সেই পুরোনো রান্নাঘর, একেবারেই না। সবাই এখন ছুটছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। সময় নষ্ট করার মতো সময় কারও হাতে নেই। অল্প সময়ে রান্না সেরে অফিস বেরোবার তাড়া থাকলে, গোছানো রান্নার জিনিসপত্র দরকার হাতের কাছে। তাই কিচেন ক্যাবিনেট দরকার সবকিছু গুছিয়ে রাখার জন্য।

কিচেন ক্যাবিনেটস শুধু জিনিস স্টোর করার জন্যই যে ব্যবহার করা হয় তা নয়, রান্নাঘরকেও করে তোলে পরিপাটি এবং স্টাইলিশ। বাজারে এখন বহু কোম্পানির নানা ধরনের কিচেন ক্যাবিনেটস পাওয়া যায়। প্রয়োজন অনুসারে রং বেছে সাইজ অনুযায়ী রান্নাঘরে সেট করানো যায়।

স্টেনলেস স্টিল ক্যাবিনেটস

অনেকেই উইপোকা লাগার ভয়ে রান্নাঘরে কাঠের জিনিস করাতে চান না, তাছাড়াও জল হাতেও আমরা রান্নাঘরে কাঠের জিনিসে হাত দিয়ে ফেলি। জল এবং উইপোকা তাড়াতাড়ি কাঠের জিনিস খারাপ করে বলে স্টেনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি ক্যাবিনেটস-ও আজকাল অনেকেই প্রেফার করছেন রান্নাঘরের জন্য। এই ক্যাবিনেটস সহজে খারাপ হয় না বা উই-ও ধরে না।

স্টোরেজ ক্যাবিনেটস

রান্নাঘরের সঙ্গে স্টোররুম (ভাঁড়ার ঘর) না থাকলে, চাল, ডাল ইত্যাদি সারা মাসের রান্নার জিনিসপত্র রাখতে অসুবিধা হয়। স্টোরেজ ক্যাবিনেটস এই অসুবিধা লাঘব করে কাজটাকে অনেক সহজ করে দেয়। এই ধরনের ক্যাবিনেটস-এ অনেক ড্রয়ার এবং আলমারি থাকে। তাতে সহজেই জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা যায়। এমনকী সারা মাসের রেশন-ও সহজে ওর মধ্যে ধরে যায়। শুধু কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী তাতে স্টোরেজ স্পেস আছে কিনা। নিজের দরকার বুঝে অর্ডার দিয়েও এগুলি বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

কাচের ক্যাবিনেটস

রান্নাঘর-কে একটু অন্যভাবে সাজাতে চাইলে গ্লাস ক্যাবিনেটস আপনার চাহিদা পূরণ করবে। এই ক্যাবিনেটস-এর দরজাগুলো কাচের হয়। সবথেকে সুবিধা হল কাচের পাল্লা হওয়ার দরুণ ভেতরে রাখা জিনিস সহজেই দেখতে পাওয়া যায় এবং দরকারে খুঁজে পেতেও অসুবিধা হয় না। এছাড়া শৌখিন কাচের কাপ-প্লেট-ডিনার সেট রাখার জন্যও কাচের ক্যাবিনেট ব্যবহার করা যায়। ক্রকারি-র সৌন্দর্য রান্নাঘরকেও দেবে অ্যাট্রাক্টিভ লুক। নানা সাইজ এবং ডিজাইনের কাচের ক্যাবিনেটস বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কাচের পাল্লাকে স্টাইলিশ লুক দেওয়ার জন্য এখন এর উপর ডিজাইন-ও করা হচ্ছে।

মডার্ন ক্যাবিনেটস

এখন মডার্ন কিচেন-এর যুগ। কিচেন-এর প্রত্যেকটি জিনিস এখন সকলে মডার্ন এবং স্টাইলিশ চাইছেন। লিভিং রুম, বেডরুমের মতো কিচেনও মডার্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাজারে এই ধরনের বিভিন্ন ডিজাইন এবং রঙের ক্যাবিনেটস পাওয়া যায়। ক্যাবিনেট-এর ডিজাইনিং-এ, আলমারির শেপ এবং রঙের কাজে মডার্ন টেকনোলজি ব্যবহার করে করা হয়। সামনের শেল্ফ-এ ডেকোরেটিভ আইটেম সাজিয়ে রাখা যায়। ড্রয়ারগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে সকলেরই এটি ব্যবহার করতে সুবিধা হয়। এই ক্যাবিনেট-এ লাইটের ব্যবহারও করা হয়, যার ফলে পুরো রান্নাঘর-এর লুকটাই অ্যাট্রাক্টিভ হয়ে ওঠে। কিচেনের প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটা জিনিসের জন্য প্রপার আলমারি এবং ড্রয়ার ডিজাইন করা হয়।

