আয়নায় যে-প্রতিবিম্বটি প্রতিফলিত হয়, সেটাকে কোনও ভাবেই অসুন্দর দেখতে আমরা প্রস্তুত নই। তাই মুখের সামান্য দাগ ছোপও অসহনীয় হয়ে ওঠে। নিজেকে ফ্ল-লেস বিউটি হিসাবে প্রেজেন্ট করতে তাই আমাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। সাজগোজের শুরুতেই সবচেয়ে বড়ো ভূমিকাটি পালন করে মেক-আপ বেস। সেই জন্য এটিকে স্কিনের ব্যাকড্রপও বলা হয়ে থাকে। সঠিক মেক-আপ বেস বাছতে পারলে সুন্দর মেক-আপ করা যায় এই প্যাচপ্যাচে গ্রীষ্মেও।
সাধারণ ভাবে স্কিনটোন অনুযায়ী মেক-আপ বেস বাছাই করতে হয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না সঠিক বাছাইয়ের পদ্ধতি।
বেস ফর ড্রাই স্কিন
আপনার স্কিন যদি শুষ্ক ধরনের হয়, তাহলে আপনার টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার, ক্রিম বেসড্ ফাউন্ডেশন-ই বেছে নেওয়া উচিত।
টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার
যদি আপনার মুখের ত্বকে দাগ ছোপ কম থাকে, তাহলে আপনি অনায়াসে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এটা লাগানোও খুব সহজ। হাতের তালুতে খানিকটা ময়েশ্চারাইজার নিয়ে আঙুল দিয়ে সমস্ত মুখে কয়েকটা বিন্দু বসিয়ে দিন এই মেক-আপ বেস-এর। তারপর মুখে সমানভাবে মেখে নিন। এই ময়েশ্চারাইজার সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর-যুক্তও হয়ে থাকে যা গরম কালের জন্য আদর্শ। এটা মুখের ত্বককে গরম হাওয়া অর্থাৎ লু-এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও সুরক্ষা দেয়। ত্বকের আর্দ্রতা বাইরে বেরোতে দেয় না।
ক্রিম বেসড্ ফাউন্ডেশন
অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের মধ্যে এমনিতেই লাবণ্যের অভাব থাকে। গ্রীষ্মে এই ত্বক আরও প্রাণহীন হয়ে ওঠে। তাই এই ধরনের ত্বক যাদের, তারা ক্রিম বেস্ড ফাউন্ডেশন-ই বেছে নিন। এটা লাগানোর ফলে ত্বক প্রয়োজনীয় ময়েশ্চারও পেয়ে যায়। এটি ব্যবহার করার সঠিক পদ্ধতিটা শুধু জানা দরকার। এই মেক-আপ বেস লাগাতে হয় স্প্যাচুলার সাহায্যে। সামান্য মেক-আপ স্প্যাচুলা করে গালে লাগিয়ে, স্পঞ্জ বা ব্রাশের সাহায্যে মুখে সমানভাবে চারিয়ে নিন। এটা সেট করার জন্য মুখে কম্প্যাক্ট বুলিয়ে নিন। এর ফলে মেক-আপ দীর্ঘক্ষণ সতেজ থাকবে।
সুফলে
এটা খুব লাইট মেক-আপ বেস। মুখের ত্বক উজ্জ্বল দেখানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্প্যাচুলার সাহায্যে অল্প সুফলে হাতের তালুতে নিন। এবার ব্রাশ বা স্পঞ্জের সাহায্যে মুখে সমান ভাবে বুলিয়ে নিন।
বেস ফর অয়েলি স্কিন
তৈলাক্ত ত্বক যাদের, ঘাম বেশি হওয়া তাদের কমন সমস্যা। টু ওয়ে কেক ব্যবহার করাই এক্ষেত্রে শ্রেয়। এটি মূলত ওয়াটার প্রুফ মেক-আপ বেস। প্রয়োজনে আপনার মুখের জন্য প্যান স্টিক বা মুজ ব্যবহার করতে পারেন।
