আমরা যতই গলা ফাটাই যে, ভারত আর্থিক শক্তিতে বিশ্বে চার-পাঁচ নম্বরে রয়েছে, আদতে তা নয়। বাস্তবে ভারতবর্ষে আর্থিক শক্তিধারী হল শাসকগোষ্ঠী আর মন্দির কর্তপক্ষ। কিন্তু সাধারণ মানুষ আজও সেই আগের মতোই গরিব। আর্থিক ভাবে আজও আমরা ৯০ বছর পিছিয়ে আছি আমেরিকার থেকে। আমাদের এখানে প্রায় ৯১ শতাংশ নাগরিকের সম্পত্তি ১০ হাজার ডলার অর্থাত্ ৭ লক্ষ টাকারও কম। এর মধ্যে গাড়ি, বাড়ি, অলংকার, চাষের জমি সবকিছুর হিসেব রয়েছে।
এই অস্বচ্ছলতার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল এই যে, আমাদের এখানে নু্যনতম সম্পত্তির মালিক মেয়েরা। আফ্রিকার দেশগুলির মহিলাদের থেকেও কম। অথচ আমেরিকা এবং কানাডায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ সম্পত্তির অধিকারী মহিলারা। ইউরোপেও একইরকম ভাবে সম্পত্তির অধিকারী মহিলারা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়ও ২৮ থেকে ৩৮ শতাংশ সম্পত্তি মহিলাদের অধিকারে রয়েছে। ভারত ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশে গড়ে প্রায় ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ সম্পত্তিতে অধিকার রয়েছে মহিলাদের। আর আমাদের ভারতবর্ষে সেখানে মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সম্পত্তির অধিকারী মহিলারা।
প্রকৃতপক্ষে মহিলারা নয়, পুরুষরাই বেশি ধনী আমাদের দেশে। আর এই পুরুষদের মধ্যে বেশিরভাগই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এমন প্রায় ৩০৪০টি পুরুষপ্রধান পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। সারা পৃথিবীর মধ্যে অবশ্য এদের স্থান ১২৫ থেকে ১৪৫ এর মধ্যে। অর্থাত্, এদের স্থান আমেরিকা, চিন, ইংল্যান্ড, জার্মানি এবং জাপানের পরে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, সুইটজারল্যান্ড-এর ক্রেডিট সুইস ব্যাংক-এর সার্ভে রিপোর্টেও ভারতীয় মহিলাদের দৈন্যের সঠিক আর্থ-সামাজিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি! অবশ্য সমীক্ষার রিপোর্ট-এ কারণ না খুঁজে পেলেও, আমরা জানি এর মুখ্য কারণ হল আমাদের ভারতীয় রীতিনীতি। যেখানে এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের সেবাদাসী হিসাবে দেখা হয়। বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দান করাই যেন তার কর্তব্য। আর কোনও মেয়ে যখন এই ধারার বদল আনতে উদ্যোগী হয়েছে, তাকেও পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েে। এখনও তাই নারীর উপর নির্বিচারে চলছে অত্যাচার, শ্লীলতাহানি কিংবা ধর্ষণ।
মহিলাদের সম্পত্তি বাড়ানোর ব্যাপারে বর্তমান সরকারেরও কোনও উদ্যোগ নজরে আসছে না। তিন তালাকের জন্য যিনি সোচ্চার হয়েছিলেন, সেই সায়রা বানো-কে তো একটি রাজনৈতিক দল, নিজেদের দলে শামিল করে নিয়েছে ভোট ব্যাংক মজবুত করতে। আর হিন্দু নারীদের এই বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, তোমরা স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি আর পূজারির সেবা করে খুশি থাকো।
এই করোনার আবহে তো ঘরবন্দি মহিলাদের আরও ব্যস্ত রাখা হয়েছে পূজাপাঠে। ভক্তি-শ্রদ্ধায় মৃতু্যর পরে স্বর্গলাভ হবে, এমনই চিন্তাধারা গেঁথে দেওযা হচ্ছে সহজসরল মহিলাদের মনে। তাই প্রশ্ন, মেয়েরা যদি জীবিতাবস্থায় পারলৌকিক শান্তিলাভের জন্য ভক্তি-শ্রদ্ধায় ব্যস্ত থাকে, তাহলে তাদের সম্পত্তির অধিকার আদায় করবে কে?