আলেপ্পি স্টেশনে এসে পৌঁছালাম রাত দেড়টায়। পুরো স্টেশনটা একেবারে নিঝুম। রাউরকেল্লা থেকে ৪৯ ঘন্টার এই যাত্রা দীর্ঘতর হয়েছে ৫৪ ঘন্টায়– বিধবংসী সাইক্লোন ‘ফাইলিন’-এর কারণে ট্রেন অনেকটাই ঘুরপথে এসেছে।
পোজিওরাম বিচ রিসর্ট থেকে মিস্টার টিনো এসেছেন গাড়ি নিয়ে এই মাঝরাতে। লাগেজ গাড়ির ডিকিতে ঢুকিয়ে আমরা চড়ে বসলাম ইন্ডিগোতে। রাতের অন্ধকারের বুক চিরে গাড়ির হেডলাইট সামনের পথকে আলোকিত করে তুলল। নিস্তব্ধ, পরিষ্কার রাস্তায় কেরলের কটেজ স্টাইলের সুদৃশ্য বাড়িগুলিকে ছাড়িয়ে চলে এলাম থুম্পলির গ্রাম্য পরিবেশে। টিনো জানালেন, স্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে এই রিসর্ট বস্তুত সমুদ্রের ধারেই। গভীর রাতে রিসর্টে ঢোকার মুখেই শুনতে পেলাম আরব-সাগরের ঢেউ ভাঙার শব্দ। গাড়ি থেকে নেমে, ‘বিচ ভিউ কটেজ’-এর কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় এলাম এবং টিনোর পিছু পিছু এসে ঢুকলাম এক সুন্দর সাজানো ঘরে। হালকা আলোয় ঘরের ইন্টিরিয়র ডেকরেশনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম আমরা। টিনো বিদায় নিলেন ঘরের সবকিছু দেখিয়ে দিয়ে। আমরা পোশাক পরিবর্তন করে এই মাঝরাতে একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করলাম।
অভ্যেস মতো সকাল ৬-টাতেই ঘুম ভেঙে গেল। বিশাল কাচের জানলার পর্দা সরাতেই চমক– প্রায় ঢিল ছোড়া দূরত্বে অপরূপ আরব সাগরের অবিরাম ঢেউ ভাঙা। তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে, ক্যামেরা নিয়ে নীচে নেমে এলাম। এ কোথায় এসেছি! নানা ভঙ্গিমার নারকেল গাছগুলির মাঝে মাঝে কেরল স্টাইলের সুন্দর সুন্দর কটেজ। বহু প্রকার গাছ ও ক্রিপারস-এ সাজানো এই রিসর্ট। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম রিসর্টের প্রাইভেট বিচ্-এর দিকে। প্রথম সকালের নরম আলোয় সে যেন এক মায়াবী সৌন্দর্য! সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে নারকেল বীথিকার পায়ে। দেখি, ৩-৪ জন জেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত। জানলাম, পাশেই জেলেদের গ্রাম। কয়েকটা ফোটো তুলে ফিরে এলাম রিসর্টে। দেখি, চা-এর টেবিলে অপেক্ষা করছে পরিবারের সকলে। রিসর্টে অনাবিল প্রকৃতির মাঝে চা পান করতে বড়ো ভালো লাগছিল।
ব্যাকওয়াটার-এ ভেসে বেড়ানোর আগে আলেপ্পির সম্বন্ধে কিছু তথ্য ঝালিয়ে নেওয়া যাক। আলেপ্পি বা আলাপুঝা শহর কেরলের আলাপুঝা জেলার অন্তর্গত। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন কোট্টায়াম এবং কুইলন জেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল আলাপুঝা জেলা। ছবির মতো সুন্দর ক্যানাল, লেগুন, ব্যাকওয়াটার ও বিচ সমৃদ্ধ আলেপ্পিকে বলা হয় ‘পূর্বদেশের ভেনিস’। এই শহরে বেশ কয়েকটা দর্শনীয় মন্দির, চার্চ ও প্রাসাদ থাকলেও প্রধান আকর্ষণ অবশ্যই ব্যাকওয়াটার। আলেপ্পির এই ব্যাকওয়াটার কুমারাকোম ও কোচিনকে যুক্ত করেছে উত্তরে এবং কুইলনকে দক্ষিণে।
