অতিথি দেবতুল্য সুতরাং যে-গৃহে অতিথির Guest পা পড়েছে, সেখানকার গৃহকর্তার সবসময়ই চেষ্টা থাকে, অতিথির যেন কোনও কিছুতেই কষ্ট না-হয়।
কিন্তু এখন প্রচন্ড ব্যস্ততার যুগ তার ওপর নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। কর্তা, গিন্নি উভয়েই ব্যস্ত নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে। নিজেদের জন্যেই একে অপরের কাছে সময় নেই, তার উপর গেস্ট। অনেকেরই মনে পড়তে পারে, ‘অতিথি তুম কব যাওগে’ ছবিটির কথা। অনেকেই আজকাল অতিথিকে আপ্যায়ন করতে বিরক্ত বোধ করে, অতিথি guest বাড়ি থেকে চলে গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ভুলেও তাদের মুখ থেকে শোনা যায় না, ‘আবার আসবেন’।
কিন্তু মানুষের মনের এতটা পরিবর্তনের কারণ কী? প্রত্যেককেই কখনও না কখনও এরকম একটা মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। পরিবর্তনের এই ধারাকে লক্ষ্য রেখে এখন অতিথিদেরও উচিত মানসিকতা বদলানো। অতিথি যেন গৃহকর্তার উপর বোঝা না হয়ে ওঠেন। সুতরাং, সেই ভাবেই অতিথির আচরণ করা উচিত।
আমাদের সকলেরই সুযোগ হয় অন্য বাড়িতে গেস্ট হিসেবে যাওয়ার। সম্পর্কটা ফর্মাল অথবা ইনফর্মাল যাই হোক না কেন, গেস্ট হিসেবে নিজেকে সংযত রাখাটা একান্ত দরকার। ভালো অতিথি হয়ে ওঠাটা খুব একটা মুশকিলের কাজ নয়, কেবল যাদের অতিথি হচ্ছেন, তাদের সুবিধা অসুবিধার খেয়ালটা মাথায় রাখতে হবে। গৃহস্বামীর যাতে অসুবিধা না হয়, অতিথির সে বিষয়ে সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
অতিথি হয়ে কারও বাড়িতে গেলে, গৃহস্বামী যতই নিজেদের শোবার ঘর, প্রিয় খাবার টেবিলের চেয়ার অতিথির জন্যে ছেড়ে দিক না কেন, গেস্ট হয়ে উচিত সেগুলি ব্যবহার না করা। তার বদলে গেস্টরুমে থাকুন এবং খাবার ঘর, বসবার ঘরে গৃহকর্তার প্রিয় জায়গাটি ছেড়ে দিয়ে অন্য চেয়ার বেছে নিন। এতে দেখবেন গৃহস্বামী খুশিই হবেন।
বাড়ির নিয়মকানুন নিজের মতো করে বদলে ফেলবেন না।ভুলবেন না, আপনি অন্যের বাড়িতে রয়েছেন। সেই বাড়ির সময় ধরে আপনার চলা উচিত। ইচ্ছেমতো শুয়ে থাকলাম, যতক্ষণ ইচ্ছে হল বাথরুম এনগেজ রাখলাম, বাড়ির খবরের কাগজ নিজে আগে নিয়ে, সময় নিয়ে পড়তে শুরু করলাম, যখন ইচ্ছে চা-জলখাবার চেয়ে বসলাম ইত্যাদি আচরণ থেকে বিরত থাকুন। সেই বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী চলুন। বাড়ির গাড়ি যদি ব্যবহার করতে চান আগে থেকে গৃহস্বামীর মত নিন এবং ব্যবহারের পর পেট্রোল অথবা ডিজেল যাই হোক না কেন ভরিয়ে দিন।
কারও গৃহে আশ্রয় নেওয়ার আগে থেকেই আপনার কী শেডিউল গৃহস্বামীকে জানিয়ে রাখুন।
কোথাও, কারও বাড়িতে থাকতে হলে পৌঁছোবার অনেক আগেই গৃহকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং নিশ্চিত হোন যে সেই সময় ওই বাড়িতে গিয়ে পড়লে কারও অসুবিধা হবে কিনা। গৃহকর্তার সেই সময় কোনও কাজ নেই, আপনার জন্যই তার অখন্ড অবসর কাটছে এমন ধরে নেওয়াটা একবারেই যুক্তিযুক্ত নয় এবং খুব ইম্প্র্যাক্টিক্যাল চিন্তাভাবনা। না বলে নিজেদের ইচ্ছেমতো পৌঁছোলেই হাসিমুখে তারা আপনাকে আপ্যায়ন জানাবে, এই ধারণাটাই ভুল। আজকের ব্যস্ত জীবনশৈলীতে সকলেই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
যতদিন অন্যের বাড়িতে থাকবেন, আগে থেকে গৃহকর্তাকে আপনার প্ল্যান সম্পর্কে জানিয়ে রাখবেন। কবে কোথায় লাঞ্চ, ডিনার আছে, কোনদিন আপনি বাড়ির সকলের সঙ্গে বসে খাবেন না– সবকিছুই আগে থেকে জানিয়ে রাখলে তারাও সেইভাবে নিজেদের প্ল্যান মাফিক এগোতে পারবে।
