তারুণ্যে ভরপুর সেগুনগাছগুলো অল্প বাতাসেই বেশ মাথা নাড়ায়। মেন রোডের ধারে বাড়ি বলে দূষণের ছাপ বাড়ির গায়ে পড়েছে। সেগুনগাছগুলোর পাতার উপরেও। কর্পোরেশনের জল ইদানীং মানে কয়েক বছর হল চালু হয়েছে। সে জল নিতে হলে ছ’খানা গাছের মাঝবরাবর হেঁটে যেতে হয়। গাছগুলোর শিকড় এখনও পোক্ত নয়। মোটে পোক্ত নয়, বলতে গেলে কচি-ই। পাথুরে শক্তমাটি ভেদ করে মাটির গভীরে যেতে সময় চাই। অথচ কর্পোরেশনের জল এখন ঘরে ঘরে। দু’দিন পর পর রাস্তা ফুটো করে পাইপ বসে যায়। ঘরে পাইপ ঢোকা মানে আর রাস্তার কলে লাইন দিতে হয় না।

মনোজিৎ ভেবেছিল ওসব ঝামেলায় যাবে না। কুয়ো আছে। ভাবনা কী? গ্রুপ ডি-তে চাকরি করেও রিটায়ারের সময় দেদার টাকা এসেছে হাতে। তো, এত টাকা কি সব ভবিষ্যতের ভাঁড়ে জমা হবে। বর্তমান যদি হাঁপায়, ভবিষ্যৎ আসবে কী করে? সবকালেই টাকার খেলা চলে। ছেলে কুণাল বুদ্ধি দেয় বাপকে। মাধ্যমিক পাস কুণালের মাথায় বুদ্ধি গজগজ। কুয়ো এখন সমাজে অচল। পরিশ্রুত জল না খেলে সোসাইটিতে মান থাকে না। সোসাইটি এখানে পায়েল। কুণালের ধ্যান-জ্ঞান। সুতরাং বাড়িতে কর্পোরেশনের জল এল। দুটো সেগুনের মাঝবরাবর পাইপ ঢুকে গেল। মনোজিৎ স্নেহভরে সেগুনদের দ্যাখে। একদিন এরা মহীরুহ হবে। এত বড়ো বড়ো পাতা। চমৎকার বাতাস দেবে। জল এসেও স্বস্তি হয়েছে। ছেলেটা খুশি। মনোজিতের হাতে এখনও প্রচুর পয়সা।

শ্যালক বিবস্বান এসেছে জলপাইগুড়ির আদরপাড়া থেকে। এসেছে চকচকে অল্টো চেপে। গাড়ির হর্নে অ্যাম্বুলেন্সের ধামাকা। দেখেশুনে কুণালের মাথা খারাপ। মাতুলের প্রশ্রয় মিশে গেল এর সঙ্গে। জামাইবাবুকে আড়ালে ডেকে নিল বিবস্বান। সানগ্লাস খুলে পকেটে ঢোকাচ্ছে ও। দেখে খাপে ঢাকা ছুরি ভেবে চমকে উঠেছিল মনোজিৎ। দিনকাল ভালো নয়। স্বজনকেও ভয় হয়। হাতে পয়সা এসেছে কিনা!

‘বুদ্ধি খরচা করো মনোজিৎদা। সঙ্গে টাকাও। ভবিষ্যৎ তোমার ছেলে। ভয় কী?’ বিবস্বানের ধূর্ত চোখে বদবুদ্ধির পটাকা ফোটে। শ্যালককে খুব একটা বিশ্বাস করে না মনোজিৎ। নিজের লোককেই ভয় বেশি। কারণ, ঘরের খবর সে-ই জানে বেশি, দুর্বলতার সুযোগও সে-ই নেবে বেশি। ইদানীং কুণালের মন উড়ু উড়ু। পকেটে দামি মোবাইল। দামি বাইক। অ্যান্টি ড্যানড্রফ শ্যাম্পুর চুলে হাইলাইট। হাসি-কাশি সবই চেঞ্জ হয়ে গেছে ছেলের। মামার দেখাদেখি এখন আবার অল্টো না চায়।

