দিনের শুরুটা করুন ঈষৎ উষ্ণ জল, মধু আর লেবুর সঙ্গে। স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপযোগী। এর গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা প্রায় সকলেই মোটামুটি অবহিত। শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে এর জুড়ি মেলা ভার। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সাহায্য করে এই মিশ্রণ। এছাড়া  Lemon and Honey-র আরও বেশ কিছু গুণ রয়েছে, যা আপনাকে সতেজ, সুন্দর থাকতে সাহায্য করবে।

গুড বাই Constipation Problem – লেবু ও মধুর মিশ্রণ কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে একেবারে অর্ব্যর্থ। কনস্টিপেশন মানুষের নিয়মিত সমস্যা। এর জন্য বাজারে অনেক ওষুধ রয়েছে। কিন্তু ঘরোয়া উপায়ে এর সমাধান সম্ভব। গরম জলের সঙ্গে লেবু, মধুর মিশ্রণ দ্রুত কাজ দেয়। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় অন্ত্রের প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। মলাশয়কে হাইড্রেট করে। অতিরিক্ত জল সঞ্চারিত হওয়ার ফলে শুষ্ক মল নরম হয়ে সহজেই বর্জ্যের আকারে নির্গত হয়ে কনস্টিপেশনজনিত কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়।

হজমে সুপারহিট – নিয়মিত এই মিশ্রণ খেলে হজমশক্তি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। লেবুর রস লিভারকে সক্রিয় করে তোলে। হজমের জন্য প্রয়োজনীয় পিত্তরস নির্গত হয়। দূর করে অযাচিত টক্সিন। লেবুতে থাকা অ্যাসিড হজমের জন্য উপযোগী। মধু ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের কাজ করে থাকে। শরীরের মধ্যে কোনওরকম সংক্রমণ ঘটলে, তার হাত থেকেও রক্ষা করে। টক্সিন নিয়ন্ত্রণে মধু সুফলদায়ী।

ক্লিন স্টমাক – হজম না-হওয়া খাবার, মৃত ব্যাকটেরিয়া জমা হয়ে স্টমাকে একটা আস্তরণ তৈরি করে। পরবর্তীকালে যা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই মিশ্রণ ক্ষতিকারক আস্তরণ তৈরিতে বাধা দেয়। পেট পরিষ্কার রাখাটা শারীরিক সুস্থতার জন্য জরুরি। গরম জলে লেবু, মধু খাওয়ার অভ্যাস সেই চাহিদা মেটায়। শরীরে পুষ্টি জোগানোর সঙ্গে সঙ্গে জল সরবরাহের কাজটাও করে। টক্সিনের পরিমাণও নিয়ন্ত্রণ করে।

Lymphatic সিস্টেম – অসুস্থতার অন্যতম কারণ হল লিমফেটিক সিস্টেমের সমস্যা। শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রয়োজনীয় জল ও তরল সরবরাহ করা হল এই সিস্টেমের কাজ। এই প্রক্রিয়ায় কোনওরকম ছেদ বা সমস্যা হলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অবসাদ, অনিদ্রার মতো উপসর্গ দেখা যায়। মানসিক চাপ এবং মস্তিষ্কের কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটে। সমস্যা কাটাতে সকালে উঠে গরম জলে লেবু, মধু টনিকের মতো কাজ করে। এই মিশ্রণ আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় জল ও ফ্লুয়িড সরবরাহ করে লিমফেটিক সিস্টেমকে সচল রাখে। ডি-হাইড্রেশন-এর হাত থেকে রক্ষা করে। অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ইউরিন পরিষ্কার করে – মধুর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া প্রতিষেধক ক্ষমতা রয়েছে। বিভিন্ন ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও এটি দারুণ কার্যকর। ইউরিন সমস্যার ক্ষেত্রেও সুফলদায়ী। ইউরিনের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা লেবুর রস এবং মধুর মিশ্রণ পরখ করতে পারেন। এতে ইউরিন প্রক্রিয়াও সচল থাকে আর পরিষ্কারও হয়। অনেক মহিলাই নিয়মিত ইউটিআই (ইউরিন ট্রাক্ট ইনফেকশন) সমস্যায় ভোগেন। তারা এই মিশ্রণে উপকৃত হবেন।

এনার্জি বর্ধক – শরীরে এনার্জি জোগায় এই লেবু ও মধুর মিশ্রণ। ক্লান্ত লাগছে? একগ্লাস গরম জলে লেবু, মধু মিশিয়ে নিন। মধু দ্রুত এনার্জি লেভেল বাড়ায়। শুধু তাই নয় এই মিশ্রণ মস্তিষ্কে জল সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়ে মনকে তরতাজা করে তোলে। স্টমাকের কার্যকারিতা বাড়াতে লেবুর জুড়ি নেই। হজম ক্ষমতাও বাড়ে। লেবুর গন্ধের মধ্যে টেনশন দূর করার সহজাত গুণ রয়েছে। মুড অফ থাকলে এক গ্লাস এই মিশ্রণ খেয়ে নিন। মুহূর্তে মুড ঠিক হয়ে যাবে।

উজ্জ্বল স্কিন – ত্বককে ভালো রাখতে এই মিশ্রণ পারফেক্ট সলিউশন। ক্লিনসিং করার ক্ষমতা রয়েছে লেবুর। ফলে রক্তকে পরিশ্রুত করে। নতুন ব্লাড সেল তৈরি করতে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জল ও মধু শক্তিবৃদ্ধি করে, ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও কোলাজেন বুস্টিন জোগায়। ঘরোয়া পদ্ধতিতে উজ্জ্বল ও সুন্দর ত্বক পেতে তাই গরম জলে লেবু ও মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ওজন কমায় – শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে চান? ওজন কমিয়ে হয়ে উঠতে চান স্লিম? তাহলে এই মিশ্রণের উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারেন। লেবুর মধ্যে পেকটিন নামে এক ধরনের ফাইবার থাকে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। গরম জল, লেবু-মধুর মিশ্রণ পাকস্থলিতে ক্ষার (অ্যালকালাইন কম্পোনেন্টস্) তৈরি করে, যা দ্রুত ওজন কমায়।

কখন খাবেন – খালিপেটে সকাল শুরু করুন এই মিশ্রণ দিয়ে। এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জল নিন। তারমধ্যে আধখানা লেবুর রস ও এক চা-চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নিন। আর একটা কথা মনে রাখবেন, মিশ্রণটা খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে চা বা কফি খাবেন না। ব্রাশ করেও খেতে পারেন। তবে ব্রাশ কিংবা গারগেল করার আগে খাওয়াই ভালো। কয়েকদিনের মধ্যেই ফল পাবেন। নিজেকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে তাই আজ থেকেই ডেলি রুটিনে ঢুকিয়ে নিন এই সুফলদায়ী মিশ্রণ।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...