জেলায় জেলায় খেলোয়াড় হিসেবে নিজের পরিচয়ের সুযোগে সোর্স কাজে লাগায়। যেভাবে পুলিনের কথায় আজ দুটো কুড়ির বনগাঁ লোকালে উঠে যাবে হাবরা। পুলিন হাবরা লিগ ম্যাচে রেফারিগিরিও করে। আজ সবুজ সংঘ ও প্রগতির ম্যাচ। সোর্স পুলিন টেলিফোনে প্রথমে নাটা দেবাশিসের কথা বলেছিল। অসাধারণ ট্যালেন্ট। বল পায়ে চুম্বকের মতো লেগে থাকে আর দারুণ প্রেডিক্ট করতে পারে। মাঠে নামলেই একটা না একটা গোল করবেই। উত্তম সরাসরি নাকচ করে দেয়। পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির নীচের কোনও প্লেয়ার নিয়ে ও ভাববে না। ফুটবল বডি গেমও।

ক্রমে যত দিন যাচ্ছে, বিদেশিরা যত আসছে তত রাগবির মতো হতে চলেছে ফুটবল। শরীর কতটা ধকল নিতে পারবে তা কিছুটা উচ্চতা নির্ভরও। সোর্স পুলিন দু’নম্বরটির কথা জানায়। সবুজ সংঘের গোপাল। ভালো হাইট, আর ফুটবলারের চেয়ে বেশি ও দৌড়বীর। এমন চোঁ চোঁ দৌড় লাগায় এদিক ওদিক মনে হয় কিছু একটা যেন হতে চলেছে। অথচ বল হয়তো উলটো দিকে আছে। উত্তম সোর্সের এই তথ্যটাকেই আজকের প্রাইম হিসেবে ঠিক করেছে। চোখে মুখে কিছুটা উল্লাস। এরকমই খুঁজছিল। নাস্তানাবুদ করা স্প্রিন্টার। তারপর ফুটবল তো কোচের হাতে পড়লে কথা বলবে।

উত্তম যা ভেবেছিল তার চেয়ে বেশি। এ একদম ইউরেকা। ছেলেটা একটাও গোল করেনি। কিন্তু ওর টিম দু’গোলে জিতল। বিরতির পরপরই ছেলেটা মাঝমাঠ ক্রস করে হঠাৎ লেফ্ট উইং থেকে

চোঁ-চোঁ করে দৌড় লাগাল রাইট উইং-এর দিকে। দু’টো ডিফেন্ডার কেটে গেল। পেছন থেকে ওই নাটা ছেলেটা সম্ভবত উইথড্রয়াল স্টপার খেলছিল– গোল মেরে দিল মাখনে ছুরি দেবার মতো। ব্রিলিয়ান্ট! গোলটা হবার পরে উত্তম চ্যাঁচাল, তারপর পকেটে হাত দিল পেন আর কাগজ নেবে বলে। কী যেন নাম! হাত চালিয়ে বুক পকেটে পেন, ছোটো ডায়েরি খুঁজে না পেয়ে চোখ নামাল।

আরে আশ্চর্য! আমি তো পেন-টেন নিয়েই বেরিয়েছি। কী মনে করে পেছনের পকেটে হাত দিয়ে দেখে লেপাপোছা। অর্থাৎ জিনসের হিপ্পকেটে তখন কিছুই নেই। উত্তমের বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। সোর্স পুলিনের জন্য হাজার খানেক টাকা ছাড়াও যাতায়াতের খরচ ইত্যাদির জন্য আরও শ’পাঁচেক ছিল। এসবিআই ডেবিট কার্ড, জরুরি কাগজপত্র, কিছু তথ্য, নোট– এতক্ষণের আনন্দে এসময় ভাঁটার টান।

