আমি কুড়ি বছর বয়সি অবিবাহিত তরুণী। তিন বোনের মধ্যে আমি মেজো। মাঝেমধ্যে আমার মনে হতো, আমি বাকি দুই বোনের মতো ফর্সা, সুন্দরী নই। লেখাপড়ায়ও তেমন ভালো নই। ওরা মেধাবী, আমি সাধারণ ছাত্রী। আমি অন্তর্মুখী, ওরা বহির্মুখী। কিন্তু বোনেদের সঙ্গে কেন এই বৈসাদৃশ্য তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম।
একদিন আত্মীয়-পরিজনের এক নৈশ প্রীতিমিলন অনুষ্ঠানে আমি নিশ্চিত হলাম যে, আমার ওই জটিল ভাবনা অমূলক নয়। দুই আত্মীয়ের কথোপকথন শুনে আমি জানতে পারি যে, আমি যাদের বাবা-মা হিসাবে জেনে এসেছি, তারা আমার বায়োলজিক্যাল পেরেন্টস নয়। আমাকে ওরা দত্তক নিয়েছেন। আর এই সত্যের মুখোমুখি হওয়ার পর, আমার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
অনেক ভেবেচিন্তেও আমি কূলকিনারা পাচ্ছি না, এখন আমার কী করা উচিত! ওই পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও ভাবছি। কিন্তু কোথায় যাব, কী করব, আমার যারা আসল বাবা-মা, তাদের আমি খুঁজে পাব কি? কিংবা খুঁজে পেলে আমায় কাছে টেনে নেবেন কি?… এমনই হাজারো বেদনাময় প্রশ্ন এবং দুঃশ্চিন্তায় এখন আমি প্রায় পাগল হতে চলেছি। দয়া করে আমাকে আলোর পথ দেখান।
- যে-পরিবারে তুমি বড়ো হয়েছ, সেই পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছই বা কেন? তাছাড়া অন্যদের কথা যাচাই না করে দুঃখ পাচ্ছই বা কেন? যাচাই করো। তুমি এখন প্রাপ্তবয়স্কা। দত্তক সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী পালক বাবা-মায়ের কাছ থেকে সব সত্যি জানার অধিকার তোমার আছে। আইন অনুযায়ী তারাও বলতে বাধ্য। তবে বিষয়টি জানার চেষ্টা করো, তোমার মানসিক যন্ত্রণার কথা ওদের প্রাণখুলে বলো। ওরা নিশ্চয়ই তোমাকে সত্যের মুখোমুখি করবেন। কবে, কেন, কীভাবে এবং কাদের থেকে তোমাকে দত্তক নেওয়া হয়েছে, এসব প্রশ্ন তুমি নম্রভাবে রাখতেই পার তোমার প্রতিপালক মা-বাবার কাছে। প্রয়োজনে তোমার বায়োলজিক্যাল পেরেন্টদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার আবেদন রাখো। এরপর, সব সত্যের মুখোমুখি হওয়ার পর তোমার যা মনে হবে তখন তুমি তাই করবে। তবে বোনেদের সঙ্গে তুলনা করে তুমি যে হীনন্মন্যতায় ভুগছো, তা কাম্য নয়। কারণ দুই হাতের দশটা আঙুল যেমন একইরকম হয় না, তেমনই সবার গায়ের রং, সৌন্দর্য, উচ্চতা, মেধা ইত্যাদি একই রকম হয় না। ভেবে দ্যাখো, সবাই একইরকম হলে কি পৃথিবীটা এত বৈচিত্র্যময় হতো? অতএব, রূপ নয়, ভালো নাকি মন্দ– কে-কেমন মানুষ সেটাই বিচার্য। নিজেকে এত হীন ভাবার কোনও কারণ নেই। খুশি থাকো, সুফল পাবেই।