সিম্পল ক্যাবিনেটস

রান্নাঘরকে সিম্পল এবং সোবার লুক দিতে বাজারে বহু ডিজাইনের সিম্পল লুকের ক্যাবিনেটস পেয়ে যাবেন। এটি জায়গাও কম নেয় এবং আলমারি ও ড্রয়ারের সংখ্যাও এতে কম থাকে। জিনিস রাখলে খুঁজে পেতেও অসুবিধা হয় না। লুকটাকে সিম্পল রাখার জন্য একটি কিংবা দুটোর বেশি রং এতে ব্যবহূত হয় না। খুব সাধারণ দেখতে হ্যান্ডল লাগানো হয় যাতে পুরো জিনিসটা খুব ডেকরেটিভ মনে না হয়।

ক্যাবিনেটস কেনার সময় খেয়াল রাখুন

টাইপ অ্যান্ড স্টাইল – বাজারে বহু ধরনের এবং বিভিন্ন স্টাইলের ক্যাবিনেট পাওয়া যায়। কিন্তু কিচেন অনুযায়ী ক্যাবিনেট বাছাটা বাঞ্ছনীয়। রান্নাঘরে জিনিসপত্র রাখার জন্য কতটা জায়গা দরকার সেটা মাথায় রেখে পছন্দ মতন ক্যাবিনেট ডিজাইনও করাতে পারেন। ক্যাবিনেটস, ফ্রেমড এবং ফ্রেমলেস, দুই ধরনেরই পাওয়া যায়। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়াটা শুধু দরকার।

মেটেরিয়াল – বেশিরভাগই ক্যাবিনেট তৈরি হয় সলিড উড, প্লাই উড, থার্মোফয়েল, মেলামাইন, পার্টিকল বোর্ড, মিডিয়াম ডেনসিটি ফাইবার বোর্ড অথবা স্টেনলেস স্টিল দিয়ে। কোনটা আপনি ব্যবহার করতে চান সেটা আগে থাকতে ঠিক করুন এবং পকেটের সামর্থ্য অনুযায়ী মেটেরিয়াল বেছে নিন।

কালার্স – ক্যাবিনেট-এর রং বাছাটাও জরুরি। রান্নাঘরের সঙ্গে রং মিলিয়ে ক্যাবিনেট কেনা অথবা বানানো যায়। ক্যাবিনেটের কয়েকটা রং খুব কমন যেমন হোয়াইট, সিলভার, ব্রাউন, ব্ল্যাক ইত্যাদি রংগুলো ম্যাচিং ছাড়াই ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন অবশ্য কম্বিনেশন কালার ব্যবহার করার ট্রেন্ড চলছে। দুটো-তিনটে রং একসঙ্গে ব্যবহার করে ক্যাবিনেটকে আরও অ্যাট্রাক্টিভ লুক দেওয়ার ট্রেন্ড চলছে।

টেকসই – ক্যাবিনেট কেনার সময়, সেটির মেটেরিয়াল কতটা টেকসই সেটাও খেয়াল করা দরকার। কাঠের হলে তার কোয়ালিটি কেমন, স্টেনলেস স্টিলের হলে স্টিলের মান কীরকম, থিকনেস কতটা– সেগুলি ভালো করে যাচাই করে তবেই ক্যাবিনেট সিলেক্ট করা উচিত। মার্কেটে লাইট থেকে হেভি সব ধরনের কোয়ালিটি-ই পাওয়া যায়।

ক্যাবিনেটস-এর যত্ন

রান্নাঘরের ক্যাবিনেট নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। তা না হলেই তেল-ময়লা জমতে আরম্ভ করে। পোকামাকড়ে রান্নাঘর ভরে যায় এবং খাদ্যবাহিত সংক্রমণের ভয়ও বেড়ে যায়।

১    ক্যাবিনেট রোজ বাইরে থেকে মোছা উচিত, যাতে দাগ-ছোপ না পড়ে। সপ্তাহে একবার অথবা ১৫ দিনে একবার আলমারি, ড্রয়ার সবকিছু ভিতর থেকেও পরিষ্কার করা উচিত। ডাস্টিং করার কাপড় পরিষ্কার এবং নরম হওয়া বাঞ্ছনীয়।

২    ক্যাবিনেটের পলিশ ফেড হতে দেখলে নতুন করে পলিশ করিয়ে নিন।

৩    কাচের ক্যাবিনেট হলে খেয়াল রাখুন স্ক্র্যাচ যেন না পড়ে।

৪    ক্যাবিনেটের কোনও অংশ খারাপ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করিয়ে নিন।

৫    ক্যাবিনেটে জল লাগাবেন না। জল পড়লে তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যেতে পারে এবং উই লাগারও ভয় থাকে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...