একটি রিপোর্ট অনুযায়ী অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সাযে্ন্সেস (এইমস)-এর ডিরেক্টর ডা. রণদীপ গুলেরিয়া জানিয়েছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ আসা, আটকানো না গেলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা আগের থেকে সহজ হবে।

করোনা ভাইরাসের তৃতীয় তরঙ্গ দেশে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। প্রচুর মানুষ এই ভাইরাসের প্রোকোপে প্রাণ হারিয়েছেন। এখন দ্বিতীয় তরঙ্গ যখন প্রায় শেষ হওয়ার মুখে, মৃত্যুর হার কমে আসছে, লকডাউন-ও বহু জায়গায় উঠে গেছে তখন তৃতীয় তরঙ্গের ভয় আবার মানুষের মনে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে লকডাউন উঠে যাওয়া ঘোষণা হতেই যে-ভাবে মানুষ আবার সবরকম নিয়মের অলঙ্ঘন করা আরম্ভ করেছে, তাতে খুব শীঘ্রই করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

জুলাই মাস শেষ হতে চলেছে প্রায়। দুদিন আগেও মৃতের সংখ্যা যেখানে ৪০০-তে নেমে গিয়েছিল, সপ্তাহশেষে দেখা যাচ্ছে সেই সংখ্যাই আবার ৪০০০ ছুঁই ছুঁই। বিশেষজ্ঞরা ধরেই নিয়েছেন তৃতীয় তরঙ্গ এড়ানো সম্ভব নয়, তাই মানুষকে সচেতন এবং সতর্ক হতে হবে। এবার আরও বেশি বিধ্বংসী রূপ নিতে পারে এই ভাইরাস। অক্টোবর অবধি স্থায়ী হতে পারে এর ধ্বংসলীলা।

রিপোর্ট অনুযায়ী, গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল বেদ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, ভাইরাস আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে। ইংল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, করোনা সংক্রমণের সংখ্যা সেখানে বাড়ছে। আমাদের দেশেও লকডাউন তুলে নিতেই মানুষ আবার অবহেলা করা শুরু করে দিয়েছে। বাজারে ভিড় বাড়ছে। মানুষ মাস্ক ছাড়াই বাইরে বেরিয়ে পড়ছে। পর্যটনস্থলে মানুষের মাথা শুধু দেখা যাচ্ছে। সিমলার রাস্তায় এই চিত্র কিছুদিন আগেই খবর এবং নেটের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এই বিপদের মুখেও বহু মানুষ এখনও ভ্যাকসিন পায়নি, তাদের নিয়ে সমস্যা আরও বেশি। আমাদের সরকার যদিও তৃতীয় তরঙ্গ এড়াতে এবং যাতে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে না পারে, তার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। জনগণের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে সরকারকে সবরকম ভাবে সমর্থন ও সাহায্য করতে, যাতে সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় করোনার তৃতীয় ঢেউকে পরাজিত করা সম্ভব হয়।

ডা. রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, তৃতীয় তরঙ্গ সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ টিকাকরণ পদ্ধতি দ্রুত হতে থাকায় সংক্রমণের সংখ্যা যেমন কমবে, তেমনি রোগটি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারবে না। এছাড়াও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রাকৃতিক ভাবেই মানুষের কাছে কিছুটা ইমিউন হয়ে উঠছে। লকডাউন-ও সংক্রমণ আটকাতে অনেকটাই সাহায্য করেছে। দেশে এ পর্যন্ত ২৬০ মিলিয়নের বেশি টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর টিকাকরণ অভিযান যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে, ফলে করোনার আতঙ্ক মানুষের মনে ধীরে ধীরে কমবে।

বর্ষার প্রভাব পড়তে পারে

কিছু ডাক্তার এবং রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসও বৃষ্টির দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাদের মতে, বর্ষার আর্দ্র আবহাওয়া ভাইরাল যে-কোনও রোগের বৃদ্ধি ঘটায়। করোনাকেও এই আর্দ্র আবহাওয়া অবশ্যই প্রভাবিত করবে এবং ভাইরাস ছড়িয়ে দেবে, যার ফলে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে বর্ষা ঢুকে গেছে এবং বহু জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ডেলাওয্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিভাগের বিজ্ঞানী জেনিফার হর্ন গতবছরই সাবধান করে বলেছিলেন, ভাইরাসের প্রজনন এবং বিস্তার বর্ষার মরশুমে বাড়বে বই কমবে না।

 

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...