কী বিচিত্র অবস্থা, সবাই দোষ করে? কেউ কেউ তো পরিস্থিতিরও শিকার হয়? সঞ্জীব কি দোষ করেছে? সংশোধনাগার নাম হলেও আসলে এটা কিন্তু জেল। বড়ো বড়ো জল্লাদ প্রাচীর, লোহার দরজা, আর ভিতরে আত্মীয় পরিজনদের থেকে আলাদা থাকা কিছু মানুষ। গৌতমের মাথার মধ্যে জেল সম্পর্কিত বিভিন্নরকমের কথা ও ঘটনা ভেসে বেড়াতে লাগল। সেই ও’হেনরি থেকে তার দেখা বিভিন্ন হিন্দি ও ইংরেজি সিনেমা, যেখানে জেল একটা চরিত্র হয়ে উঠেছে।
দুটো বড়ো বড়ো লোহার গেটের পরে একটা জায়গা আছে। ওখানে দু'জন পুলিশ বসে আছেন। একজন টেবিল চেয়ারে আরেকজন এমনি চেয়ারে। তারপর আরেকটা বড়ো লোহার গেট। সেই গেটের সঙ্গে আছে একটা ছোটো গেট। সেটা খুলেই সেই রোগা ভদ্রলোক বেরিয়ে এসে একজনের নাম ধরে জোরে হিন্দিতেই চিৎকার করে বললেন, ‘কে এসেছে এনার বাড়ি থেকে..., খাবার দাবার যা কিছু এনেছেন, ওই ট্রেতে রাখবেন।'
গৌতম একপাশে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখে। কীভাবে বাইরের লোহার বড়ো গেটটার একপাশে রাখা প্লাস্টিকের ট্রেতে ভিতরের এক বন্দির সঙ্গে দেখা করতে আসা একজন বিস্কুট, মুড়ি আরও অনেক কিছু এক এক করে রেখে দিলেন। রেখে দিলেন বিড়ি, এমনকী খৈনির প্যাকেট। কিছু সময় পর এক ভদ্রলোক ভিতরের লোহার বড়ো গেটটার নীচে থাকা ছোটো গেটটার ভিতর দিয়ে মাঝের জায়গাটাতে এসে কিছু সময় দাঁড়ালেন। এদিকে তখন দাঁড়িয়েছিলেন বাকি দু'জন ভদ্রলোক। গৌতমের বুঝতে অসুবিধা হল না এনারা সবাই কাঁদছেন।
জেল অফিসের সেই রোগা ভদ্রলোক ততক্ষণে সেই প্লাস্টিকের ট্রে থেকে এক এক করে সব খাবার জিনিস বের করে একটা বড়ো প্লাস্টিকের প্যাকেটের ভিতরে ভরে মুখটা সুতো দিয়ে বেঁধে দিলেন। সেই সঙ্গে আরেকবার হিন্দিতেই ‘দেখা করবার জন্যে বেশি সময় দেওয়া যাবে না' সেটাও জানালেন। পাশে একটা জানলাতে কথা বলবার ব্যবস্থা আছে, সেটা বোঝা গেল। গৌতম অপেক্ষা করতে লাগল।