পর্যটন মানচিত্রে ইদানীং গুজরাত বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও, আমাদের লক্ষ্য থাকে আপনাদের অচেনা জায়গার খোঁজ দেওয়ার৷ সোই তালিকাতেই আজ যোগ হল গুজরাতের এমন তিনটি জায়গা, সৌন্দর্যে যা কোনও অংশে কম নয়৷

তিথল

বিচটির নাম তিথল। গুজরাতের ভালসাড শহরের অন্তর্গত এই বিচটির প্রসিদ্ধি, এর বালির রং কালো বলে। আরব সাগরের গা ঘেঁষে, বিস্তীর্ণ এই বালুতট পর্যটকদের কাছে ভীষণ প্রিয়। আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ, এখানে স্পিড বোট, জেট স্কি প্রভতি ওয়াটার স্পোর্টস-এর বিপুল আযোজন রয়েছে। বস্তুত ছুটি কাটানোর সঙ্গে সঙ্গে, একটু রোমাঞ্চের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে তিথল-এ।

সুরাত থেকে এই বিচের দূরত্ব ৯২ কিলোমিটার। অর্থাৎ গাড়িতে এনএইচ ৪৮ ধরে ঘন্টা দুয়েকের পথ। ফলে সুরাতের উইক এন্ডারদের ছুটি কাটানোর এক মনোরম স্পট হয়ে উঠেছে তিথল। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময় ঢেউয়ের মাথায় লেগে থাকে সোনার কুচি। আরব সাগরের নির্মল হাওয়ায় মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

এই বিচ সম্পর্কে আরও দু-এক কথা না বললেই নয়। এটি ভারতের প্রথম ডিসএবলড ফ্রেন্ডলি বিচ। ফলে ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড মানুষদের সুবিধার্থে সবরকম জিনিস এখানে মজুদ। বিচ-এর অদূরেই রয়েছে তিন তিনটি মন্দির। স্বামীনারায়ণ, শিরডি সাঁইবাবা এবং বিষ্ণু মন্দির। বছরের নানা সময়ে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় মন্দিরগুলিতে।

Tithal Sea beach in Gujrat

এই সমুদ্র সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ তিথল বিচ ফেস্টিভ্যাল, যেটি অনুষ্ঠিত হয় অক্টোবর মাসে। থাকে নানা সাংস্কৃতিক বিনোদনের ব্যবস্থা। সঙ্গে অপূর্ব স্থানীয় খাবারের স্বাদ। ব্যানানা বোট রাইড, ক্যামেল রাইড, হর্স রাইড, বেলুন শুটিং, রিং টস এমন নানা মজার শরিক হন পর্যটকরা।

সারাবছরই যাওয়া চলে তিথল-এ। শীতে সমুদ্র একটু শান্ত থাকে। বর্ষাতেও যান অনেকেই। তবে যদি ভিড় এড়াতে চান, উইকএন্ড-এর বদলে সপ্তাহের মাঝখানে ঘুরে আসাই ভালো।

কীভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে ওখা এক্সপ্রেস বা কবিগুরু এক্সপ্রেস-এ সরাসরি সুরাত পৌঁছে, ভাড়ার গাড়ি নিতে হবে।

কোথায় থাকবেন : ভালসাড টাউন-এ বা বিচের কাছাকাছি প্রচুর থাকার হোটেল আছে। অনলাইন-এ বুক করা যায়।

 

পোলো মনুমেন্ট

কিছু কিছু জায়গা থাকে, ভাষায় যার সৌন্দর্য বর্ণনা করা যায় না। পোলো ফরেস্ট তেমনই একটি ডেস্টিনেশন। আহমেদাবাদ থেকে ১৫৯ কিলোমিটার দূরত্বে এই অদ্ভত এক প্রকৃতিবাসর। এখানে এলে মনের সব উৎকণ্ঠা, ক্লান্তি মুছে গিয়ে অনুভব করবেন অনাবিল শান্তি। সবুজ বনস্থলি, তিরতিরে ঝরনা, ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি আর কিছু ভগ্নপ্রায় মন্দির– এই নিয়ে পোলো ফরেস্ট।

পোলো ফরেস্ট প্রায় ৪০০ স্কোয়ার কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। ভগ্নপ্রায় মন্দিরগুলি অন্ততপক্ষে ৬০০ বছরের পুরোনো। জানা যায় এখানে ৪৫০ প্রজাতির গাছগাছড়া পাওয়া যায় যা ঔষধীগুণে ঋদ্ধ। বার্ডওয়াচিং যারা করতে চান তাদের জন্য সুখবর, প্রায় ২৭৫ ধরনের পাখির বাস এই জঙ্গলে। রয়েছে বহু শ্বাপদ ও জলজ প্রাণী।

Polo forest Gujrat

জঙ্গলে ঢোকার চারটি গেট। একটি গেট ভিম পর্বত ও হরণাভ নদীর গা ঘেঁষে। যারা এই জঙ্গল বেড়াতে আসেন, তাদের অবশ্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে থাকে হরণাভ নদী, হরণাভ জলাধার, স্বর্ণেশ্বরশিব শিবমন্দির, সূর্য মন্দির, লাখেনা মন্দির, জৈন ডেরাসর, ভিম পর্বত ও সংগ্রহশালা। শীতকালে এই জঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয় পোলো উৎসব। গুজরাত সরকার এই উৎসবটি পর্যটকদের জন্য গত কয়েবছর ধরে প্রচার করছে। প্রচুর অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি-সহ এখানে, সাইক্লিং, ক্যাম্পিং, ট্রেকিং-এর সুযোগ আছে। আপনি যদি প্রকৃতি-প্রেমিক হন, একবার অন্তত এখানে ঘুরে আসতেই হবে আপনাকে।

কীভাবে যাবেন : আহমেদাবাদ থেকে গাড়ি ভাড়া করে অনায়াসেই পেঁছোনো যায় এখানে। উইকএন্ড-এ পর্যটকদের ভালোই ভিড় থাকে। যারা বাসে যেতে চান, গীতা মন্দির থেকে ইদার যাওয়ার বাস ধরুন। ১১৫ কিলোমিটার পথ ইদার। ওখান থেকে শেয়ার জিপ বা প্রাইভেট অটো-তে আরও ৪০ কিলোমিটার পোলো ফরেস্ট।

কোথায় থাকবেন : থাকার জন্য রয়েছে লাক্সারি রিসর্ট পোলো রিট্রিট। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় পোলো টেন্ট সিটিতেও থাকতে পারেন। বুকিং অনলাইন-এ।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...