জামাইকে আনমনা হতে দেখে সাবধান হল বিবস্বান। মেপে পা ফেলতে হবে। বিবস্বানের পরিচিত মানে সুপরিচিত সোমেশ দাসের মেয়েকে ছেলের বউ করে মনোজিতের ঘরে ঢোকাতে হবে। এ কাজটা পারলে সোমেশের কাউন্সিলার ভাই দীপেন দাসের নেকনজর পাবে বিবস্বান। নজরটা ঠিকঠাক পেলে ঠিকেদারির ব্যাবসা জমে ক্ষীর হয়ে যাবে। সেই ক্ষীরে কিশমিশ আর এলাচের গন্ধ। লোকবলঅলা সংসারে অর্থবল না থাকায় কাজু-টাজু অনেক দূরের বস্তু ছিল। ইদানীং অবস্থা পালটেছে। তাই মাঝেসাজে রূপশ্রী সিনেমা হলের পাশের মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে ছানা আনে ছেলেদের জন্য। আপেল আনে বিধান মার্কেট থেকে। তাও শালা দাম কম নাকি?

‘ছেলেকে কিছু তো করে দিতে হবে। মার্কেট প্লেসে একটা স্টেশনারি দোকান দিয়ে দিই?’ মনোজিৎ শ্যালকের চতুর পরামর্শ চায়। শ্যালকটাকে খুব বিশ্বাস করে না মনোজিৎ। বিবস্বান এত টাকা পায় কোথায়? জাল নোট-ফোটের কারবার করে না তো!

‘তুমি জানো মনোজিৎদা, মার্কেট প্লেসে অ্যাডভান্স কত দিতে হয়? বাড়ির সামনের সেগুন কেটে ফ্যালো। দোকান লাগিয়ে দাও। ফাইন।’

‘সেগুন?’ অবাক হয় মনোজিৎ, ‘ওতো সবে বাড়ছে। শিকড় নড়বড়ে। কেটে কী লাভ? তাছাড়া শেকড় মাটির ভেতরে যাবে, তবেই শক্ত হবে। পোক্ত হবে!’ মনোজিৎ বিড়বিড় করে।

‘ধুর! মাটি শক্ত হয়ে উঠেছে। শেকড় বেশি গভীরে যাবে কী করে? আর মাটি কোথায়? সবই পাথর।’ বিবস্বান শব্দ না করে হাসতে থাকে– ‘পড়াশোনা ছেড়ে না দিলে ও একদিন অফিসার হতে পারত। স্টেশনারি দোকান ওকে মানায় না! এসটিডি বুথ খুলে দাও। সঙ্গে ফিল্মের সিডি, মিউজিক সিডি, মোবাইলের হ্যান্ডসেট… খুব চলবে।’ বিবস্বান সন্তর্পণে মূল ঘটনার দিকে এগোয়– ‘এখন শিলিগুড়ি জমে উঠেছে। নানা ধরনের লোক ভিড় জমাচ্ছে এখানে। আরে জামাইবাবু, তুমি তো পারলে না! ছেলেকে টাকা ধরতে শেখাও। এরপর বিয়ে আছে, ভালো মেয়ে চাই, তাই না? কচি সেগুনই বেচে দাও। শেকড়বাকড় বেশি গভীরে না যাওয়াই ভালো, বুঝলে?’

শ্যালকের ইঙ্গিতমতো শোরুম খুলে দিয়েছে মনোজিৎ। ‘দোকান’ শব্দটা পছন্দ নয় কুণালের। আসলে ইদানীং, অনেক কিছুই ঠিকঠাক বোধগম্য হচ্ছে না। শিলিগুড়ির জল বাতাসে কীরকম একটা গন্ধ ভাসছে। শপিং মল, বিগবাজার, সিনেম্যাক্সে বিদেশি ছবি…। সানি আর বাসব সেদিন কোন হোটেলে নাকি ফ্যাশন শো দেখতে গেছিল। একটা মডেল নাকি দীপিকার মতো দেখতে। দীপিকা পাড়ুকোন। পায়েলও তো দীপিকার মতো দেখতে। ওরও খুব মডেলিং-এর শখ। লোকাল কেবল চ্যানেলে অ্যাংকারিং করে। পরিচিত মুখগুলো কী করে যেন ক্যামেরার মুখ হয়ে উঠেছে। মাথাটা পাগল পাগল ঠেকে কুণালের। অনেক টাকা চাই। ইদানীং পায়েল বড্ড উড়ু উড়ু করছে!

