নিজের কথা বলবার আগে গৌতম সেই ডকুমেন্টের শেষ পাতায় চোখ রাখে। সত্যি, কী নেই সেখানে। প্রথম বিয়ের কার্ড থেকে আরম্ভ করে, তাদের ডিভোর্স-এর কাগজ। তারপর একই ভাবে দ্বিতীয় বিয়ের কার্ড ও তাদের মধ্যে ডিভোর্স না হওয়ার কাগজ, সব এক্কেবারে পরপর সাজানো। সঙ্গে একগুচ্ছ বধূ নির্যাতনের অভিযোগ। সব মিলিয়ে প্রায় পঁচিশ পাতার জেরক্স করা ডকুমেন্ট। পুরো সেটটা এক্কেবারে মন্ত্রি পর্যন্ত কপি ফরোয়ার্ড করা হয়েছে।
—ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলব ভাবছি। যেভাবেই হোক বড়োছেলের সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় না এলে এই ছেলে তো মারা যাবে। উনি কেন যে বুঝছেন না, আগে তো পরিবার তারপরে তো বাড়ি।
গৌতম এই প্রসঙ্গে কোনও কথা না বলে আগেরদিন সঞ্জীবকে কেমন দেখেছে, সেই কথাগুলোই বলতে লাগল। আরও সব শিক্ষক ও শিক্ষিকা ছিলেন। সঞ্জীবের অবস্থাতে সবার কষ্ট হলেও কারওর কিছুই করবার নেই। এদিকে ছয়জনের মধ্যে একজন চলে যাওয়াতে বাকিদের উপর চাপ পড়ছে। প্রাইমারি স্কুল হলেও বড়ো স্কুল। প্রতিটা ক্লাসের দুটো করে সেকশেন। এই অবস্থাতে একজন চলে যাওয়া মানে...।
ছাত্র-ছাত্রীরাও সঞ্জীবের কথা প্রায় জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু গৌতমদের কাছে সঞ্জীবের অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে তার শরীর খারাপ ছাড়া আর কিছু বলবার নেই।
সপ্তাহ তিনেক এমনি ভাবেই কেটে যায়। ইতিমধ্যে স্কুলে সঞ্জীবের সাসপেনশনের অর্ডার চলে আসে। অরুণবাবু সপ্তাহে একদিন সঞ্জীবের বাড়িতে ফোন করে তার মায়ের খবর নেবার পাশে সঞ্জীবেরও খবর নিতেন। সেই ভাবেই একদিন ফোন করে জানতে পারলেন সঞ্জীবের জামিন হয়েছে। অবশ্য অফিস থেকে আগেই স্কুলে জানিয়ে দিয়েছিল, ‘সঞ্জীববাবু এলেও ওনাকে সই করতে দেবেন না। ক্লাস করতে পারেন, তবে এই সময় না আসাটাই ভালো।'
অবশ্য পাঁচদিন পর সঞ্জীব নিজে এসে জানালেন, তিনি এখন ক্লাস করবেন না। অরুণবাবু অফিসে ফোন করে সাসপেন্ড থাকাকালীন কী করতে হবে ও কী কাগজ জমা দিতে হবে সেইসব জেনে নিলেন। বেচারা এক মাসের পেমেন্ট তো পেলই না, পুলিশ কাস্টডিতে থাকাকালীন যে কয়েকদিনের টাকা পেমেন্ট হিসাবে ঢুকেছে সেটাও ট্রেজারিতে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে। অবশ্য সেসব পরে জানানো হবে। সঞ্জীব সেইসব জেনে স্কুল থেকে অফিস হয়ে বাড়ি যাবার কথা জানাল। কিন্তু তিনদিন পর গৌতম স্কুলে আসতেই শুনল, সঞ্জীবের বাড়ি যে পঞ্চায়েত এলাকায় সেখান থেকে কোনওরকম সাহায্য পাচ্ছেন না। সে যে আর কোনও কিছু রোজগারের সঙ্গে জড়িত নয়, এই মর্মে পঞ্চায়েত থেকে তাকে একটা সার্টিফিকেট এনে অফিসে জমা দিতে হবে। কিন্তু পঞ্চায়েতের কেউ তাকে সাহায্য করছে না।