বর্ষাকালে নানা অসুখবিসুখে নাজেহাল হই আমরা৷ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সর্দি-কাশি, ডেঙ্গু জ্বর, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস জাতীয় নানা রোগ। তাই এই সময় সমস্যা এড়াতে আমাদের বাড়তি সচেতনতার প্রয়োজন ।
শ্বাসনালির সংক্রমণ
এখনও আমরা লড়ে যাচ্ছি কোভিড অতিমারির সঙ্গে৷ এসময় বিশেষ ভাবে প্রয়োজন শ্বাস-প্রশ্বাসনালির সংক্রমণ থেকে লাংস-কে রক্ষা করা৷ সাধারণ ঠাণ্ডা লেগেও অনেকসময় এই ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে সর্দি-কাশি, বুকে কফ জমা, এ ধরনের কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়। সাধারণ এই সমস্যাগুলোই অনেক সময় বড়ো আকার নিতে পারে। তাই শুরুতেই সচেতনতাস্বরূপ, উচিত হবে প্রচুর জল পান করা, তাজা ফলমূল ও জুস খাওয়া। এ সমস্যা মোকাবিলা করতে অনেকেই হালকা গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে উপকার পেয়েছেন।
চোখের সংক্রমণ
বর্ষায় বেরোতে হয় কাজের প্রয়োজনে৷ তখন সতর্ক না হলেই বৃষ্টির জল থেকে কিংবা আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশিক্ষণ এক্সপোজড হলে, চোখে সংক্রমণ হয়৷ চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে জল পড়া,চোখ চুলকানো কিংবা ব্যথা হওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দিয়ে সমস্যা শুরু হতে পারে। মূলত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এমনটা হয়। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে, পরিষ্কার টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছে নিন। হাত পরিস্কার রাখুন।হাত স্যানিটাইজ না করে মোটেই চোখে দেবেন না৷চোখের সংক্রমণ সাধারণত দুই থেকে তিন দিন পর এমনিতেই সেরে যায়। এ সমস্যায় দিনে তিন থেকে চার বার হালকা গরম কাপড় দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট চোখে সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যাবে।
ডেঙ্গু জ্বর
বর্ষার জমা জলে মশা জন্মায়৷ তাই এসময় স্বাভাবিক ভাবেই মশার প্রকোপ বেশি থাকে। এর মধ্যে জীবাণুবাহী এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। সাত বা বা তার বেশি দিন ধরে জ্বর থাকে৷
ডেঙ্গু জ্বরের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, আবার এই সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কোন ভ্যাকসিনও নেই। প্রতিরোধের একমাত্র উপায় মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। তাই ফুলের টব, নারকেলের মালা, ভাঙা বাসন বা অন্য যে কোনও পাত্রে জল জমিয়ে রাখবেন না।
ডায়রিয়া
ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হল দূষিত জল পান করা। বর্ষায় জলের সঙ্গে জীবাণু মিশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা যায়।অনেক সময় পানীয় জলের পাইফ ফেটে গেলে নোংরা জল ঢুকে খাবার জল দূষিত হয়ে যায়৷ তখন এই সমস্যা বড়ো আকার নিতে পারে৷
ডিহাইড্রেশন থেকে রোগীকে বাঁচাতে তখন স্যালাইন, চিঁড়ে ভেজানো জল, গ্লুকোজের জল, শরবত ইত্যাদি তরল খাদ্য বারবার দেওয়া হয়৷
ম্যালেরিয়া
এনোফিলিস জাতীয় স্ত্রী মশা দ্বারা এ রোগ ছড়ায়।তাই দীর্ঘদিন কোনও জায়গায় আবর্জনা জমিয়ে রাখবেন না৷ সাধারণত বর্ষার শুরু এবং শেষে ম্যালেরিয়ার বিস্তার বেশি হয়ে থাকে। সর্দিকাশি, গলা ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি এই রোগের উপসর্গ। দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের অন্যতম পন্থা।
হেপাটাইটিস
হেপাটাইটিস একটি যকৃতের রোগ। এর আবার বেশ কিছু প্রকারভেদ আছে। এগুলোর মধ্যে হেপাটাইটিস-এ এবং হেপাটাইটিস-ই জলবাহিত ভাইরাস হওয়ার কারণে এই রোগ বর্ষাকালেই বেশি হয়।
টাইফয়েড
বর্ষাকালে টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সালমোনেলা টাইফি নামের এক ধরনের জীবাণু জল ও খাবারকে দূষিত করে। এই দূষিত জল অথবা খাবার খেয়ে মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। টাইফয়েডের বাহক এবং আক্রান্ত রোগীর মলমূত্র এ রোগের উৎস।মাছিও এ রোগ ছড়ায়।
এই রোগে জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি, ডায়রিয়া, পেট ফুলে যাওয়া এবং লিভারের নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
কৃমি সংক্রমণ
বর্ষাকালেই কৃমির বেশি প্রাদুর্ভাব হয়। এ সময় জল আর কাঁদামাটিতে মিশে থাকে এই জীবাণু। তাই অন্য যে কোনো ঋতুর তুলনায় বর্ষায় খুব সহজেই কৃমির সংক্রমণ ঘটে। এই সমস্যা এড়াতে ‘নো ওয়ার্মস’–এর মতে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে৷
ছত্রাক সংক্রমণ
ঘাম বা জলে বেশিক্ষণ শরীর ভিজে থাকলে, পায়ের আঙুলের ফাঁকে, কুঁচকিতে, মাথায় ও চুলে ছত্রাক সংক্রমিত হয়। ছত্রাক সংক্রমণে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ছত্রাকনাশক ক্রিম এবং চুলে বিশেষ শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।