বিবস্বান জানতো এমনটাই হয়ে থাকে। সময়টা বড্ড উদ্ভ্রান্ত। বয়সটাও। কী করবে কেন করবে বুঝতে পারছে না এরা। হঠাৎ করে মোটা টাকা হাতে এসে যাওয়ায় টলমল করছে দিদির পরিবার। বর্ধমান রোডে বিরিয়ানি খাওয়াতে নিয়ে গেল ভাগ্নেকে। সেখানে বসে জীবনের মূল অর্থ, অর্থ বিনা অনর্থ সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান দিল বিবস্বান মামা। বিরিয়ানির পাশাপাশি মামার কথা গিলছিল ভাগ্নে। শেষে তুরুপের তাস বের করল বিবস্বান– ‘বিয়ে কর। একটা বিয়ে তোকে করতে হবে।’

‘সে তো করব। আগে দাঁড়িয়ে নিই!’ কুণাল মৌরি চিবুচ্ছিল।

‘কবে? বুথ আর সিডির শোরুম তাড়াতাড়ি দাঁড়াতে দেবে? টাকা চটপট ধরতে চাইলে ডিসিশনও চটপট নিবি। দু’হাত ভরে পাবি, এমন একটা বিয়ে চাই। সঙ্গে পাওয়ারফুল শ্বশুর।’

কুণাল ভাবছিল পায়েলের কথা। পায়েল কোনওদিন কি মডেল হতে পারবে? ওর বাবা প্রাইমারি স্কুলের রিটায়ার্ড মাস্টারমশাই। কখনও তোবড়ানো স্কুটি চেপে নিউ সিনেমার পেছনে শেষবেলায় ঝড়তি পড়তির বাজার করে। লোকটা কুণালকে কতটা সাপোর্ট দেবে? কিন্তু পায়েল? দীপিকার মতো টোল ফেলে হাসে। পায়েলকে ছেড়ে দেবে? দিয়ে? টাকার বান্ডিল নিয়ে কে আর আসবে কুণালকে শাদি করতে?

‘আমার উপর ছেড়ে দে! তোর মত আছে মানে বাড়িতে সানাই বাজল বলে। রাজ ক্যাটারারকে রেডি থাকতে বলিস।’ হাসতে থাকে বিবস্বান। কুণাল কিন্তু কিন্তু করে– ‘আমার একটা রিলেশন আছে। এখন… পয়সা নেই তাদের। কী করা উচিত?’ কুণাল মোবাইল ফোনে পায়েলের হাসিমুখ দ্যাখে– দেখতে ফাইন। দারুণ নাচে। হিন্দি ডান্স। ‘ধুর! বলে দে শোরুম চলছে না! বাবার হাতে টাকা এসেছে সেকথা বলেছিস নাকি? খবরদার! শোন্, প্রেম করবি টাকার সঙ্গে। বাকি সব ফালতু। জীবনে টাকা থাকলে সব থাকে কুণাল, টাকা নেই মানে, তুমি ফালতু।’

‘বাবার হাতে টাকা কোথায়? আমার শোরুম, জলের লাইন, ফ্রিজ, কুলার, ডাইনিং টেবিল, মায়ের সোনার বালা, জামাইবাবুর জন্য সোনার চেন, দিদির ঝুমকো… মেঝেতে টাইলস…! কম লাগল?’ কুণাল হতাশ– ‘রিটায়ার করতে করতেই টাকা হাওয়া।’

‘শোন, তাহলে এখনই তোর টাকার দরকার। প্রথম কাজ হল প্রেমিকাকে ছেঁটে দে!’

প্রায় চমকেই উঠল কুণাল। কত সহজে বলে ফেলল মামা কথাটা। কী ভাববে পায়েল? সম্পর্কটা টেনে চলেছিল কুণালই। অথচ এখন ও-ই পিছিয়ে যাচ্ছে! অথচ কাজটা করতে হবে! মামা ভুল বলেনি কিছু! পায়েলও নাচতে চায়। বিখ্যাত হতে চায়। বিয়ে করতে চায় না। তবু… একটা প্রেম প্রেম ব্যাপার তো ছিল। কিন্তু মামা যা বলে, তা ঠিকই!