অতিথি হিসেবে অপরের সমালোচনা করা ঠিক নয়। সবসময় মনে রাখবেন যেখানে আছেন সেটা আপনার নিজের বাড়ি নয়। এই বাড়ি অপরের সুতরাং এখানকার নিয়মকানুনও আলাদা। রান্না আপনার পছন্দের না-হলেও গৃহকর্ত্রীর হাতের রান্নার প্রশংসা করুন, তাঁর ঘর সাজাবার তারিফ করুন। কেউই নঞ্চর্থক উক্তি শোনা পছন্দ করেন না। অন্যের বাড়িতে কিছু অপছন্দের হলেও মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন। যদি সহ্যের ক্ষমতার বাইরে কিছু ঘটে তাহলে মার্জিত ভাবে আপনার অসুবিধার কথা গৃহকর্তাকে জানান। জামাকাপড় ইস্তিরি করার দরকার পড়লে গৃহকত্রীর উপর দায়িত্ব না চাপিয়ে, নিজে সেই দায়িত্ব পালন করুন। নিজের কাজ নিজে করে নিন। কারণ অতিথি বাড়ি এলে গৃহকর্ত্রীর কাজ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি হয়ে যায়।
বাচ্চাদের শাসন করুন। সাধারণত কোথাও বেড়াতে গেলে বাচ্চারা কী করছে, মা-বাবা খেয়ালই করেন না। নিজেদের বাড়িতে হয়তো শাসনে বাচ্চাদের রাখলেও অন্য বাড়িতে গিয়ে লাগাম আলগা করে দেয় অনেক অভিভাবকই। অন্য বাড়িতে বাচ্চাদের আরও বেশি করে শাসন করা উচিত। কোনওরকম দুষ্টুমি বরদাস্ত করা উচিত নয়। অন্য বাড়িতে গিয়ে দেয়ালে লেখা, আঁকিবুকি করতে দেখলে শাসন করুন সন্তানকে। লক্ষ্য রাখুন গৃহকর্তার কোনও জিনিসে যেন বাচ্চারা হাত না দেয় এবং সেই বাড়ির বাচ্চাদের সঙ্গেও তারা যেন ঝগড়াঝাঁটি না-করে।
অন্যের অসুবিধা না করে নিজের ইচ্ছাকে দমন করুন। অতিথি কখন ঘুম থেকে উঠবে, কখন রাত্রে বাড়ি ফিরবে তার জন্যে অপেক্ষা করা খুবই বিরক্তিকর। আপনি হয়তো ছুটিতে বেড়াতে গেছেন কিন্তু যে-বাড়িতে গেস্ট হিসেবে রয়েছেন তাদের ছুটি নাও থাকতে পারে। সুতরাং দেরি করে শোয়া বা বেলা অবধি বিছানা আঁকড়ে পড়ে থাকা সমীচীন নয়। এক্ষেত্রে গৃহকর্তা ভেবে পাবেন না আপনি উঠে জলখাবার খাবেন নাকি দ্বিপ্রাহরিক খাবার খাবেন! বাড়ির নিয়ম মেনে চলুন। যদি বাড়ির সকলের তাড়াতাড়ি ঘুমোবার অভ্যাস থাকে তাহলে রাত্রে ঠিক সময়ে ডিনারের জন্যে বাড়ি ফিরুন।
সাহায্যের হাত বাড়ান। বাড়িতে অতিথি guest মানেই কাজের অতিরিক্ত বোঝা। যেখানে সম্ভব গৃহকর্তাকে সাহায্য করুন। নিজের কাজ নিজে করুন কারণ গৃহকর্তা অথবা সেই বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকার পক্ষে শুধুমাত্র আপনার জন্যে সারাদিন বসে থাকা সম্ভব নয়। বসে থেকে লোককে অর্ডার করা অত্যন্ত অশালীন ব্যবহার বলে বিবেচিত হবে। অতিথি বলে নিজের ঘর নোংরা রাখবেন না। দিনের দিন নিজের হাতে ঘর পরিষ্কার রাখুন।
সকলের প্রশংসা করুন। গৃহকর্তা অনেক সময়েই নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে অতিথি সেবায় মন দেন। অতিথির সেবা-যত্নে যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে তার খেয়াল রাখেন। সুতরাং গৃহকর্তার চেষ্টা যে সফল, সেটা বোঝানোটা অতিথিরই উচিত। সুতরাং সেখানে থাকাকালীন আপনি অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছেন সেটা বোঝানোর দায়িত্ব আপনার। তাই গৃহকর্তা এবং তাঁর বাড়ির সকলকে উপহার হিসেবে কিছু না কিছু দিন। বাড়িতে বাচ্চারা থাকলে চকোলেট, বই খুবই ভালো অপশন উপহার হিসেবে। এছাড়া পেন্টিং, ঘর সাজাবার জিনিস এসব কিছুও উপহার হিসেবে খুবই ভালো বিবেচিত হতে পারে।