শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে... রিংটোন বাজছে মোবাইলের। কে ফোন করল এখন? রবিবার একটু বেশি বেলা পর্যন্ত ঘুমোতে চেয়েছিল প্রবাল। কিন্তু...। স্ক্রিনে দেখল তমাল। তমাল এত সকালে!
একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরল প্রবাল। ওপাশের কণ্ঠস্বরে অ্যাডরিনালিন রাশ টের পেল। দীর্ঘদিন বাদে কিছু ফিরে পাওয়ার আনন্দ যেন!
কি বন্ধু! এখনও আধেক ঘুমে নয়ন চুমে...?
কী হয়েছে বল না। রোববারের সকালটা দিলি মাটি করে।
না গুরু, আজ দেখো সোনা ফলবে, সোনা।
কেন রে? আবার কী হল? নতুন প্রেম?
না রে, ওটা আমার জীবনে নেই রে। কাজের চাপে ও তাপে এমন অবস্থা! মরারও সময় নেই।
মার খাবি। সক্কালবেলা এইসব বলবি বলে ফোন করলি?
সরি, সরি। বলব বলেই তো কাল রাত থেকে চেষ্টা করছি। কিন্তু তোমার ফোন নীরব।
প্রবালের মনে পড়ল। কাল সন্ধে থেকে শারদীয়ার লেখাটা নিয়ে পড়েছিল। সম্পাদক খুব তাড়া দিচ্ছিলেন। তমালকে কথাটা বলতেই ও আসল কথায় এল।
গতকাল পুলিশ বাজেট নিয়ে রিভিউ করতে লালবাজারে গিয়েছিল তমাল। ডিজি তন্ময় দত্ত ওকে আলাদা করে একটু সময়ও দিয়েছিলেন। ওনার ঘরে চায়েপে-চর্চা চলাকালীন হঠাত্ উনি জানতে চান, ওর মাস্টার্স কোথা থেকে? উত্তরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঁটাকল ক্যাম্পাস বলতেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন, উদ্ভব শর্মাকে চেনেন?
জোরসা ঝটকা। উদ্ভব! এতদিনে! মাস্টার্সের পর থেকেই ও লাপাতা। অনেক চেষ্টা করেও ওরা কোনও খবর জোগাড় করতে পারেনি। সেই উদ্ভবের খবর ডিজির মুখে। ফোনে সব কথা বলা যাবে না। তাই ও বিকেলে আসছে প্রবালের কাছে। তার মানে আজ ওর ডিনার এখানেই। ভালোই হল। কালই অফিস ফেরতা ইলিশ কিনেছে। মায়ের হাতের ইলিশ ভাপা লা জবাব। চেটেপুটে খায় তমাল। একটা সিগারেট ধরিয়ে প্রবাল এখন হেঁটে চলেছে স্মৃতির শহুরে পথে।
সাউথ সিঁথির অর্থনীতির পিজি হোস্টেল। দোতলার কোণার ঘরটায় ওরা তিনজন। প্রবাল, তমাল ও উদ্ভব। উদ্ভবের পৈতৃক বাড়ি দেহরাদুন। বাবা রাজধানী এক্সপ্রেসের চালক। মা ওখানকার একটি স্কুলের অঙ্কের শিক্ষিকা। ওর বেড়ে ওঠা দেহরাদুনেই। মায়ের ইচ্ছায় স্নাতক হতে আসা কলকাতায় প্রেসিডেন্সিতে।