উৎকণ্ঠা, আনন্দ, ভয়, রাগ, প্রেম সবই আসলে নিয়ন্ত্রিত হয় হরমোনের দ্বারা। আবেগের সঙ্গেও গভীর ভাবে সম্পর্কিত এই হরমোন। মনের অবস্থা কখন কী রকম থাকবে, এর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে কোনও না কোনও হরমোন।
বেশ কিছু গাইনিকোলজিকাল পরিবর্তন মেয়েদের শরীরে হয় মাঝবয়সে পৌঁছে কিংবা বযঃসন্ধিতে এসে। এই সময়গুলি হরমোনের মাত্রা পরিবর্তনের সময়। ফলে আবেগের উপর তার প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি।
পিএমএস এবং মেনোপজ
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা ঋতুচক্র সূত্রপাতের আগের অবস্থা এবং রজঃনিবৃত্তি অর্থাৎ মেনোপজ—এই পর্বগুলি মেয়েদের জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বস্তুত মেয়েদের শরীরে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড-এর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। এর থেকেই নিঃসৃত হয় এফএসএইচ অর্থাৎ ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন এবং এলএইচ বা লিউটিনাইজিং হরমোন। আর ওভারি থেকে নির্গত হয় ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন। মহিলাদের মুড সুইং, আবেগের বহিঃপ্রকাশ– সবই নিয়ন্ত্রিত হয় এই হরমোনগুলির দ্বারা।
বয়ঃসন্ধিতে পিরিয়ডের সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে মেয়েরা পেটে ব্যথা, পেট ভারী হয়ে থাকা, কারণে-অকারণে মনখারাপ অনুভব করেন। এর সঠিক কারণ এখনও জানা না গেলেও, বলা হয়ে থাকে, ওভিউলেশনের পর প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণের ফলে এই সমস্যাগুলোর সূত্রপাত হয়।সাধারণত মেয়েরা বয়ঃসন্ধি পেরোলে প্রোজেস্টেরন-এর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন পিরিয়ডজনিত সমস্যাগুলিও দূর হয়ে যায়।
মোনোপজের সময়ও মহিলারা এই হরমোনাল ইমব্যালান্স-এর কারণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। হট ফ্লাশ, মুড সুইং, সেক্স-এ অনীহা– এমন নানা সমস্যা হতে পারে। এর কারণ হল বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণু কমে যাওয়া। ফলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রাও কমতে থাকে। ওদিকে পিটিউটারি গ্রন্থি থেকে যে-এফএসএইচ হরমোন নিঃসৃত হচ্ছে, তার মাত্রা বাড়তে থাকে, যা যৌনসম্পর্ক স্থাপনে অনাগ্রহ তৈরি করে।
প্রেগন্যান্ট মহিলাদের শরীর এবং মনও নিয়ন্ত্রিত হয় নানা হরমোন দ্বারা। হরমোন লেভেল ফ্লাকচুয়েট করার কারণে, অনেক গর্ভবতী মহিলা উৎকণ্ঠা, টেনশন কিংবা ডিপ্রেশনে ভোগেন। যারা থাইরয়েড-এর সমস্যায় ভোগেন তারা আবার অনিয়মিত পিরিয়ড, অল্প পরিমাণে ঋতুস্রাব ইত্যাদির শিকার। থাইরয়েড বেড়ে গেলে ঋতুস্রাবের পরিমাণও বেড়ে যায়। এগুলি সবই নিয়ন্ত্রিত হয় টিএসএইচ হরমোন দ্বারা।
ওদিকে প্রোল্যাক্টিক হরমোন নামের একটি হরমোন নিঃসরণের ফলে মেয়েদের ব্রেস্ট ডিসচার্জ হতে পারে। পিরিয়ড কমে যাওয়া, মেজাজ তিরিক্ষে হয়ে যাওয়া, এরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কোনও টিউমার-এর জন্যই এই হরমোনের নিঃসরণ হতে পারে শরীরে। তাই টিউমারের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
ইদানীং পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা বহু মহিলারই হয়। ইনসুলিন হরমোনের কারণেই এই সমস্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওজন বেড়ে যাওয়া, রোমের আধিক্য, ব্রণ– এগুলি সবই এর প্রভাবে হয়।
এসব নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে মহিলারা বেশি মাত্রায় ডিপ্রেশনের শিকার হন। অর্থাৎ মন ও হরমোন কো-রিলেটেড। তাই দীর্ঘদিন ডিপ্রেশন চলতে থাকলে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।