মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন, তাই একজন সুস্থ সবল মা-ই পারেন একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে। এই জন্য সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, মায়ের উচিত অন্তত ছয় মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া। এসময় থেকেই পুষ্টিকর ও সুষম খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখা উচিত মা যদি অপুষ্টিতে ভোগেন, তাহলে গর্ভের সন্তানটিও প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে, যা তার মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যহত করবে।
তাই প্রেগন্যান্সির গোড়া থেকেই পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করুন। খাবারটি যেন হয় সুষম অর্থাৎ, শর্করা, আমিষ, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ইত্যাদি পর্যাপ্ত মাত্রায় থাকে।খাদ্য গ্রহনের সময় তিনবেলা থেকে বাড়িয়ে পাঁচবেলা করুন।
মাতৃত্বকালীন ডায়েট
- প্রাতরাশে খান দু’টো ছোটো হাতরুটি, ছোটো একবাটি তরকারি আর একটা ডিম। অথবা, অল্প দুধ দিয়ে বড়ো চামচের চার চামচ সিরিয়াল, আধখানা আপেল, স্ট্রবেরি আর একটা ডিম। আরও দু’টো অপশন হল দু’টো পরোটা-তরকারি আর তিন চামচ ছানা অথবা মাখন দিয়ে দু’টো টোস্ট, একটা ডিম এবং কলা।
একটু বেলার সময় ফল খাওয়া জরুরি৷ আপেল, বেদানা, নাশপাতি বা যেকোনও সিজনাল ফ্রুটস খেতে পারেন৷
- দুপুরে খান দু’কাপ ভাত বা দু’টো রুটি, একবাটি ডাল, একবাটি তরকারি, দু’পিস মাছ বা চিকেন বা মাটন (১৫০-২০০ গ্রাম)। দ্বিতীয় অপশন ভাত বা রুটির সঙ্গে একবাটি সবজি, একবাটি ছানার তরকারি আর রায়তা।
বিকেলে খান এক গ্লাস দুধ বা দু’টো ছানার সন্দেশ।
- সন্ধেবেলা নিন মুড়ি-ছোলা-বাদাম, চিঁড়েভাজা-বাদাম কিংবা অঙ্কুরিত ছোলা-আলুর চাট, বা দু’টো চিজটোস্ট৷
- ডিনারে খেতে পারেন দু’কাপ ভাত বা দু’টো রুটির সঙ্গে হালকা একবাটি তরকারি আর মাছ বা মুরগির স্টু বা ১৫০ গ্রাম মাটন । বিকল্পে খেতে পারেন স্যুপ, দু’টো টোস্ট, সেদ্ধ সবজি আর পুডিং।
খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ ছাড়াও, ডাক্তাররা হবু মায়েদের এই সময় আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ফলিক এসিড ইত্যাদি ট্যাবলেট গ্রহন করতে বলেন। এগুলোর মধ্যে ফলিক এসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি শিশুর মস্তিস্কের বিকাশে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা পালন করে।
কোন উপাদানের কী গুণ ?
- ফলিক অ্যাসিড:শিশুর মস্তিষ্ক এবং নিউরাল প্লেটের সঠিক গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়।
- আয়রন: শিশুর জন্য বাড়তি রক্তের জোগান দেবে।
- ভিটামিন ই:শরীর যাতে খাদ্য থেকে বেশিমাত্রায় আয়রণ গ্রহ করতে পারে, সে জন্য জরুরি।
- ক্যালশিয়াম: মা এবং শিশু, দু’জনেরই হাড় যাতে সবল হয়।
- ভিটামিন ডি: প্রি-টার্ম বার্থের আশঙ্কা এড়িয়ে চলার জন্য।
- ডিএইচএ: মস্তিষ্ক এবং চোখের সুস্থ গঠনের জন্য।
- ফসফরাস: সুস্থ কিডনি এবং সবল হাড়ের জন্য।
- আয়োডিন: শিশুর মস্তিষ্ক যাতে ঠিকভাবে গঠিত হয় (যেহেতু তার থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এখনও তৈরি হয়নি)।
- ক্লোলাইন: গর্ভস্থ ভ্রুণের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়।