শিশু-কিশোরদেরও ডায়াবেটিস হতে পারে, এটা আগে ভাবাও হতো না। কিন্তু এখন অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, বর্তমানে অনেক বাচ্চা-ই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর যেহেতু বাচ্চারা তাদের শারীরিক অসুবিধার কথা ঠিক মতো বলে বোঝাতে পারে না, তাই রোগ সেক্ষেত্রে অধরাই থেকে যায় এবং একসময় ভয়াবহ রূপ নেয়। তাই সারা বিশ্বজুড়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যাতে কিছু উপসর্গ দেখে রোগটি সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারেন এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে গিয়ে বাচ্চার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা তা জানতেও পারেন। বিশিষ্ট পেডিয়াট্রিশিয়ান ডা.সুব্রত দের কাছ থেকে শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে আরও বিশদে জানা গেল সম্প্রতি।

কোন বয়সের বাচ্চারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে?

এক থেকে ষোলো বছর বয়সি শিশু-কিশোররা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে। এদের সাধারণত টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক কিশোর-কিশোরী। এদের বয়স কুড়ির মধ্যে।

শিশু-কিশোররা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় কী কারণে?

ঠিক কী কারণে শিশু-কিশোররা ডায়াবেটিসে (বিশেষ করে টাইপ ওয়ান) আক্রান্ত হয়, তা এখনও জানা যায়নি। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এর সঠিক কারণ খুঁজে বের করার জন্য। তবে এটা বলা যায় যে, ডায়াবেটিস হল- এনার্জি মেটাবলিজম ডিসঅর্ডার।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে কীভাবে বিঘ্নিত হয় শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ?

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে, অর্থাৎ রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে রক্তরস কমতে থাকে। ফলে রক্ত ধীরে ধীরে ঘন হতে থাকে এবং রক্তের স্বাভবিক ধারা (ব্লাড-ফ্লো) ব্যাহত হয়। আর রক্ত সঞ্চালন যদি স্বাভাবিক না থাকে, তাহলে হৃদযন্ত্র এবং কিডনি বিকল হতে থাকে। এরফলে, অগ্নাশয়ে ইনসুলিন উৎপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। আর ইনসুলিন ঠিক ভাবে উৎপন্ন না হলে, ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না এবং গ্লুকোজ শক্তিতে রূপান্তরিত হবে না।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী?

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে এক নয়, একাধিক লক্ষণ থেকে আন্দাজ করতে পারবেন।

প্রাথমিক লক্ষণ

  • ঘন-ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • জল-পিপাসা বেড়ে যাওয়া
  • মুখ এবং গলা শুকিয়ে ওঠা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • খুব ক্লান্ত এবং দুর্বল অনুভব করা।

গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ

বাচ্চার গায়ে র‌্যাশ বেরোলে তা কোনও ওষুধেও সারে না।

গুরুতর লক্ষণ

  • পেটে অসহ্য যন্ত্রণা
  • সবসময় বমিবমি ভাব
  • প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • সবসময় ঘুমঘুম ভাব (ঝিমুনি)

চিকিৎসা

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসঃ সারা পৃথিবীতে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায় একইরকম ভাবে করা হয়।

  • দিনের বিভিন্ন সময়ে ব্লাড সুগার মনিটরিং করা হয়
  • খাদ্যতালিকা তৈরি করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী কী খাবে আর কী খাবে না তা ঠিক করে দেওয়া হয়
  • ইনসুলিন ইনজেকশান দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। প্রয়োজনে, ইনসুলিন-এর ডোজ বাড়ানো কমানো হয়।

টাইপ টু ডায়াবেটিসঃ যারা টাইপ টু ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত, তাদেরকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া ছাড়াও, ঝুঁকি এড়াতে লাইফস্টাইল চেঞ্জ করানো হয়। যেমন–

  • ফাস্ট ফুড খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া
  • সুগার কন্ট্রোলে রাখা যাবে এমন শাকসবজি খেতে দেওয়া
  • সকাল-সন্ধে ঘাসের উপর খালি পায়ে অন্তত তিরিশ মিনিট হাঁটানো
  • সঠিক মাত্রায় (অন্তত আট ঘণ্টা) ঘুমোনো।

জরুরি পরামর্শ

  • প্রতিদিন সঠিক সময়ে খেতে হবে, খালি পেটে থাকা যাবে না
  • সুগার-ফ্রি বিভিন্নরকম খাবার খেতে হবে
  • কাচা নুন খাওয়া বন্ধ করতে হবে
  • শরীরের মেদ কমাতে হবে
  • কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেতে হবে
  • চর্বিজাতীয় কুকিং অয়েল ব্যবহার বন্ধ কতে হবে
  • ২৫ থেকে ৩৫ গ্রাম ফাইবারজাতীয় খাবার খেতে হবে দৈনিক
  • প্রতিদিন অন্তত দু’রকম ফল খেতে হবে

• ভাজাভুজি খাওয়া কমাতে হবে কিংবা বন্ধ করতে হবে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...