বনগাঁ লাইনের ভিড়। শিয়ালদা থেকেই বসার জায়গা পায়নি। ভেতরের দিকে দাঁড়িয়ে ছিল মনে পড়ছে। দমদম আসতে চারপাঁচজন তরুণী ভিড় ঠেলে ঢুকে পড়েছিল। সকলেই খুব উচ্ছ্বল। নিজেদের ভেতর নানারকম কথাবার্তা চালাচ্ছিল। টুকরো ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা মিশিয়ে। মাই নেম ইজ খান থেকে ম্যানিকিউর সবই তাদের বিষয়। উত্তম এসময় খেলাপাগল। নারী নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। ও মাঠের কথা ভাবতে ভাবতে চলেছে। ভিতরে একটা আর্জ। এবছর এই বড়ো তিনটি ক্লাবের জন্য অন্তত গোটা পাঁচ-ছয় সোনার ছেলে তুলে দিতে হবে। আনকোরা কিন্তু সলিড। বড়ো ক্লাবগুলিরও তাতে লাভ। দু’তিন বছর খুব কম পয়সায় এদেরকে কাজে লাগাতে পারে। হিসেবে অন্তত কোটি টাকার ফয়দা। উত্তমের মনে হচ্ছে আজ একটা হিল্লে হবে।

একটা মেয়ে ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। ভিড়ের ভেতর প্যাসেজেও ডাবল লাইন। মেয়েটির সমুন্নত বুক মাঝে মাঝেই ওর খোলা কনুই ঘষে দিচ্ছিল। উত্তম একবার তাকাতেই মেয়েটি মিষ্টি হাসে। দীর্ঘ সুশ্রী চেহারার। চুড়িদারে লোকাট ফ্রেম। উত্তাল বুকের অনেকটাই প্রকাশমান। ডান দিকের অপেক্ষাকৃত শ্যামাশ্রী মেয়েটি একটু চেপে দিলে ও আরও একটু বাঁয়ে এই সুন্দরীর দিকে ঘেঁষে আসে। এ মেয়েটি তেমন নড়ে না আর তার কোমল বুক সেঁটে উত্তমের গোটা বাহুতে লগ্ন হয়ে যায়। এবার মেয়েটির দেহ থেকে একটা সুগন্ধ টের পায় যা ওর চেনা চেনা লাগে। উত্তমের তখন কাঠকাঠ ভাব। হাত-পা নড়ানোর জায়গা রাখেনি সপ্রতিভ মেয়ে দুটো। জগন্নাথপম অবস্থা। এই স্থির অবস্থায় উত্তম অনুভব করে দুদিক থেকেই দু’টো মেয়ে বুক মেলে ওকে ঘঁষে চলেছে।  ও কোনও দিকে তাকাতে পারছে না। অসহায়ের মতো নিম্নগামী মুখমণ্ডল। উত্তম মাঠের ফুটবল, বল দখল, পজিশন মেকিং– এসবের ভেতর ভাবনা চারিয়ে দিয়ে রাস্তাটুকু পার করে দিতে চাইল।

এই মেয়েগুলিই কি ওকে এতখানি বিপদে ফেলল! এত সুন্দর সুন্দর কথা বলছিল মেয়েগুলো– তবে সেটা ট্র্যাপ! অন্তত ডেবিট কার্ড আর মোবাইল ফোনের জন্য থানায় কমপ্লেইন লজ করতেই হবে। পুলিনকে নিয়ে তাই ও হাবরা থানায় এসে বসেছে।

বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে হঠাৎ ওর মনে ঝিলিক দিল– বাঁদিকে যে-মেয়েটি বেশি লগ্ন ছিল, একটু বেশি বয়সের, সে কোনও কথা বলছিন না কেন! মেয়েটি হাসবার জন্য মুখ ঘোরাতেই ওর চোখ পড়েছিল কানের নীচের তিলটির ওপর। তখন মাঠের ভাবনায় মত্ত থাকায় ফোকাস্ড ছিল নতুন ছেলে রিক্রুটিং নিয়ে। চুলটা মাথার উপরে চুড়ো করে রেখেছিল সে। ফলে মুখটা একটু গোল লাগলেও ওই তিলটি তো ওর চেনা। ওই-ই কি করবী! বাবুঘাটে কতবার ওই তিলের উপরেই চুম্বন রেখেছে সে। না না, তা কী করে সম্ভব! করবী পকেটমারের গ্যাং করেছে! উত্তমের এই একলা একা জীবনের নেপথ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটি স্নিগ্ধ প্রতিমা প্রতীম করবী পকেটমার!

