শারীরিক সুস্থতার চাবিকাঠি হল মানসিক প্রফুল্লতা। তাই তুমুল দুঃসময়ে মন ভালো রাখতে হবে। কর্মক্ষেত্রেও আপনাকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। সময়ে শেষ করতে হবে আপনার উপর ন্যস্ত কাজকর্ম। অযথা এসব নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়াবেন না বরং সংকল্প করুন, প্রতিটি দিন স্ট্রেস-ফ্রি থাকবেন।
মুখে হাসি, পর্যাপ্ত ঘুম আর অযথা খারাপ চিন্তা না করা এই তিনটিই আপনার স্ট্রেস ফ্রি থাকার মূল রসদ। আসুন জেনে নিই আর কী কী করবেন উদ্বেগহীন ভাবে জীবন কাটাতে।
কেন হয় স্ট্রেস?
অতিরিক্ত চাপ বা প্রত্যাশার মুখে পড়লে, নিজেকে বেশ কিছুটা ধরাশায়ী লাগে। যখন কিছুতেই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারছেন না, সেই মনের অবস্থাটাই হল স্ট্রেস। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শরীরে ও মনে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে বাসা বাঁধে ক্লান্তি, ভয়, ডিপ্রেশন, টেনশন, ক্ষোভ, রাগ প্রভতি। স্নাযুর চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে গুরুতর অসুস্থও হয়ে পড়েন। কেউ আবার চাপ সামলাতে ক্যাফিন, বা মদ-সিগারেটের মতো নেশার উপকরণকে আঁকড়ে ধরেন।
তবে স্ট্রেসের ভালোমন্দ দুটি দিক আছে। অনেক সময় কাজের চাপে মানুষের উদ্যম এবং এফিসিয়েন্সি দুই-ই বেড়ে যায়। বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করার এবং ইচ্ছাশক্তি বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতে এসে পড়ে। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই, যখন এই পজিটিভ ভাবনাগুলোর উপর জাঁকিয়ে বসে নেগেটিভ স্ট্রেস। সেটাই কাটিয়ে উঠতে কী করতে হবে এবার আলোচ্য।
নিজেকে গুছিয়ে নিন
আচ্ছা আপনি কি আগের মতো করে হাসেন না আর? বাথরুমে কিংবা কাজের ফাঁকে যেমন গুনগুন করে গান গাইতেন সে পাট-ও কি চুকেছে? তাহলে এবার আরও একবার নিজের প্রতি মনযোগ দিন। হাস্যময় মুখ আর স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্বের সেই মানুষটাকে নিজের ভেতর থেকে টেনে বের করে আনুন।
নিজের জন্য সময়
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দায়দায়িত্ব বাড়ে, কাজের চাপও বাড়ে। কিন্তু তাই বলে নিজের জন্য সময় বের করতে ভুললে চলবে না। কম বয়সে যদি লেখালেখির বা ছবি আঁকার অভ্যাস থাকে– সেটাকেই আবার ফিরিয়ে আনুন। প্রতিদিন অন্তত আপনার ব্যস্ত শেডিউল থেকে ১ ঘন্টা সময় বরাদ্দ রাখুন নিজের পছন্দের শখ পূরণ করার জন্য।
মেলামেশা বাড়ান
অফিসে হোক বা অফিসের বাইরে কাজের ফাঁকে একটু আধটু গল্পগাছা করুন। এটা মুড বুস্টার হিসাবে দারুণ কার্যকরী। এর বাইরেও সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রটা বাড়ান। শুধুই কাজের প্রেশারে যখন প্রাণ হাঁসফাস চেষ্টা করুন ফোনে অন্তত কানেকক্টেড থাকতে৷চেষ্টা করুন ছুটির দিনটা পরিবারের সকলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতে। কোনও সামাজিক কাজকর্মও করতে পারেন, মন ভালো হয়ে যাবে।
গান–বাজনায় মন চনমনে
মিউজিক ইজ দ্য বেস্ট মেডিসিন। যখন আপনি কমপ্লিটলি স্ট্রেসড আউট অনুভব করবেন, ঠিক তখনই হালকা কোনও মিউজিক বা গান শুনুন আপনার প্লে লিস্ট থেকে। রাতে ঘুমোনোর আগে, বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার পথে গান-বাজনা শুনে, মনটা রিফ্রেশ করে নিন।
ইতিবাচক মনোভাব জরুরি
আপনার চিন্তাভাবনার মধ্যে নঞর্থক মানসিকতাকে স্থান দেবেন না। ইতিবাচক মনোভাব রাখুন। চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করুন। হেরে যাওয়ার কথা প্রথমেই ভাববেন না। হয়তো দেখা যাবে কাজটি আপনি অতি সফল ভাবে সম্পাদন করতে পেরেছেন। তাই সময় নিয়ে আগে পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে, সেই মতো পদক্ষেপ করুন। শুরুতে নেতিবাচক ভাবনা এলেও, মনকে নিজের বশে নিয়ে আসুন। দেখবেন সময়ে সঙ্গে সঙ্গে যে-কোনও জিনিসের খারাপ দিকটি আর আপনার নজরে আসছে না।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোন
ক্লান্তি কাটানোর জন্য ঘুমের মতো ভালো টোটকা আর হয় না। সারাদিনের কাজের চাপে ঘুম ছুটে যাওয়ার মতো অবস্থা যতই হোক না কেন বাড়ি ফিরে রাতে ভালো ভাবে ঘুমোন। এতে শরীর-মন দুটোই রিজুভিনেটেড হবে। রাতে যারা ভালো ভাবে ঘুমোন না, তাদের দিনের বেলায় কাজের আউটপুট কমে যায় একথা পরীক্ষিত সত্য। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যাওয়া এসব ঘুমের স্বল্পতার কারণে হয়। ওবেসিটি-ও পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমোনোর ফল। যিনি রাতে ভালো ভাবে ঘুমোন তিনি কর্মক্ষেত্রে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে সক্ষম হন। অতএব বেশি রাত অবধি জেগে সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাটিং করা বা উত্তেজনাপূর্ণ ওয়েব সিরিজ দেখে, রাতের ঘুম পণ্ড করবেন না।
জীবনটাকে নিয়ন্ত্রণ করা আপনারই হাতে। আপনি নিজেই পারেন জীবনকে স্ট্রেস-ফ্রি করতে। নতুন বছরে এটাই হোক তবে আপনার রেজোলিউশন। স্ট্রেস মুক্ত জীবনশৈলীতে, দীর্ঘায়ুকে সঙ্গী করুন।