আমাদের দেশে হেয়ার রিবন্ডিং, হেয়ার স্ট্রেটনিং এবং হেয়ার স্মুদনিং, মহিলাদের কাছে এখন আর কোনও নতুন ট্রিটমেন্ট নয়। আমাদের দেশে অন্তত ৭০ শতাংশ মহিলা এর মধ্যে যে-কোনও একটি ট্রিটমেন্টের সঙ্গে পরিচিত। বিশেষ করে আজকের ইয়ং জেনারেশনের মেয়েরা তো এগুলো ছাড়া নিজেদের চুল ঠিক রাখার কথা ভাবতেই পারে না।  এখন কেরাটিন ট্রিটমেন্ট নামে নতুন একটি হেয়ার ট্রিটমেন্ট পদ্ধতি ধীরে ধীরে কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রিতে নিজস্ব জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে। চুলে কেরাটিনের মাত্রা বাড়াবার জন্য এই ট্রিটমেন্ট করা হয়। 

কেরাটিন ট্রিটমেন্ট কী?

 বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হরমোনাল চেঞ্জেস-এর ফলে, মহিলাদের চুল এবং নখের উপর সবথেকে বেশি প্রভাব পড়ে। নখের ক্ষেত্রে কিউটিকল্স খারাপ হওয়ার সমস্যা যেমন দেখা দেয়, তেমনি চুলের ক্ষেত্রে প্রোটিন লস্-এর সমস্যা বাড়তে থাকে। যেহেতু চুল কেরাটিন নামক প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়, সুতরাং এই প্রোটিনের অভাব চুলকে রুক্ষ এবং পাতলা করে দেয়। এমনিতেও চুলে রিবন্ডিং এবং স্মুদনিং-এর খুব একটা প্রভাব পড়তে দেখা যায় না বরং চুল দুর্বল হলে চুল পড়ার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এই ধরনের চুলের জন্য কেরাটিন ট্রিটমেন্ট দারুণ ভাবে কাজ দেয়। এই ট্রিটমেন্ট-এর সাহায্যে চুলে প্রোটিনের পরত লাগানো হয় এবং প্রেসিং করে প্রোটিন লেয়ার যাতে উঠে চলে যেতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা হয়।

কেরাটিন ট্রিটমেন্ট-এর প্রক্রিয়া

এই ট্রিটমেন্ট করানোর আগে যাতে চুলে এতটুকুও ধুলোময়লা না থাকে তার জন্য ২ বার চুলে শ্যাম্পু করা হয়। এরপর চুলকে ১০০ শতাংশ ব্লো ড্রাই করা হয়। চুলকে পুরোপুরি আর্দ্রতামুক্ত করে নেওয়া হয় যাতে, কেরাটিন প্রোডাক্ট পুরোপুরি চুলে পেনিট্রেট করানো যেতে পারে। ব্লো ড্রাই করা হয়ে গেলে চুলকে ৪ ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়। ঘাড়ের কাছের অংশ থেকে প্রোডাক্ট লাগানো শুরু করা হয়। প্রোডাক্ট পুরো চুলে লাগানো হয়ে গেলে ফয়েল পেপারের সাহায্যে চুল ২৫থেকে ৩০ মিনিট কভার করে রাখা হয়। এরপর চুলকে আবার ব্লো ড্রাই করা হয় এবং ১৩০থেকে ২০০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে চুলের প্রেসিং করা হয় যাতে প্রোডাক্ট-টি চুলের ভিতর ভালো করে পেনিট্রেট করে যায়।

এই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর জল দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ১৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় চুলকে আবার প্রেস করা হয়। প্রেসিং করার পর কেরাটিন-যুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করা হয়। সবশেষে কেরাটিন কন্ডিশনার লাগিয়ে ৬-৭ মিনিট ওইভাবে চুল রেখে দেওয়া হয়। এরপর চুল ধুয়ে ফেলে ব্লো ড্রাই করে চুল শুকিয়ে নেওয়া হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি কেরাটিন ট্রিটমেন্টের অন্তর্গত।

