পানীয় জল, স্নানের জল, বাসন ধোয়ার জল– এই ব্যবহার প্রণালী আমরা ছোটো থেকেই জেনে এসেছি। এছাড়া কৃষিকাজের জন্য, ফুলের বাগানের জন্য, খাবার তৈরির জন্য, কারখানায় ব্যবহারের জন্যও জল অপরিহার্য। কিন্তু, এর বাইরেও রোগমুক্তির জন্য জলের গুরুত্ব অপরিসীম। আর রোগমুক্ত হওয়ার জন্য বা সুস্বাস্থ্যের জন্য জলকে মাধ্যম করে যে চিকিৎসা করা হয়, তাকে বলে ‘হাইড্রোথেরাপি’।

এই হাইড্রোথেরাপি-র ইতিহাস ১০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। গ্রিক এবং রোমান সংস্কৃতি ছাড়াও, আমাদের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও এই থেরাপির উল্লেখ আছে।

জলের কার্যকারিতা

  • এনার্জি বাড়ায়
  • রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে
  • জলকে মাধ্যম করে শরীরচর্চা করলে বাড়তি মেদ এবং ওজন কমে
  • ক্লান্তি দূর করে
  • জলীয় আবহে থাকলে শরীর ও মন সতেজ-স্নিগ্ধ থাকে

কার্যপদ্ধতি

হাইড্রোথেরাপি-র নিয়ম অনুযায়ী বলা হয়, হালকা গরম জল শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। উষ্ণ জল পান করলে পেটের অসুখ বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্লান্তি দূর হয়।

আমরা যখন শরীরকে জলে ডুবিয়ে রাখি, তখন শরীর অনেক হালকা মনে হয়। শরীরকে এমনই আরামে রাখার প্রয়োজন আছে। সুইমিং পুল, পুকুর কিংবা নদীর জলে যখন শরীরটাকে ডুবিয়ে রাখি, তখন মালিশের মতো অনুভূতি হয়। আসলে, এইরকম জলের ব্যবহারে আমাদের নির্জীব ত্বক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এবং রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়, তাই আরাম লাগে। হাইড্রোথেরাপির মাধ্যমে আর্থ্রাইটিস, ডিপ্রেশন, মাথাধরা, স্টমাক প্রবলেম, নার্ভ প্রবলেম, স্লিপ ডিসঅর্ডার্স প্রভৃতি সমস্যার চিকিৎসা করা হয়।

হাইড্রোথেরাপির রকমভেদ

  • সম্পূর্ণ স্নান
  • অর্ধেক শরীরকে জলে নিমজ্জিত রাখা
  • জলে শুধু পা দুটো চুবিয়ে রাখা
  • স্টিম বাথ নেওয়া
  • উষ্ণ জলে শরীর ডুবিয়ে রাখা
  • ঠান্ডা জলে শরীর চুবিয়ে নেওয়া
  • গরম এবং ঠান্ডা জল মিশিয়ে শরীর ভেজানো

চিকিৎসা

যদি বুকে কফ জমে অথবা হাতে পায়ে চোট লাগে কিংবা শরীরের কোথাও ফোড়াজাতীয় কিছু হয়, তাহলে হালকা গরম জলে কাঁচা নিমপাতা ফেলে, সেই জলে তোয়ালে ভিজিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় বারবার চেপে ধরতে হবে। কিছুক্ষণ সময় ধরে দিন-দুয়েক এভাবে হাইড্রোথেরাপি করলে রোগমুক্তি নিশ্চিত। তবে যদি জ্বরে আক্রান্ত হন, তাহলে এর ঠিক বিপরীত অর্থাৎ, ঠান্ডা জল দিয়ে মাথা ধুয়ে, কপালে বারবার জলপট্টি দিয়ে জ্বরের থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

অর্শ, প্রস্টেট গ্রন্থি ফুলে যাওয়া কিংবা যৌনাঙ্গে যদি সাধারণ রোগজীবাণু বাসা বেঁধে অ্যালার্জি হয়, তাহলে হাইড্রোথেরাপিকে মাধ্যম করলে রোগমুক্তি সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিশেষভাবে হাইড্রোথেরাপি করতে হবে।

শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সারাদিনে অন্তত তিন লিটার জল পান করা জরুরি। কারণ জল খেয়ে পরিশ্রম করলে মূত্র এবং ঘামের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য বেরিয়ে যাবে এবং শরীর রোগমুক্ত থাকবে। ঠিকমতো জল পান করলে খাবারও ঠিকঠাক হজম হয়। তাই, লিভার ভালো থাকে, আর লিভার ভালো থাকলে ত্বকও ভালো থাকবে এবং সৌন্দর্য বজায় থাকবে। বিশেষকরে যারা খেলাধুলো করেন কিংবা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের উচিত প্রতিদিন অন্তত চার লিটার জল পান করা। কারণ, যদি দুই শতাংশ জলও কম খান, তাহলে খেলাধুলো কিংবা শারীরিক পরিশ্রম করার ক্ষমতা অন্তত ২৫ শতাংশ কমে যাবে।

গরমকালে হাইড্রোথেরাপি

  •  ঠান্ডা জলে স্নান করুন
  • রোদের থেকে ফিরে এসে সঙ্গে সঙ্গে জল পান করবেন না, অন্তত পনেরো মিনিট বাদে জল পান করুন
  • কাপড়ের মধ্যে বরফের টুকরো রেখে সারা শরীরে বোলান
  • চোখে মাঝেমধ্যে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন এবং চোখের উপর (বন্ধ করে) গোলাপজলের পট্টি রাখুন
  • তরমুজ, শসা, পেঁপে, লিচু, আঙুর প্রভৃতি রসালো ফল খান, দিনে অন্তত একবার
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...