হৃদরোগের প্রসঙ্গ তুলতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ করলেন ডা. শুভানন রায়। বিয়াল্লিশ বছর বয়সি এক ব্যক্তি বুকে সামান্য ব্যথা নিয়ে একজন কার্ডিয়োলজিস্ট-এর চেম্বার-এ যান। ওই চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষানিরীক্ষা করে যা জানান, তাতে মর্মাহত হয়ে পড়েন রোগী। আসলে, রোগীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ছিল স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। আর ধমনিতে ছিল ব্লকেজ। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই রোগীকে আবার পরীক্ষা করা হয়। আর দ্বিতীয়বার পরীক্ষার পর দেখা যায়, ওই রোগীর কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ ছাড়াও রয়েছে দুই ধরনের ডায়াবেটিস।

অ্যাঞ্জিওগ্রাফির পর আরও জানা যায় যে, অধিকাংশ ধমনিগুলি বিকৃত হয়ে গিয়েছে এবং তাদের কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। ওই অবস্থায় একমাত্র আশার আলো দেখায় রেসোল্যুট ইন্টিগ্রিটি অর্থাৎ ড্রাগ এলুটিং স্টেন্ট (ডিইএস) চিকিৎসা। করোনারি আর্টারি ডিজিজ-এ (সিএডি) আক্রান্ত রুগি, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের জন্য এই চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকরী। আর এই পদ্ধতিতে ওই বিয়াল্লিশ বছর বয়সি রোগীর চিকিৎসা করে ফলও পাওয়া গিয়েছে।

বর্তমানে গোটা বিশ্বে কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এর কারণে মৃত্যু ঘটছে অনেকের। অত্যধিক মাত্রায় ধূমপান, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এই রোগের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। এই সমস্ত উপসর্গগুলিকে হৃদরোগের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। আর কার্ডিও ভাস্কুলার রোগের সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগ যুক্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এ আক্রান্ত রুগিদের দুই তৃতীয়াংশ মারা যান ডায়াবেটিস থাকার দরুন। ডায়াবেটিক হৃদরোগীদের  রোগের মাত্রা দুই থেকে চারগুণ বেড়ে যায় সাধারণ হৃদরোগীদের তুলনায়। প্রায় ৬৫ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী হৃদরোগ এবং স্ট্রোক-এ মারা যান। এরকম হওয়ার কারণ, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় শর্করার উপস্থিতি। এছাড়া অস্বাভাবিক মাত্রায় কোলেস্টেরল ও ফ্যাট থাকার কারণে রোগীদের রক্ত সংবহন পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই, ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত মানুষের বিশেষ ভাবে প্রয়োজন ড্রাগ এলুটিং স্টেন্ট (ওষুধযুক্ত এই স্টেন্ট রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না)। এটি হল রেসোল্যুট ইন্টিগ্রিটি, যা প্রথম এবং একমাত্র অনুমোদিত এলুটিং স্টেন্ট। এরই মাধ্যমে ডায়াবেটিক কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এ আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়।

কিন্তু এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি সম্পর্কে এখনও অনেকের স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাছাড়া সাধারণ মানুষ অনেকসময় রোগের গুরুত্ব বুঝতে পারেন না কিংবা বুঝতে ভুল করেন। অথচ ডায়াবেটিস হল একটি গুরুতর অসুখ। এই রোগে আক্রান্ত হলেও আপাতভাবে স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। বাইরে থেকে এই রোগের লক্ষণও সবসময় প্রকাশ পায় না। অথচ এই রোগ ভিতরে-ভিতরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের লিভার, কিডনি, চোখ ইত্যাদি দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রমশ নষ্ট হতে শুরু করে।

এছাড়া, ডায়াবেটিস রোগীদের ভিন্ন ধরনের হার্ট অ্যানাটমি দেখা যায়। তাদের রক্তবাহী নালিগুলি ছোটো এবং ভঙ্গুর হয়ে থাকে। ধীরে-ধীরে এগুলির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় চিকিৎসা। সেই কারণে বলা যেতে পারে যে, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হলে, শরীরে অন্য রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগীর মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে।

এভাবেই ডায়াবেটিস ও কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, এই দুই জুড়িদার, মৃত্যুদূত হিসাবে উপস্থিত হয় রোগীর সামনে। তাই, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ-এর সঙ্গে যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাহলে ধমনির ব্লকেজ দ্রুত দূর করার জন্য অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা প্রয়োজন।

রেসোল্যুট ইন্টিগ্রিটি পদ্ধতি এই চিকিৎসায় অন্যতম শক্তিশালী ব্যবস্থা। ডায়াবেটিক কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এ আক্রান্তদের ড্রাগ এলুটিং স্টেন্ট (ডিইএস) চিকিৎসা পদ্ধতি ইউএসএ-র ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দ্বারা অনুমোদিত। এই রেসোল্যুট ইন্টিগ্রিটি নানাভাবে কার্যকরী হয়ে থাকে। যেমন, এটি খুব সরু ধমনির মধ্যে, যেখানে চিকিৎসার প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে কাজ করে। তাছাড়া এর বায়োকম্প্যাটিবল বায়োলিংক্স পলিমার, রোগীদের দেহে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। অতএব, ডায়াবেটিক কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ-এ আক্রান্তদের অমূল্য জীবনকে রক্ষা করার জন্য, মাধ্যম করা উচিত ড্রাগ এলুটিং স্টেন্ট বা ডিইএস-কে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...