থানায় বসে শিউরে উঠল। গা সিরসির করতে লাগল। ওই নিষ্পাপ মুখমণ্ডলের মেয়েটি, যাকে একদিন এই জীবন তুলে দেবে ভেবেছিল, সোনারপুরের ওই গ্রাম্য মেয়ে করবী নিশ্চয়ই ওকে চিনেছে। এখনও সেরকম ছিমছাম চেহারা উত্তমের। শুধু দুটো জুলফির কাছের কিছু চুল পেকেছে। তবুও ও আমার পকেট কাটল! এখন নিশ্চিত হচ্ছে ওই যে চেনা চেনা লাগছিল গন্ধটা, তা করবীই ব্যবহার করত। ভিক্টোরিয়ার মাঠে সন্ধ্যায় অনেকবার করবীই উত্তমের ঝাঁকড়া মাথা ওর আধখোলা বুকে টেনে নিয়েছে। সুগঠিত স্তনের খাঁজে নাক গুঁজে গেছে। কিন্তু উত্তম কখনও শরীরে হাত দেয়নি। শুধু ওর বুকের ওই মিষ্টি গন্ধটা ও প্রাণ ভরে নিত। ও চেয়েছিল অপাপ করবীকে গৃহলক্ষ্মী করবে।

এসময় উত্তমের খুব শীতবোধ হতে থাকে। গা-হাত-পা ছেড়ে দেয়। থানার বেঞ্চে এলিয়ে পড়ে। পুলিন দাস ফুলস্কেপ সাদাকাগজ কিনে এনে মোবাইলে মিসিং কমপ্লেইন ডায়েরি লেখাতে লেখাতে পেছন ফিরে তাকিয়ে বুঝে যায় শরীর খারাপ হয়েছে উত্তমের। থানার গায়েই হাবরা হাসপাতাল। ধরাধরি করে সেখানে নিয়ে যায়। পুরোনো দিনের খেলোয়াড় পরিচয়ে খুব দ্রুত ডাক্তার অ্যাটেন্ড করে। সেরিব্রাল অ্যাটাক। ম্যাসিভ। ডাক্তার রেফার করে এনআরএস। অ্যাম্বুলেন্স দেয়। মুখে অক্সিজেন সিলিন্ডার। সোর্স পুলিন দাস, হাবরা হাসপাতালের একজন নার্স ও অচেতন উত্তম যশোর রোড ধরে চলেছে। এসময় উত্তম দেখে, সাদা পোশাকের এক মিষ্টি মেয়ে, মুখটা খুব চেনা চেনা, কোনও পরি হবে, তার কপালে আলতো করে দু’টো চুমু খেল। আর কানের কাছে মুখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, আমি তোমাকে ভালোবাসি উত্তম। এই প্রথম উত্তম তার সারাজীবনের কাঙিক্ষত শব্দকটি শুনতে পেল। এবং এই প্রথম তার কান্না পেল। বোজা চোখের দুই কোল ঘেঁষে দুফোঁটা জল গড়িয়ে নামল সাদা চাদরে ঢাকা বালিশের উপর।

এনআরএস-এর এমার্জেন্সির ডাক্তার কয়েক মিনিট দেখেই বললেন, অনেকক্ষণ আগেই প্রাণ দেহ ছেড়ে বেরিয়ে গেছে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...