বিকেলে হুক্বাবারের পরের গলিতে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শেখানো কথা উগরে দেয় কুণাল। অবাক চোখে ওকে দেখল পায়েল। অবশ্য খুশিই হল। কত রঙিন দুনিয়ার হাতছানি চারধারে। রিয়ালিটি শো-এ একটা সুযোগ করে দেবে সুরযদা। এখন কেউ কুণালের সঙ্গে প্রেম করে?

পায়েলকে ছেঁটে দিয়ে ফিরে আসতে আসতে শাহরুখের দেবদাসের ডায়লগ বলতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু মনেই করতে পারল না। সময়মতো কিচ্ছু মনে পড়ে না। অথচ মনটা খারাপ খারাপ লাগছে যেন। পাঁচদিন পরে কাউন্সিলারের ভাইয়ের মেয়েকে দেখতে গেল ও। মনোজিৎ চুপচাপ মুখবন্ধ করে চশমা পরে বসে আছে। বড়োলোকের উচ্চ মাধ্যমিক পাস মেয়ের জন্য কুণাল কেন? কুণাল কি কিছু আন্দাজও করতে পারে না! মেয়েটাই বা রাজি হল কেন কুণালকে বিয়ে করতে? বাবার প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না কুণাল। পারে না বলেই সারা বিকেল সেভকে গিয়ে কাটাল একা একা। সন্ধে নাগাদ বাড়ি ফিরছিল স্পোর্টিং ক্লাবের পাশ দিয়ে। পাত্রীর বাবা সোমেশ দাসের মুখোমুখি হয়ে পড়ল। হাসিমুখে পথ আটকাল দাস– ‘কোতায় যাওয়া হচ্চে?’ কুণাল দেখল সোমেশ দাসের হাতে গাড়ির চাবি। আই-টেন গাড়ি। এইসব গাড়ির স্বপ্ন কতদিন ধরেই দেখছে কুণাল!

‘চলো। আজ অঙ্কিতার বার্থ ডে। তোমারই প্রেজেন্ট থাকার কথা আজ।’ ‘কিন্তু’ কুণাল তো তো করে। বার্থডে মানে গিফটের প্রশ্ন আসছে। সোমেশ দাস টিপটিপে হাসিমুখে সমাধানের রাস্তা বাতলায়– ‘জীবনে হাজারবার অঙ্কিতা মানে তোমার ওয়াইফের বার্থডে আসবে। অনেক সময় পাবে গিফট্ দেওয়ার। নাউ, লেটস্ গো!’

যাব কি যাব না ভেবে ভেবে কুল পায় না কুণাল। মামা বিবস্বান বিবেকের মতো পাশে থাকে ভাগ্নের– ‘টাকা না থাকলে কেউ পাত্তা দেয় না!’

মাথা থেকে সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে কুণাল। আমি ঠাকুর হাবলা গোবলা। যা করাও তাই করি– ভাব নিয়ে সোমেশ দাসের গাড়ির পেছন ধরল ওর বাইক। হাজার বছর ধরে জন্মদিন উপভোগ করার মতো ভাগ্যবতী এক আয়ুষ্মতীর একটি জন্মদিনকে সমৃদ্ধ করতে ছুটছিল ও। এখন পায়েল অতীতমাত্র। সামনে অন্য নারী যার হাত ধরে কুণাল ছুটবে। চারধারে টাকা উড়বে। সব টাকা ধরবে কুণাল। হাত ভরে টাকা তুলবে ঘরে। পাঁচজনের সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াবে। খাওয়াদাওয়ার জম্পেশ ব্যবস্থা ছিল। সোমেশের মেল মারফত আমন্ত্রণ জুটেছে বিবস্বান আর মনোজিতের। তেতলার ব্যালকনিতে অঙ্কিতার সঙ্গে বসে প্রাক-অনুরাগপর্ব সেরে নিচ্ছিল কুণাল। ওদিকে বিবস্বান ব্যাবসায়িক কথাবার্তা পাকা করে নিচ্ছিল। ‘দাদাকে বলে মোটা ঠিকেদারি দিতে হবে। নির্ভেজাল জামাই দিচ্ছি! সোনার চাকা। গড়গড় ছুটবে। ঝলক দেখবেন কেবল!’

