মাতৃত্বকালীন অনুভূতির মতো আনন্দদায়ক আর কিছু নেই৷ অনাগত অতিথির অপেক্ষায় দিন গোনা, কীভাবে ছোট্ট সন্তানটিকে ঘিরে আবর্তিত হবে আপনার জীবন সেই ভাবনাতেই মন খুশিতে ভরে ওঠে৷ মনে রাখবেন সুস্থ মনই আপনার গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷
আমরা বেশির ভাগ সময় আমাদের নিজেদের নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ি। সবসময় আমাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা কাজ করে: ‘আমার কী হবে? আমি সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারব কিনা?কিন্তু এসব অমূলক চিন্তা না করে স্থির থাকুন।নীরবতাকে মনের মধ্যে আহ্বান করুন এবং মনে মনে বলতে থাকুন,‘শান্ত হও’।এতে প্রাথমিক অস্থরতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন৷ একটু পরেই দেখবেন আপনার মন শান্ত হয়ে গেছে। যখনই অশান্ত হয়ে পড়বেন তখনই এটি করতে থাকবেন।
পরিবারের কারও সঙ্গে বিবাদে জড়াবেন না৷ অহেতুক উত্তজিত হবেন না৷ বাকবিতণ্ডার পরিবেশ তৈরি হতে দেবেন না৷মনে শান্তি ভাব থাকলে, আপনার গর্ভস্থ শিশুর ভিতরও সেই শান্তির ভাব সঞ্চারিত হবে৷
স্থির হওয়ার ব্যায়াম
একটি চেয়ারে বসুন ও পা দুটিকে মেঝেতে রাখুন। চোখ বন্ধ করুন ও মনে মনে চিন্তা করুন যেন আপনার মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে, একটি বৈদ্যুতিক তার লাগানো রয়েছে।কল্পনা করুন এই বৈদ্যুতিক তার থেকে একটা তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে৷এটি যেন আপনার শরীরে ঢুকে আপনার দেহের সমস্ত বর্জ্যপদার্থ ও খারাপ অনুভূতি শুষে নিচ্ছে। আপনি নিজেকে খুব হালকা বোধ করছেন। প্রথম প্রথম এটি করতে শান্ত জায়গার প্রয়োজন হবে। পরে, আপনি এটি আয়ত্ত করতে পারলে যে কোনো স্থানে বা জায়গায় যেমন- অফিসে, রাস্তায়, পরিবারের সকলের উপস্থিতি সত্বেও করতে পারবেন। মন শান্ত রাখার জন্য এটি একটি মহাষৌধ। এটির উপকারিতা আপনি প্রতি মুহূর্তে বুঝতে পারবেন।
দ্বিতীয় ব্যায়ামটি হল, আপনার দু হাত হালকাভাবে মুঠো করুন এবং আপনার সম্পুর্ণ দেহের ওপর চাপড়াতে থাকুন। মাথা থেকে আরম্ভ করে খুলি, মগজ ও ঘাড় ছাড়িয়ে সম্পুর্ণ দেহে এটা করতে থাকুন। এতে আপনার রক্তচলাচল বেড়ে গিয়ে আপনার দেহে শক্তি উৎপন্ন করতে সাহায্য করবে। আমাদের মাথা চিন্তা করার স্থান। মন সবসময় কোনও না কোনও বিষয় নিয়ে চিন্তা করেই চলেছে এবং একটি সমাধানে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে, তা সে ভালো হোক বা খারাপ। দেহের রক্ত চলাচল বাড়লে কিছু পজিটিভ ভাইবস তৈরি হবে, যা আপনার মনকেও অনন্দময় করে তুলবে৷
পেটস মন ভালে করতে পারে
প্রাণীদের নিস্বার্থ ভালোবাসা, শিশুসুলভ আচরণ, খেলাপ্রিয়তা ও অল্পে সন্তুষ্ট থাকার প্রবণতা আপনার মধ্যেও প্রবাহিত হবে। তাই, প্রাণীদের সঙ্গী করা মন ভালো রাখার ভালো উপায়।হিনের অনেকটা সময় কেটে যায় ওদের আদর যত্নে৷ এতে আপনি অনেকটা সময় ব্যস্তও থাকবেন, আর আপনার মনের কোমল অনুভূতিগুলোও সক্রিয় থাকবে৷
ছবি আঁকুন
ছোটো শিশু মানেই নিষ্পাপ ও পবিত্র কিছু। ছোটো শিশুদের মতো রঙপেন্সিল নিয়ে আঁকতে আরম্ভ করুন। চোখ বন্ধ রেখে কিছুক্ষণ ধ্যান করে মন শান্ত করুন। এরপর, আপনার মস্তিষ্ক সচল করার জন্য কাগজের ওপর একটি বৃত্ত আঁকুন এবং এটিকে আট ভাগে ভাগ করুন। এই আট ভাগে আপনার ইচ্ছামতো রঙ দিয়ে বৃত্তটি পূরণ করুন। ছবি আঁকার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি জানুন বা না জানুন এসব নিয়ে কোনও চিন্তা করবেন না। মনের ভাবনায় ঠিক যা ফুটে ওঠে, তাই এঁকে ফেলুন এবং ইচ্ছেমতো রং ভরুন৷
গাছ লাগান
গাছ লাগানো খুব ভালো একটা অভ্যাস। বাগান করা মনের খোরাক জোগায়। গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা আপনাকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাবে, প্রকৃতিপ্রেমিক করে তুলবে, প্রকৃতির মতো উদার হতে সাহায্য করবে। বাড়িতে করা বাগান থেকে আপনি সতেজ বাতাস পাবেন। তাছাড়া, আপনি রান্নার জন্য তাজা সবজি পাবেন।
হাসি খুশি থাকুন
মনোবিজ্ঞানীরা সকলকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট প্রাণ খুলে হাসার পরামর্শ দিয়েছেন।এই বিশেষ সময় তো আরও বেশি করে সেটা মেনে চলা উচিত৷ আরও কিছু উপায়ে হয়তো আপনি আনন্দে থাকতে পারেন। যেমন- প্রতিদিন অন্তত একটি ঘণ্টা প্রিয়জনের সঙ্গে কাটান। তাদের সঙ্গে গল্পে কিছুটা কোয়ালিটি টাইম কাটান।এছাড়া পরিবারের সকলকে নিয়ে টিভিতে পছন্দের কোনো অনুষ্ঠান বা সিনেমা দেখতে পারেন। রাতে ভালো কোনো গল্পের বইও পড়তে পারেন।
সর্বোপরি হতাশা আর দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে মনে রাখতে হবে আপনি যেমনই হন না কেন আপনার মতো পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কেউ কোথাও নেই। পৃথিবীকে একটা সুন্দর শিশু উপহার দিতে চলেছেন আপনি।আপনার ভিতরে রয়েছে সৃষ্টির বীজ৷ তাই অহেতুক টেনশন না করে, আনন্দে থাকুন।