প্রাচীনকালে মুনি-ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করতেন এই যোগাভ্যাসের মাধ্যমে। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বজায় রয়েছে সেই যোগবিদ্যার ধারা এবং সাফল্য। আসলে, দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার এটি অন্যতম প্রধান কৌশল। রোগ-ব্যাধি সরিয়ে রাখতে যোগব্যায়ামের সাহায্য নিন। শিখুন যোগাসনের সঠিক পদ্ধতি এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার কৌশল।
পদহস্তাসন
পদ অর্থে পা এবং হস্ত অর্থে হাত। অর্থাৎ, পা এবং হাতের আসনকে এককথায় বলা হয় পদহস্তাসন। ইংরেজিতে যা হ্যান্ড আন্ডার ফুট-পোজ হিসাবে পরিচিত। কম-বয়সিরা এই আসন খুব সহজে হয়তো করতে পারবে, কারণ তাদের হাড় এবং মাংসপেশী বড়োদের তুলনায় অনেক নমনীয়। তাই প্রথম দিকে যদি এই আসন করতে খুব কষ্ট হয়, তাহলে প্রাপ্তবয়স্করা ধীরে ধীরে অভ্যাস করুন এই আসন।
পদ্ধতি : সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুই হাত প্রথমে উপরে তুলে জোড় করুন। পা-দুটিও জোড়া রাখুন। এবার কোমর থেকে হাত পর্যন্ত অংশ, ধীরে ধীরে পায়ের পাতার দিকে নামান। দুই হাতের আঙুল দিয়ে প্রথমে পায়ের আঙুল ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। এই ভাবে কয়েকদিন অভ্যাস করার পর, শরীরকে কিছুটা নমনীয় অবস্থায় আনুন। এরপর আরাম অনুভব করলে, দুই হাতের কবজি পর্যন্ত অংশ পায়ের পাতার নীচের অংশে ঢুকিয়ে দুই হাঁটুর মধ্যে কপাল ছোঁয়ান। এভাবে কয়েক সেকেন্ড থাকার পর, ধীরে ধীরে দাঁড়ানোর অবস্থায় ফিরে যান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হলে আবার করুন আসনটি। সকাল-বিকেল দু’দফায় পাঁচবার করে এই আসন অভ্যাস করলে সুফল পাবেন।
উপকারিতা : রক্ত-সঞ্চালন এবং স্নাযুসমূহ স্বাভাবিক থাকে। স্পন্ডিলোসিস আটকায়। কোমর এবং মেরুদণ্ড সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে। মানসিক চাপ কমে। বদহজম এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
সতর্কতা : হার্নিয়া থাকলে এই আসন করবেন না।
পদ্মাসন
পদ্মের মতো দেখতে লাগে বলে এই আসনকে পদ্মাসন বা লোটাস-পোজ বলা হয়। খুব সহজ অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই আসন। যে-কোনও আসনের পর এই আসন করা ভালো।
পদ্ধতি : প্রথমে পা ছড়িয়ে বসুন এক মিনিট। চোখ বন্ধ রেখে পদ্মাসন করার মানসিক প্রস্তুতি নিন। এবার চোখ খুলুন এবং পা দুটিকে ভাঁজ করুন। এক্ষেত্রে বাম পা ডান পায়ের থাই-এর উপর উঠবে এবং ডান পা বাম পায়ের থাই-এর উপর। অর্থাৎ, হাঁটু থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত পা দুটি এমন ভাবে লক হবে, যা ইংরেজি X-এর মতো দেখতে লাগবে। এরপর দুই হাত হাঁটু বরাবর টানটান করে রাখুন। করতল ঠিক হাঁটুর উপর থাকবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তার পরের আঙুল ছুঁইয়ে রাখতে হবে। দুই হাতের বাকি আঙুলগুলি সোজা সামনের দিকে থাকবে। কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত রাখতে হবে টানটান। এবার দৃষ্টি সামনে রেখে শ্বাস গ্রহণ এবং বর্জন করতে হবে। দীর্ঘ সময় নিয়ে অর্থাৎ অন্তত পাঁচ মিনিট থাকতে হবে এই আসনে।
উপকারিতা : গর্ভাবস্থায় এই আসন করলে প্রসব যন্ত্রণা লাঘব হবে এবং সন্তানের মানসিক গঠন ভালো হবে। এই আসন উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। মানসিক শান্তি দেয়। পায়ের হাড় নমনীয় এবং মজবুত থাকে। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, রাতে ভালো ঘুম হয় এবং সারাদিন প্রাণ চঞ্চল থাকা যায়।
সতর্কতা : পায়ে কোনও সার্জারি থাকলে এই আসন করবেন না।
মডেলঃ অনুসূয়া দাস