প্যানস্টিক
এটি ক্রিম-যুক্ত হওয়ার ফলে ত্বকের ময়েশ্চার অক্ষুণ্ণ রাখে। অয়েলি স্কিনের মেক-আপ ঘামের সমস্যায় চট করে নষ্ট হয়ে যায়। প্যানস্টিক লাগালে এই আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
টু ওয়ে কেক
এটা এক ধরনের চটজলদি ওয়াটারপ্রুফ বেস। এটা সহজেই পার্স-এ ক্যারি করা যায়। ফলে যে-কোনও সময়ে মেক-আপ নষ্ট হয়ে গেছে বুঝলেই এটি পুনরায় প্রয়োগ করা যায়। এই টাচ আপ আবার আপনাকে সতেজ করে তুলবে। এটি ব্যবহার করতে হবে ভিজে স্পঞ্জ দিয়ে। শুধু খেয়াল রাখবেন টু ওয়ে কেক আপনার ত্বকের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।
মুজ
অয়েলি স্কিন যাদের তাদের মেক-আপ বেস এর আর একটি বিকল্প মুজ। এটি লাগানোর ফলে ঘাম হয় না। পাউডারের মতো হালকা পরত মুখের উপর অনেকক্ষণ থাকে। ত্বকের বাড়তি তেল শুষে নিয়ে এটি মুখকে তরতাজা রাখে, ফলে গ্রীষ্মের সান্ধ্য পার্টির জন্য এটি আদর্শ। এটি হাতের তালুতে নিয়ে, স্পঞ্জ বা ব্রাশের সাহায্যে লাগান।
বেস ফর নর্ম্যাল স্কিন
আপনার ত্বক যদি স্বাভাবিক হয় তাহলে সাধারণ ফাউন্ডেশন আর কম্প্যাক্ট-ই আপনার জন্য সঠিক।
ফাউন্ডেশন
এটি লিকুইড মেক-আপ বেস। এখন বাজারে স্কিন টোন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন পাওয়া যায়। এটা লাগানোর ফলে ত্বকের রঙে-সমতা রক্ষা হয়। আপনার ত্বকের থেকে এক শেড হালকা ফাউন্ডেশন হাতের তালুতে ঢেলে মধ্যমা দিয়ে সমস্ত মুখে এর ডট্স লাগান। তারপর স্পঞ্জ-এর সাহায্যে ব্লেন্ড করে নিন। নাক, গলা, চিবুক, কপাল– সব জায়গায় সমানভাবে ফাউন্ডেশন লাগান, না হলে তা বড়ো বিসদৃশ দেখায়। ফাউন্ডেশন সেট করার জন্য মুখে কম্প্যাক্ট লাগান।
কম্প্যাক্ট
এটা ফাউন্ডেশন ও পাউডারের মিশ্রণ। কোথাও চটজলদি বেরোতে হলে কম্প্যাক্ট-ই সবচেয়ে ভালো। এটা পাফের সাহায্যেই মুখে লাগিয়ে নেওয়া যায়। স্কিনের রং অনুযায়ী শুধু সঠিক কম্প্যাক্ট-টি বেছে নেওয়া জরুরি। টাচ আপ করার জন্যও কম্প্যাক্ট অপরিহার্য।
পার্টি মেক-আপ
পার্টি মেক-আপ-এর জন্য এখন ভীষণ ইন স্টুডিয়ো ফিক্স, ডার্মা ফাউন্ডেশন, মুজ এবং সুফলে।
স্টুডিয়ো ফিক্স
এটি পাউডার ও ফাউন্ডেশনের কম্বাইন্ড সলিউশন। এটি লাগানোর সময় ভেজা ভেজা থাকে কিন্তু লাগানোর পর মুখের ত্বকে শুকিয়ে যায়। এটা স্কিনের উপর হালকা লেয়ারে থাকলেও পূর্ণ সুরক্ষা দেয় এবং দীর্ঘক্ষণ থাকে।
ডার্মা ফাউন্ডেশন
এটি স্টিক ফাউন্ডেশন তাই একটু শক্ত ধরনের। এটি কন্সিলার ও বেস দুটি কাজেই লাগে। মুখের দাগ ছোপ ঢাকতে, চোখের নীচের কালচে ভাব ঢাকতে এটি আদর্শ। পার্টিতে গ্ল্যামারাস লুক ও ফ্ল-লেস মেক-আপ-এর জন্য ডার্মা ফাউন্ডেশন-ই আদর্শ।