রোদ ঝলমলে সকাল। স্নান সেরে সকাল ৯টার মধ্যে সবাই চলে এলাম খাবার টেবিলে। মেনুতে ছিল ইডলি, দোসা ও চিকেন কারি (কেরল স্টাইল) এবং ব্রেড-বাটার-জ্যাম, পরে সুস্বাদু কফি। সকাল সাড়ে ৯টায় রিসর্টের ট্রাভেরায় উঠে পড়লাম। প্রথমে যাব কুট্টানাড-এর গ্রামাঞ্চলে, সেখান থেকে আলেপ্পির ব্যাকওয়াটারে হাউসবোট ক্রুজে। এখন আলাপুঝা-চাঙ্গানাসেরি রোড ধরে চলেছি আমরা। কুট্টানাড অঞ্চলে দেখি রাস্তার দুই পাশেই সমুদ্রতল থেকে নীচু ধানখেত জলে ডোবা। দিগন্তের নারকেল গাছগুলি এই অঞ্চলের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
ক্রমে এসে পৌঁছালাম কৃষক অধ্যুষিত এক গ্রামে। সকালের টিপিকাল গ্রামীণ ছবি, ভারতের বহু গ্রামেই যা দৃশ্যমান। এখান থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে গেলাম ব্যাকওয়াটার অঞ্চলের হাউসবোট স্ট্যান্ডে। দেখি, ৮-১০টা হাউসবোট রয়েছে তীর ঘেঁসে। সবচেয়ে সুন্দর ও নতুন হাউসবোট-টাই আমাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ঠিক বেলা ১১টায় বোট চলতে শুরু করল পম্বা নদী ধরে। একেবারে নতুন এই হাউসবোটটি বেশ আধুনিক ধরনের। ফ্রন্ট-ডেক স্টিলের রেলিং দিয়ে ঘেরা– সামনে হায়ার-এলিভেশন-এ চালকের আসন। বোট-এর দুই ধারে কাঠের ঘেরা গদিআঁটা বসার জায়গা, কমপক্ষে ২০ জনের জন্য। ডাইনিং প্লেস-এর পিছনের দেয়ালে বিরাট এলসিডি টিভি, তার সামনে ৮-১০ জনের উপযুক্ত ডাইনিং চেয়ার-টেবিল। ডাইনিং প্লেস-এর পিছনেই পর পর দুটি শোবার ঘর, কাঠের পালঙ্ক সমেত সুন্দরভাবে সাজানো– সঙ্গে পরিষ্কার, আধুনিক বাথরুম। বোটের পেছনের অংশে সুন্দর কিচেন, দুজন কর্মচারী রান্নায় ব্যস্ত।
আমরা হাউসবোট দেখে একেবারে মোহিত হয়ে গেলাম। এই হাউসবোটের নাম ‘জেনেসিস’, সপ্রতিভ চালক প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র। নদীর দুই পাশের দৃশ্য ভারি সুন্দর। পম্বা নদী থেকে কখন অন্য নদীতে এসে পড়েছি বুঝতেই পারিনি। আসলে, আলেপ্পির এই ব্যাকওয়াটার সমগ্র কেরল ব্যাকওয়াটার নেটওয়ার্ক-এরই একটি অংশ। আরব সাগরের সমান্তরাল অনেকগুলি ঈষৎ-লবণাক্ত উপহ্রদ এবং মিষ্টিজলের হ্রদ দিয়ে গঠিত এই ব্যাকওয়াটার নেটওয়ার্ক। এতে রয়েছে পাঁচটি বিশাল হ্রদ যা একে অপরের সঙ্গে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট খালের দ্বারা যুক্ত। এই ব্যাকওয়াটার অঞ্চল ৩৮টি নদীর জলে পুষ্ট এবং যার বিস্তৃতি কেরল রাজ্যের দৈর্ঘ্যের অর্ধেক। সমুদ্রের ঢেউ ও তীরসংলগ্ন স্রোতে সৃষ্ট ব্যাকওয়াটারগুলি পশ্চিমঘাট পর্বতমালা থেকে বয়ে আসা বহু নদীমুখে সৃষ্টি করেছে নীচু প্রাচীর বিশিষ্ট দ্বীপ।