রিবন্ডিং এবং কেরাটিন ট্রিটমেন্ট এক নয়

অনেকেরই ধারণা যে রিবন্ডিং এবং কেরাটিন ট্রিটমেন্ট একই জিনিস। কেরাটিন ট্রিটমেন্ট চুলের রুক্ষতা এবং ফ্রিজিনেস দূর করে চুলকে শাইনি এবং মসৃণ করে তোলে। কিন্তু এটি চুলকে স্ট্রেট করে না। যে- মহিলাদের চুল আগে থেকেই স্ট্রেট, এই ট্রিটমেন্ট কয়েকদিনের জন্য তাদের চুলে স্ট্রেটনিং এফেক্ট অবশ্যই নিয়ে আসে। কিন্তু যাদের কোঁকড়ানো চুল, তাদের শ্যাম্পু করার পর চুল আবার আগের অবস্থাতেই ফিরে আসে। শুধু স্মুদনেস আর শাইনিং থেকে যায় চুলে। একই সঙ্গে চুল আগের থেকে অনেক বেশি হেলদি লাগে দেখতে।

অনেকের আবার এই ভুল ধারণাও আছে যে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট পার্মানেন্ট হয়। কিন্তু এই ধারণা ভুল। কেরাটিন ট্রিটমেন্টে খুব মাইল্ড প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয় অথচ স্ট্রেটনিং এবং রিবন্ডিং-এর ক্ষেত্রে হার্ড কেমিক্যালস ব্যবহার হয়। সুতরাং কেরাটিন ট্রিটমেন্টের প্রভাব চুলের উপর মাত্র ৪-৫ মাস থাকে। এরপর আবার ট্রিটমেন্ট করাবার দরকার পড়ে।

খেয়াল রাখা জরুরি

  • কেরাটিন প্রক্রিয়া চলাকালীন হিট ইকুইপ্মেন্টস ব্যবহার করা হয় যার ফলে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রিটমেন্ট-এর প্রভাবের কারণে চুলের ক্ষতি হয়তো আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় কিন্তু ৩-৪ মাস পরে যখন ট্রিটমেন্ট-এর প্রভাব শেষ হয়ে আসতে থাকে তখন চুলের কতটা ক্ষতি হয়েছে বোঝা যায়। সুতরাং এই ক্ষতি থেকে চুলকে বাঁচাতে আর একটু সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কেরাটিন-যুক্ত হেয়ার স্পা এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত লাভজনক।
  • ট্রিটমেন্ট হয়ে যাওয়ার পর যথাসম্ভব চুল কম ফোল্ড করা উচিত। এটা স্ট্রেটনিং ট্রিটমেন্ট না হলেও চুলে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করালে এমনিতেই একটা স্ট্রেটনিং এফেক্ট চলে আসে। চুলকে বারবার ফোল্ড করলে এই এফেক্ট তাড়াতাড়ি চলে যায়।
  • অন্যান্য ট্রিটমেন্ট-এর মতোই কেরাটিন ট্রিটমেন্ট-ও এক ধরনের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট। এটি প্রয়োগ করলে চুলের রং সামান্য হালকা হয়েই যায়। সুতরাং এই পরিবর্তনের জন্য নিজেকে আগে থেকেই তৈরি করুন।
  • ট্রিটমেন্ট-এর পর চুলে কেবলমাত্র সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারই লাগান। ট্রিটমেন্ট-এর আগে প্রোডাক্ট-এর ইনগ্রিডিয়েন্টস দেখে নিন। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড-যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় নয় কারণ এটিও চুলের স্বাভাবিক রং নষ্ট করে দেয়।
  • যে-সব মহিলার চুল আগে অন্য কোনও কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করানোর জন্য অলরেডি ড্যামেজ হয়েছে, তাদের জন্য কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করানো খুব ভালো বিকল্প।
  • কোনও ভালো প্রফেশনালকে দিয়েই এই ট্রিটমেন্ট করানো উচিত এবং ফর্মালডিহাইড ফ্রি কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করাবার জন্য বলুন। কারণ কেরাটিন ট্রিটমেন্ট-এ, ফর্মালডিহাইড ফ্রি কেরাটিন ট্রিটমেন্টও রয়েছে এবং এমন স্যালন বাছুন যেখানে বিশেষ যত্ন নিয়ে এই ট্রিটমেন্ট করানো হয়।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...