সারাদিনের কর্মব্যস্তাতার পর বাড়ি ফিরে যেমন আরাম-আয়েশ চান সবাই, তেমনই চান মানসিক শান্তি। আর এই মানসিক শান্তির অন্যতম মাধ্যম অবশ্যই ঘরের অভ্যন্তরীণ নান্দনিকতা। যে নান্দনিকতা হয়ে উঠবে আপনার শিক্ষা এবং রুচির পরিচয় বহনকারী।

মনে রাখবেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকে একটা শিল্পী সত্তা। শুধু একটু কষ্ট করে জাগিয়ে তুলতে হবে সেই সত্তাকে। তাহলেই দেখবেন আপনি হঠাৎ-ই হয়ে উঠছেন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ সৃজনশীল মানুষ। ডু ইট ইয়োরসেল্ফ হোক আপনার জীবনের নতুন মন্ত্র। লেগে থাকুন কাজে। এরজন্য বেছে নিন বাড়িতে থাকা পুরোনো, পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। আর তাই দিয়ে নিজেই সাজিয়ে তুলুন নিজের ঘরবাড়ি। এক্ষেত্রে যদি টুকিটাকি জিনিসপত্র কেনাকাটাও করতে হয়, তাহলেও তা একজন পেশাদার ইন্টিরিয়র ডিজাইনারের পারিশ্রমিকের এক দশমাংশ অর্থের বেশি হবে না। অতএব জেনে নিন, কম খরচে নিজেই কীভাবে সাজাবেন আপনার বাড়িঘর।

পার্সনালাইজ্ড ওয়াল ক্লক

ফোটো ওয়াল ক্লক-এর সৌন্দর্যটাই আলাদা। তাই ঘরে ব্যবহৃৎ ওয়াল ক্লকটি খুলে, কভার আলাদা করে দিন। এবার একটি দু-ফুট বাই দু-ফুট কার্ডবোর্ড নিয়ে দেয়ালে আটকান। জীবনের বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্তের বারোটি ছবি বৃত্তাকারে সমান দূরত্বে আঠা দিয়ে আটকে দিন কার্ডবোর্ডে। মাঝখানের ফাঁকা অংশে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ– যে-কোনও একটি রং ব্যবহার করুন। অবশ্যই অয়েল পেইন্ট ব্যবহার করবেন। এরপর রং শুকিয়ে গেলে ঘড়ির সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টার কাঁটাযুক্ত মেশিন-এর অংশটুকু কার্ডবোর্ড-এর কেন্দ্রস্থলে ফেবিকুইক দিয়ে আটকে দিন। এবার, কার্ডবোর্ড-এর দুদিকে দুটো প্লাস্টিকের গোলাপফুল আটকে দিন ফেবিকুইক-এর সাহায্যে। ব্যস, রেডি হয়ে গেল আপনার পার্সনালাইজ্ড ওয়াল ক্লক।

শু বক্সেস

জুতো ছাড়া পথ চলা অসম্ভব। আর পথে পায়ের শোভাবর্ধনের জন্য কয়েকজোড়া জুতো চাই-ই চাই। কিন্তু বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের যদি কয়েকজোড়া জুতো থাকে, তাহলে পুরো পরিবারের মোট কতজোড়া জুতো হবে, তা আন্দাজ করা যেতে পারে। এরমধ্যে চটি, শু, স্যান্ডাল প্রভৃতির ছড়াছড়ি। আর এই এতজোড়া জুতো যদি ঠিকমতো গুছিয়ে না রাখতে পারেন, তাহলে আপনার ঘরের সৌন্দর্য যে বিনষ্ট হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই একটু বুদ্ধি খরচ করে জুতো রাখার ব্যবস্থা করুন।

জুতো কেনার পর বক্সগুলো ফেলে না দিয়ে, র‍্যাপিং পেপার দিয়ে মুড়ে রাখুন। দশটির মতো বক্স জমানোর পর একটির সঙ্গে অন্যটি জুড়ে দিন। এরপর টেবিল-এর নীচে অথবা দরজার পিছনে রাখুন ওই জোড়া দেওয়া বক্সেস। এবার প্রত্যেকটি খোপ-কে ব্যবহার করুন এক-এক জোড়া জুতো রাখার জন্য। দেখবেন, জুতো রাখার সমস্যা যেমন মিটেছে, ঠিক তেমন-ই ঘরের সৌন্দর্যও রক্ষা পেয়েছে।