আমরা যখন ব্যাকওয়াটারের প্রাকৃতিক শোভায় মোহিত, হাউসবোট-এর কর্মচারী আমাদের অনুরোধ করল ডাইনিং টেবিলে আসতে। আমরা চেয়ারে বসতেই টেবিলে এল ট্যাপিওকার এক পদ, সঙ্গে টুনা মাছের কারি। লজ্জার ব্যাপার এই যে আমাদের দুই পরিবারের ৭ জনের কারুর মুখেই ভালো লাগল না ওই রান্না। পরে জেনেছিলাম, এই ট্র্যাডিশনাল কেরল পদ প্রায় প্রতি হাউসবোটেই টুরিস্টদের খেতে দেওয়া হয়। এরপর প্রত্যেকেই গরম কফির কাপ হাতে নিয়ে উপভোগ করতে লাগলাম ব্যাকওয়াটারে সৃষ্ট দ্বীপগুলির উজ্জ্বল সবুজ রূপকে।
নদী, খাল ও হ্রদ নিয়ে তৈরি জালের মতো এই ব্যাকওয়াটার জলরাশির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০০ কিলোমিটার। ব্যাকওয়াটারের প্রেক্ষাপটে আছে অনেকগুলি শহর ও নগর। সেগুলোকে এই ব্যাকওয়াটার ক্রুজ-এর শুরু ও শেষ স্থান হিসেবে ধরা হয়। উদাহরণ স্বরূপ, কেল্লাম-এর ৩নং জাতীয় জলপথ কোট্টাপুরম পর্যন্ত বিস্তৃত, যা দৈর্ঘ্যে ২০৫ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ কেরল তটরেখার প্রায় সমান্তরাল। এই জলপথ মালবাহী জলযান এবং ব্যাকওয়াটার পর্যটনের উপযোগী।
দেখছিলাম, ব্যাকওয়াটারের মাঝে নীচু জমি (দ্বীপ) গুলোর ওপর ছোটো, ছোটো পাকা বাড়ি– রঙিন বাড়িগুলিতে ফুল (প্রধানতঃ জবা ও গাঁদা) এবং ফলের (কলা, আম ইত্যাদি) বাগান। প্রায় প্রত্যেক বাড়ির সামনেই বাঁধা রয়েছে মাছ ধরার নৌকা। জানলাম, এই অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রধান উপজীবিকা মাছ ধরা ও মাছের চাষ করা। দেখতে দেখতে চলেছি গাছের ওপর সাদা বক, ভাসমান কচুরিপানার ওপর পানকৌড়ি। মাঝে মাঝে দেখতে পাচ্ছি সামুদ্রিক চিল আকাশে চক্বর খাচ্ছে। জলে পড়া বৃক্ষরাজির ছায়ার পাশ দিয়ে চলেছে আমাদের জেনেসিস। দেখতে দেখতে আমরা ভেম্বানদ হ্রদের কাছে উপস্থিত হলাম, যার বিশালতাকে প্রকাশ করার উপযুক্ত ভাষা আমার নেই।
ভেম্বানদ কয়াল কেরলের বৃহত্তম হ্রদ, যার আয়তন ২০০ বর্গ কিলোমিটার। এই হ্রদকে ঘিরে রেখেছে আলেপ্পি, কোট্টায়াম্ এবং এরনাকুলাম্ জেলা। কোচিন বন্দর ভেম্বানদের আরব সাগরমুখী
অংশে অবস্থিত। ভেম্বানদ ভারতের দীর্ঘতম হ্রদ।
আলেপ্পি শহরে ঘোরার সময় লক্ষ্য করেছি, এখানে চারিদিকেই সরু বা চওড়া ক্যানাল, একে অপরের সঙ্গে যুক্ত এবং নৌযানে যাতায়াত করার উপযুক্ত। সেই কারণেই ‘পূর্বদেশের ভেনিস’ নামটির সার্থকতা। ইতিমধ্যে হাউসবোটের গতি কমে এসেছে, আমরা এসে পড়েছি কুট্টানাড অঞ্চলে– যাকে বলা হয় কেরলের ‘চালের ভাণ্ডার। এখানে লাঞ্চ দেওয়া হবে, তাই হাউসবোটের এক ঘন্টার বিরতি। লাঞ্চের পর কুট্টানাডের নীচু স্থলভূমিতে অবস্থিত স্থানীয় বাজারে যাব, ইচ্ছে হলে কেনাকাটাও করতে পারি।
