হাঁফাতে হাঁফাতে ১৭৪টা সিঁড়ি গুনে শাক্যমুণির দর্শন পেলাম। আরও ১৪-১৫টা সিঁড়ি ভাঙলে একেবারে চূড়ায় আরেকটা বুদ্ধমূর্তি আছে যার দরজায় সন্ধেবেলা সময় উত্তীর্ণ হওয়ায় তালা পড়ে গেছে। তবে কালীমা ও তারামা এখানেও দেখা দিলেন। ছোটো ছোটো কুঠুরিতে কাচবন্দী তারা। কালী মূর্তিগুলো দেখে কেনা ও ছবি তোলা— দুটো ইচ্ছাই চাগাড় দিয়ে উঠল। ছবি তোলা নিষিদ্ধ। অন্ধকারে সুবিধাও হল না।
গাড়িতে যখন ফিরলাম তখন আকাশে আলো। উট-বিহার যখন সম্ভব নয়, তখন ডিসকিট মঠের নিজস্ব বিপণিতে একটু ঢুঁ মারা যাক। ছোট্ট পিতলের কিন্তু ঝকঝকে সোনালি অপরূপ একটা তারা মূর্তি কিনে ফেললাম একটু দরাদরি করে ৪৫০ টাকা দিয়ে। ওখানে নাকি দরাদরি চলে না।
হুন্দরের বালিয়াড়ি
নুব্রা উপত্যকার অন্যতম আকর্ষণ ‘স্যান্ডডিউন' বা বালিয়াড়ি। আকাশে আলো থাকলেও কমে এসেছে, তার উপর পৌঁছানোর মুখেই বৃষ্টিপাত শুরু হল। একটা সরু নালার উপর একটা ছোট্ট সাঁকো। সাঁকো পেরিয়ে টুকটাক স্টল ছাড়িয়ে বেশ দূরে সাফারির আয়োজন, আর তার জন্য বিরাট লাইন। এদিকে বৃষ্টি টিপটিপ থেকে রিমঝিমের দিকে।
ড্রাইভার ‘দেখ লিজিয়ে’ বললেও আমার মেয়ে গেল বিগড়ে। এক পা-ও এগোবে না, তক্ষুণি হোটেলে যাবে। উটের পিঠে বা পদব্ৰজে— সবই ‘না’। আমার হোটেলে ঢোকার একটুও ইচ্ছা ছিল না। তাই আমি বোঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখায় উত্তর পেলাম, —তুমি অক্সিজেন নিয়েছ, তাই এত এনার্জি। আমি নিইনি, আমি কিচ্ছু করব না।'
অষ্টাদশী কন্যা পাঁচ বছরের শিশুর মতো মাটিতে পা দাপিয়ে যা শুরু করল, বৃষ্টি ধরে এলেও ওর বাবা বাধ্য হয়ে ‘আঙুর ফল টক' জ্ঞানে উট সাফারি বাতিল করে আমাকে স্থানীয় পোশাকে নাচার প্রস্তাব দিল। পর্যটন কেন্দ্র মার্কামারা বৈশিষ্ট্য। ফোটোশুটে আমি সম্মতি জানানোর আগেই আমাকে সং সাজানোর বরাত দেওয়া হয়ে গেল।
অগত্যা ‘হো-হো-হো-হো লা-লা-লা-লা...'র সঙ্গে বেশ হেলেনের কায়দায় চাতালরূপী মঞ্চ থেকে মাটিতে অবতীর্ণ হয়ে নাচতে নাচতে দেখি আমার বর ইঙ্গিতে আর মেয়ে তেড়ে মেরে সরে যেতে বলছে। আবিষ্কার করলাম অন্য এক ক্যামেরাম্যানের নৃত্যরতা আত্মীয়া বাহিনীর নুব্রা ধন্য করা নাচের ভিডিয়ো-র মাঝে আমি সাক্ষাৎ ফোটো-বম্বার থুড়ি ভিডিয়ো-বম্বার হয়ে অঙ্গ দোলাচ্ছি। ওদিকটায় গিয়েছি পোশাকওয়ালি বুড়ির নির্দেশেই। সে আমাকে স্টেজে সোলো পারফরমেন্সের বদলে মাটিতে গ্রুপডান্সই করাবে। ঘনঘন গান বদলানোয় এমনিতেই জুত পাচ্ছিলাম না, তার উপর এমন অপমান!