সোমেশ টিপটিপ হাসে, ‘আমিও কম দিচ্ছি না। জামাইকে তুলব। সঙ্গে তার মামাকেও!’

তেরিয়া মেজাজ সামলেও অস্ত্র দেখাতে বাধ্য হল বিবস্বান, ‘তুলব মানে? তুলছি তো আমি! তোমার মেয়ের দুটো কেচ্ছা হজম করেছি! থার্ড হ্যান্ড মাল! নার্সিংহোমে গেছিল যেন কবে?’ নীচু স্বর বিবস্বানের। ব্যাবসার কথা! চ্যাঁচাতে নেই।

সুশৃঙ্খল ভাবে আলোচনাচক্র শেষ হল একসময়। জামাইবাবুকে নিয়ে অল্টোতে উঠে বসে বিবস্বান।

‘সব ঠিক আছে তো মনোজিৎদা? পাত্রী… বাবা… মা… বাড়িঘর…’

‘হ্যাঁ! লোক ভালো!’ মনোজিৎ বিজ্ঞের ভান করে। এছাড়া উপায় কি! দিনকাল হুড়মুড় করে পালটাচ্ছে। তার জীবনের সঙ্গে তার ছেলের জীবনের কত পার্থক্য। পাত্রী দেখা নিয়ে কত রোমাঞ্চ ছিল সেই সময়ে। সেই রোমাঞ্চ বিবাহিত জীবনেও শাল-সেগুনের শেকড়ের মতো গেড়ে বসত। এখনও ইচ্ছে করলে বউ-এর লাজুক মুখটা মনে করতে পারে। প্রথমদিন দেখা হওয়ার সেই লাজুক মুখ। অথচ কুণালের কোনও মানসিক বৈকল্য নেই। তবে ছেলের পেছনে ভারীসারি শ্বশুর থাকলে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা নেই। কিন্তু ভরসাই বা কি? মেয়েটা কেমন হবে…! তাছাড়া, সারা বাড়ি জুড়ে বড্ড বদ টাকার গল্প!

একটু আগে হবু শ্বশুরের গাড়ির পেছনে চলছিল, এবার মামার গাড়ির পেছনে চলছে কুণালের বাইক। অল্প অল্প বাতাস দিচ্ছে। আরাম হওয়ার কথা। কুণালের শীত করছিল। নিজেকে গরম রাখতে ছোটে ও। দেখে মনে হচ্ছে বাইকটা গাড়িটাকে ছুঁতে চাইছে। খুব শিগগির ওরও গাড়ি হবে। বাকি সব ক্রমান্বয়ে আসবে। প্রাপ্তির হাজার সম্ভাবনার মধ্যেও এমন শূন্যতা কেন চারধারে! বোধহয় থমকে গেছিল কুণাল। বিবস্বানের মুখ গাড়ির জানলায়– ‘কী হল? তাড়াতাড়ি আয়! কাল আবার কীসের বনধ্! অনেক কাজ! আয়।’

সেই অমোঘ আহ্বানকে উপেক্ষা করতে পারে না কুণাল। কার্গোর ছ’টা পকেটের একটা থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে। সামনে নতুন জীবন। গতস্য শোচনা নাস্তি। পায়েলের ছবিটা ডিলিট করতে করতে বিড়বিড় করে কুণাল, ‘ধুর! প্রেম করে কী লাভ? বেকার সময় নষ্ট। শ্বশুর বড়লোক হলে তবু কথা ছিল। না হলে কী লাভ?’

এলওভিই লাভ এখন হিসেবের দাঁড়িপাল্লায়। কিস্যু করার নেই কুণালদের। এখন শাল-সেগুনের শেকড় পোক্ত হওয়ার সময় পায় না। রোমাঞ্চ টোমাঞ্চ সেইরকম। পালটে যাচ্ছে পরিবেশ। পালটে যাচ্ছে মানুষ। চারধারে জাল জুয়াচুরি। কোথায় পৌঁছোতে চায় মানুষ, তারা নিজেও জানে না! সময়টা বড্ড উদ্ভ্রান্ত। ঠিকই ধরেছে বিবস্বান। মাটি শক্ত হয়ে উঠেছে। শেকড় এখন আর বেশি গভীরে যায় না। অল্পেই শুকিয়ে যায়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...