ওয়াল আর্ট

ঘরের দেয়াল ঠিক যেন মনের আয়না। তাই আপনার শৈল্পিক-মনের প্রতিফলন ঘটান সমস্ত দেয়ালে। এরজন্য অয়েল পেইন্ট কিংবা ফেব্রিক কালার-এর সাহায্য নিন। যদি নিজে চিত্রকলায় পারদর্শী না-ও হন, তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। আপনার পছন্দমতো ছবি কিংবা নকশা গুগ্ল থেকে সার্চ করে ডাউনলোড করুন এবং পেনড্রাইভ-এ তুলে রাখুন। এরপর যে-কোনও স্ক্রিণ প্রিন্ট হাউস-এ গিয়ে স্ক্রিণ প্লেট বানিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরুন। এবার দেয়ালের যে-জায়গায় আর্ট ওয়ার্ক করতে চান, ওখানে স্ক্রিণ প্লেট বসিয়ে রং-এর প্রলেপ দিয়ে স্ক্রিণ প্লেট সরিয়ে রাখুন। কীভাবে ওয়ালে এই স্ক্রিণ প্রিন্টিং করবেন, সেই টেকনিক স্ক্রিণ প্রিন্ট হাউজ-এর থেকে জেনে নিন অথবা গুগ্ল সার্চ করেও দেখে নিতে পারেন। আর যদি এসব না করে আরও সহজে ওয়াল আর্ট করতে চান, তাহলে যে-সব গাছের পাতা দেখতে খুব সুন্দর, সেই গাছ থেকে পাতাসমেত ছোটো ডাল ভেঙে বাড়ি আনুন। এরপর বড়ো একটা থালায় রঙের প্রলেপ দিয়ে পাতাসমেত গাছের ডাল চেপে ধরুন এবং তা তুলে নিয়ে দেয়ালে চেপে ধরুন। দেখবেন, দারুণ ওয়াল আর্ট তৈরি হয়ে যাবে।

ওয়াল লাইট্স-আর্ট

কলকাতার অনেক প্রাইভেট বাসে উঠলে দেখতে পাবেন, সন্ধে নামলে বাসের ভেতরে জ্বলছে জোনাকির মতো আলো। দেখতেও লাগে বেশ! ইলেট্রিক্যাল শোরুম-এ গিয়ে কিনে আনুন ওই আলোর স্ট্রিপ। এরপর বাড়িতে ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান ডেকে ঘরের রুফ-লাগোয়া ওয়াল-এ লাগিয়ে দিন ওই স্ট্রিপ লাইট। এছাড়া বাচ্চাদের দুধের খালি কৌটো পছন্দমতো তেলরং করে ঘরের চারটি কোণে ব্যবহার করতে পারেন ঝুলন্ত আলোর মতো। এক্ষেত্রে কৌটোর ভেতরে থাকবে ছোট্ট একটা কম ওয়াট-এর বাল্ব।

ডিজাইনার কুশন

চাইলে আপনার বসার-ঘরের সোফা-কে শৈল্পিক রূপ দিতে পারেন। ঘরের দেয়ালের রঙের সঙ্গে মানানসই একরঙা কুশন কভার কিনে আনুন। যদি খুব বেশি ভালো কিছু আঁকতে না-ও পারেন, তা-ও চলবে। শুধু পছন্দের কোনও ফেব্রিক কালার নিন আর নিজের মতো করে কুশনের উপর ছোটো-বড়ো ডট্স দিয়ে ভরিয়ে দিন। অশ্বত্থ অথবা দেবদারু গাছের পাতায় রং লাগিয়েও কুশন কভারে ছাপ দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারেন।

মিক্সড আর্টওয়ার্ক

মাটির হাঁড়ি কিংবা কলশি কিনে এনে নিজের পছন্দমতো তেল রং করুন। ঘরের কোণে বসান। গোটাদশেক পাকা ভুট্টা কিনে এনে রোদে কয়েকদিন ফেলে রাখুন। ভুট্টা ভালো ভাবে শুকিয়ে গেলে পাঁচটি ভুট্টা পাঁচরকম রং করুন। এরপর রং করা মাটির হাঁড়ি কিংবা কলশির মুখে রাখুন ভুট্টাগুচ্ছ। এক্ষেত্রে রঙিন ভুট্টার মাঝেমাঝে একটি করে প্লেন ভুট্টা সাজিয়ে একসঙ্গে বেঁধে হাঁড়ি কিংবা কলশির মুখে বসাতে হবে সোজা ভাবে। এরফলে রঙিন কলশি এবং দৃশ্যমান ভুট্টার কম্বিনেশন ঘরের শোভা বাড়াবে। এছাড়া, বাজার থেকে ছোটো-বড়ো কিছু বেতের ঝুড়ি কিনে এনে ওর মধ্যে প্লাস্টিকের ফুলপাতা রেখে ঘরের চারটি কোণে ঝুলিয়ে রাখলেও দেখতে ভালো লাগবে। অবশ্য শুধু এই কয়েকটি জিনিস দিয়েই নয়, ঘরে পড়ে থাকা নানারকম সামগ্রী দিয়েই ঘর সাজাতে পারবেন নিজেই। এরজন্য প্রয়োজন শুধু ইচ্ছেশক্তিকে জাগিয়ে রাখা। খালি দেশলাই বাক্স থেকে শুরু করে গাছের শুকনো ডালপালা, সবকিছু দিয়েই সাজিয়ে তোলা যায় ঘরবাড়ি।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...