বেলা ২টা বাজে– দুজন কর্মচারীকে দেখলাম, ডাইনিং টেবিলে ক্রকারিজ ও নানারকম খাবার জিনিস সাজিয়ে রাখছে। পাঁচ মিনিট পরেই বসে পড়লাম লাঞ্চ-এ। মেনুতে রয়েছে সরু চালের গরম ভাত, সাম্বার, ক্যারামেল ফিশফ্রাই (মশলাদার), চিকেন কারি, গ্রিন স্যালাড, পাঁপড় ভাজা ও দই। প্রতিটা রান্নাই ছিল দারুণ সুস্বাদু। আমাদের আন্তরিক প্রশংসায় পাচক এবং অন্যান্যরাও খুব খুশি। লাঞ্চ করে নিয়ে আমরা সকলে বোট থেকে নামলাম এবং এগিয়ে গেলাম স্থলভূমিতে স্থানীয় দোকানবাজার দেখতে। এই কুট্টানাড সত্যিই এক অতুলনীয় জায়গা, যেখানে মাইলের পর মাইল ধানজমি আর ব্যাকওয়াটারের কাটাকুটি খেলা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, কুট্টানাড-এর চাষজমি সমুদ্রতল থেকেও ৪-১০ ফুট নীচু। কেরলের প্রধান চার নদী পম্বা, মিনাচিল, আচানকোভিল এবং মণিমালা বয়ে গিয়েছে এই অঞ্চল দিয়ে।
আমরা যেখানে এসেছি, কিছু অস্থায়ী দোকান রয়েছে সেখানে। একটা চালাঘরে বিক্রি হচ্ছিল ব্যাকওয়াটার থেকে সদ্য তুলে আনা বড়ো বড়ো চিংড়ি। অন্যান্য দোকানগুলির কোনওটাতে আলুচিপ্স-কোল্ডড্রিংক্স, কোনওটাতে মুদিখানার জিনিস বিক্রি হচ্ছিল। একটা ডাব-বিক্রির দোকানে বসেছিল একটা পোষা ঈগল, সঙ্গে সঙ্গে পাখিটার ছবি তুললাম। দোকানের সামনে রাখা চেয়ারে বসে ঠান্ডা পানীয় পান করার সময় দেখছিলাম দিগন্তজুড়ে জলে ডোবা ধানজমি, আরও দূরে সারিবদ্ধ নারকেল গাছগুলি হাওয়ায় দুলছে। সে এক চোখ-জুড়ানো, মন-ভোলানো ছবি!
বেলা তিনটে নাগাদ, আমাদের হাউসবোট আবার চলতে শুরু করল। এই ব্যাকওয়াটারের ইকোসিস্টেম ভারি স্বতন্ত্র– এখানে নদীর মিষ্টি জল মিশে যায়, আরব সাগর থেকে বয়ে আসা নোনা জলের সঙ্গে। কুমারাকোম-এর কাছে ভেম্বানদ কয়াল-এ ব্যারেজ বানিয়ে সমুদ্রের নোনাজলকে আটকানো হয়েছে মিষ্টি জলের বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য– কারণ এই মিষ্টি জল সেচের কাজে লাগানো হয়। ব্যাং, কাঁকড়া, চিংড়ি ছাড়াও ব্যাকওয়াটারের উপর উড়তে দেখা যায় সামুদ্রিক চিল, মাছরাঙা, বক, পানকৌড়ি প্রভৃতি পাখি। এছাড়া এখানে আছে ভোঁদড় ও কচ্ছপ। আমরা এখন এসেছি নদীর অন্য পাড়ে, যেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটা আয়ুর্বেদিক স্পা-সেন্টার। কেরলের যে-কোনও পর্যটন স্থলেই স্পা সেন্টারগুলির রমরমা ব্যাবসা। বন্ধু পার্থকে এক স্পা-সেন্টারে নামিয়ে দিয়ে আবার আমরা জলভ্রমণে এগোলাম। মনুষ্যসৃষ্ট বহু খালের সঙ্গে যুক্ত বলে এই ব্যাকওয়াটার স্থানীয় ব্যাবসা ও সস্তা পরিবহনের পক্ষে দারুণ উপযোগী। তবে অতিরিক্ত সংখ্যায় ডিজেল চালিত হাউসবোটগুলি আজ এই অনুপম ইকোসিস্টেম-এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে। কেরলের সমগ্র ব্যাকওয়াটার অঞ্চলে দু-হাজারেরও বেশি হাউসবোট (কেট্টভুল্লাম) চলে এবং শুধু আলেপ্পির ব্যাকওয়াটারে ১২০ – ১৫০টি হাউসবোট পর্যটন ও অন্যান্য ব্যাবসায় যুক্ত। ভাবলে খারাপ লাগে, পর্যটন ব্যাবসার খাতিরে পাহাড় থেকে সমুদ্র পর্যন্ত পরিবেশদূষণে আমাদের কারুর তেমন মাথাব্যথা নেই। সত্যি, কি বিচিত্র এই দেশ!
