চোখ প্রকৃতির অমূল্য দান। যেটা দিয়ে আমরা পৃথিবীর রূপ-রস-আদি উপভোগ করি। কিন্তু আজকালকার ব্যস্ত জীবনশৈলীর কারণে হওয়া স্ট্রেস– মন তো বটেই শরীর এবং ত্বকের উপরেও ছাপ ফেলে যায়। অতিরিক্ত স্ট্রেস-এর কারণে তখন নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার মধ্যে অন্যতম ডার্ক সার্কল। এর জন্য জরুরি কিছু ট্রিটমেন্ট। যেগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

এএইচএ ক্রিম

এএইচএ ক্রিম অর্থাৎ আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ক্রিম, যেটি ফলের রস থেকে নিঃসৃত করা অ্যাসিড। এটি ত্বকে দ্রুতমাত্রায় কোলাজেন-এর সৃষ্টি করে ত্বককে বলিরেখার হাত থেকে বাঁচায় এবং চোখের নীচে কালোদাগও দূর করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই ক্রিমের ব্যবহারে এক্সফোলিয়েশন আর নতুন কোশ তৈরির প্রক্রিয়া দ্রতগতিতে শুরু হয়ে যায়, ফলে ত্বক হয়ে ওঠে সজীব। রোজ রাত্রে শোওয়ার আগে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে চোখের চারপাশে সামান্য এএইচএ ক্রিম লাগিয়ে, হালকা মাসাজ করুন। কয়েক দিনের ব্যবহারেই তফাতটা বুঝতে পারবেন। খেয়াল রাখবেন ক্রিম যেন চোখে না চলে যায়।

কোলাজেন সিরাম

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে কোলাজেন তৈরির মাত্রা কমে যায়, যার কারণে চোখের নীচের ত্বকে বলিরেখার মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরকম সমস্যার সম্মুখীন হলে কোলাজেন সিরাম নিয়মিত ব্যবহার করুন। এটি স্কিন রিপেয়ারের পাশাপাশি ত্বককে প্রোটেক্টও করবে। কোলাজেন সিরাম কনসেন্ট্রেটেড ফর্মে থাকার জন্য, খুব কম পরিমাণে ব্যবহারে করতে হয়। সকালে হালকা স্ক্রাবের পর-ই এটি ব্যবহার করুন।

বায়োপট্রন ট্রিটমেন্ট

এটি একটি ইয়েলো লেজার ট্রিটমেন্ট, যেটি দু-চোখের উপরই ৮-১০ মিনিট দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত বলা হয়ে থাকে লেজার চোখের জন্য ক্ষতিকারক, তবে এটি চোখের কোনও ক্ষতিসাধন করে না, বরং সুফলদায়ী। এটি ত্বককে রিজুভিনেট করে, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে চোখের নীচের ফোলাভাবও কমায়। তাছাড়া পিগমেন্টেশন কম করে, ফলে চোখের নীচের কালোভাবও হালকা হতে থাকে।

সানগ্লাসেজ

গগল্স শুধু আপনাকে স্টাইলিশ-ই বানায় না, এটি আপনার চোখ এবং তার চারপাশের ত্বককেও সুরক্ষা প্রদান করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকে বলিরেখার সৃষ্টি হয় এবং ত্বক ট্যান্ হয়ে যায়। এর থেকে বাঁচতে তাই রোদে বেরোনোর সময় অবশ্যই সানগ্লাস পরুন।

আন্ডার আই পিলিং ট্রিটমেন্ট

ডার্ক সার্কল কম করার জন্য এটি সবথেকে সুফলদায়ী ট্রিটমেন্ট। এর মাধ্যমে মাইল্ড কেমিক্যাল পিলিং করা হয়। সবার প্রথমে চোখের চারপাশে আরজি পিল ব্যবহার করা হয়। তার ১০ মিনিট পর নিউট্রালাইজার দিয়ে নিউট্রালাইজ করতে হয়। প্রতি ১০ দিন অন্তর ৬টি সিটিং দেওয়া হয়ে থাকে, যাতে ডার্ক সার্কল অনেক হালকা হয়ে যায়।

অরেঞ্জ অয়েল

ভিটামিন সি-যুক্ত অরেঞ্জ অয়েল ড্যামেজ সেল্স-এর রিপেয়ার করে এজিং প্রক্রিয়ার গতি রোধ করে। ১ চামচ বাদাম তেলের সঙ্গে ৫ ফোঁটা অরেঞ্জ অয়েল মিক্স করে চোখের চারপাশে অনামিকা আঙুল দিয়ে হালকা মাসাজ করুন। এর নিয়মিত ব্যবহারে চোখের কালোভাব দূর হয়।

কোলাজেন মাস্ক

কোলাজেন মাস্ক ত্বকের শৈথিল্য রোধ করে আপনাকে ইয়ং থাকতে সাহায্য করে। এই মাস্ক যে-কোনও কসমেটিক ক্লিনিক থেকেই লাগাতে পারেন। লেজারের সঙ্গে এই মাস্ক প্রয়োগ করলে এর কার্যকারিতা অনেক বেশি লাভদায়ক হবে। লেজার ত্বকের মৃত সেলসগুলি উদ্দীপিত করে বলিরেখা এবং কালো ছোপ কমাতে সাহায্য করে।

ব্যালেন্স্ড ডায়েট

নিজের চোখকে সুস্থ রাখতে হলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-এ, সি এবং ই যুক্ত আহার, যেমন– পালংশাক, মাছ, আখরোট, লেবু, বাদাম, খাদ্যের তালিকায় রাখুন। ভিটামিন এ-এর সেবনে চোখের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে, সি-তে কালোভাব দূর হয় এবং ই চোখের পুষ্টি জোগায়, যেটি বলিরেখা হতে দেয় না সেই রকমই ওমেগা ও ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের ইলাস্টিসিটি মেনটেন করে।

ব্যায়াম

চোখের উপর পড়া ডেলি লাইফের স্ট্রেস কমাতে ব্যায়াম হল নির্ভরযোগ্য উপাচার। নিয়মিত ব্যায়াম করলে চোখের চারপাশের মাংসপেশি মজবুত হয়। এছাড়াও ব্যায়াম দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। রোজ কাজের মাঝে একটু সময় দিলে আপনিও আপনার চোখ সুস্থ রাখতে পারবেন। মাথা সোজা রেখে চোখের মণিকে ৫-৬ বার উপর-নীচে আর ডানে-বামে ঘোরান। এরই মাঝে মাঝে হালকা হাতে চোখ চেপে ধরুন। এতে চোখের পেশি শক্ত হবে।

হোম-মেড ট্রিটমেন্ট

বয়সের কারণ তো বটেই, তবে শুষ্ক ত্বকও বলিরেখা হওয়ার একটা বড়ো কারণ। এর থেকে বাঁচতে ঈষদুষ্ণ দুধে পাউরুটির টুকরো দিয়ে ফুলিয়ে নিন। এবার এতে কয়েকফোঁটা বাদাম তেল আর অ্যালোভেরার এক্সট্র্যাক্ট মিশিয়ে প্যাক বানান। এই মিশ্রণটিকে একটি কাপড়ে বেঁধে চোখের উপর মিনিট ১৫ রাখুন। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন এই প্যাক ব্যবহার করতে পারলে কিছুদিনের মধ্যেই বলিরেখা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...