বিকেলের কফি পান করে এক আনন্দময় যাত্রা শেষে আমরা যখন হাউসবোট থেকে তীরে নামলাম, তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। একটু হেঁটে আমাদের জন্য অপেক্ষারত গাড়িতে উঠে বসলাম। এখন গন্তব্য আলেপ্পি বিচ, সূর্যাস্ত দেখব আবর সাগরের বুকে। মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে বিচ, ১০-১২ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু যানজটে আটকে গেলাম। প্রায় ২০ মিনিট পরে যখন বিচে পৌঁছালাম, তখন দিনমণি সবে অস্ত গিয়েছেন। কিন্তু আকাশে রেখে গিয়েছেন রঙের মেলা। সে এক অতি সুন্দর দৃশ্য! কালচে আরব সাগরের উপরে আকাশ লালে লাল, কোথাও আবার হলুদের ছোঁয়া। বেশ কয়েকটা ছবি নিলাম এই অপূর্ব দৃশ্যের। সূর্যাস্ত দেখতে না পাওয়ার আপশোশ অনেকটাই দূর হল এই অপরূপ দৃশ্যে। রিসর্টে ফেরার পথে জিপিএস-এ সন্ধান করে টিএফসি (কেএফসি-র কাজিন)-র আউটলেটে গিয়ে পৌঁছোলাম ছোটোদের আবদার রাখার জন্য।
সন্ধেবেলায় বাগানে লাগানো হ্যামক-এ শুয়ে, বা দোলনায় বসে আড্ডা চলল আমাদের। সঙ্গে চা-পাকৌড়া। রাত ১০টায় ডিনার সেরে শুতে লেগাম। আজও সকালে উঠে পড়েছি ৬টার পরেই। প্রথমে গেলাম সমুদ্রতীরে, ঠান্ডা জলে পা ভেজাতে ভালো লাগছিল খুব। একে একে আমাদের অনেকেই হাজির হল সমুদ্র তীরে। আমি ফিরে এলাম রিসর্টের বাগানে, ছবি তুললাম পারিপার্শ্বিকের। ততক্ষণে সবাই জড়ো হয়েছে চা-এর টেবিলে। আমাদের সকলেরই খারাপ লাগছিল এই শান্ত-সুন্দর জায়গা ছেড়ে যাব ভেবে। স্নান সেরে সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট করতে এলাম সকাল সাড়ে ন’টায়। মেনুতে ছিল কেরল স্টাইলের দোসার মাঝে ইডলি বসানো এক পদ, সঙ্গে ডিমের কারি। অবশ্যই ব্রেড-বাটার-জ্যাম এবং শেষে গরম কফি ছিল। সাড়ে দশটায় রিসর্টে চলে এল আমাদের গাড়ি। লাগেজ গোছানোই ছিল, সেগুলো তোলা হল গাড়িতে। রিসর্টের কর্মচারীদের বিদায় জানিয়ে আমরা উঠে বসলাম গাড়িতে। গাড়ি চলতে শুরু করল ঠিক বেলা এগারোটায়– শৈলশহর মুন্নার-এর উদ্দেশ্যে।