মাথার চুলই যখন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়,সমস্যা বাড়ে তখনই। মধ্য-তিরিশে চুল পড়ে যাওয়া, চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা বৃদ্ধি পায়। আর এই সমস্যার শিকার শুধু মহিলারাই নন, পুরুষরাও। দুষণই হল আপনার চুলের প্রধান শত্রু। সেই সঙ্গে রয়েছে, কড়া রোদ, আয়রন-যুক্ত জল প্রভৃতি নানাবিধ কারণ। সময়ে সেই সব কারণ সমূলে নির্মূল না করলে, বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখতে লাগবে আপনাকে। তাই চুল থাকতে চুলের কদর বুঝুন।Hair care Tips রইল আপনাদের সমস্যা সমাধানে৷
গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চুলের গ্রোথ বেশি হয়। খুব বেশি চুল ধুলে অথবা শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়।৪০ বছরের উর্দ্ধে পুরুষরা বেশিরভাগই টাকের শিকার হন। বহু মহিলারও ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেই চুল পড়ে যাওয়ার কারণে মাথার তালু দৃশ্যমান হয়। প্রতিদিন অ্যাভরেজে একজন মানুষের ১০টা চুল ঝরে যায়।
চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে Balanced diet গ্রহণ করা উচিত। সবুজ শাক-সবজি, ডিম, মেটে, মাছ, গাজর ইত্যাদি চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ যে-কোনও খাদ্যবস্তু চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে উপযোগী। তাছাড়াও অ্যাভেক্যাডো, মেয়জি, কলা অথবা জোজোবা তেল দিয়ে তৈরি চুলের মাস্ক, কন্ডিশনার হিসেবে খুব ভালো কাজ দেয় এবং চুলকে হাইড্রেট করে।
সূর্যের রশ্মি চুল এবং স্ক্যাল্পের ক্ষতি করে। তাই রোদ্দুরে বেরোবার আগে মাথা পুরো ঢেকে বেরোনো বাঞ্ছনীয়। অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে চুলকে বাঁচাবার জন্য দোকানে যেসব হেয়ার প্রোডাক্ট পাওয়া যায়, সেগুলো চুলে লাগিয়ে রোদ্দুরে বেরোনো উচিত।
চুল এমন এক টিস্যু, যার গ্রোথ অন্যান্য টিস্যুর তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি হয়। সুতরাং ছোটো কিংবা লম্বা চুল যাই হোক না কেন, মাথায় চুল থাকলেই তার যথাযথ যত্নের প্রয়োজন। কয়েকটি হার্ব-এর নাম দেওয়া হল যেগুলি চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
মেথিঃ প্রকৃতির অনবদ্য উপহার হিসেবে মেথির গুণ অসামান্য। যুগ যুগ ধরে বহু অসুস্থতার চিকিৎসায় মেথি ব্যবহার করা হচ্ছে। চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায়, একমুঠো মেথি জলে তিন থেকে চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার এই মেথি ভালো করে পিষে শ্যাম্পুর মতো চুলে লাগান। সপ্তাহে দু’বার চুলে মেথির পেস্ট লাগালে, চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় খুব ভালো কাজ দেয়।
তিল গাছের পাতাঃ তিলতেল, তিলপাতা, তিলশিকড়, চুল ঝরে পড়ার সমস্যার একটি প্রাকৃতিক সমাধান। এই হার্ব ১৫ মিনিট জলে দিয়ে ফোটান এবং জলটা ঠান্ডা হতে দিন। এবার জল ছেঁকে নিন। মাসাজ এবং চুল ধোওয়ার কাজে জলটা ব্যবহার করুন। চুলের অকালপক্বতায় এবং চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যাতেও এটা উপকার দেয়।
আমন্ড অয়েল এবং মধুঃ ১ টেবিল চামচ আমন্ড তেল, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টি ডিম একসঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে চুলে লাগান এবং ১ ঘণ্টার মতো রাখুন। আরও ভালো ফল পেতে হলে চুলগুলি একটা সুতির কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। প্রতি সপ্তাহে ১ বার করে এইভাবে যদি চুলের যত্ন নিতে পারেন, তাহলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে চুলের স্বাস্থ্য আবার ফিরে আসবে।
তামাক এবং অলিভ অয়েলঃ এটি বিশেষ ভাবে ব্যবহৃত হয় পুরুষদের চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায়। তামাক গাছের ফুল ভালো করে পিষে পেস্ট বানিয়ে নেওয়া হয়। এর সঙ্গে সামান্য অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিয়ে পুরো মিশ্রণটি অ্যাফেকটেড জায়গায় অর্থাৎ যেখানে টাক পড়া শুরু হয়েছে সেখানে লাগালে উপকার পাওয়া যাবে। রোজ মাসাজ করতে পারলে চুল পড়াও বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে।
অলিভ অয়েল মাসাজঃ অলিভ অয়েল দিয়ে রোজ মাথায় মাসাজ করলে চুলের গোড়া শক্ত হবে, চুল পড়া বন্ধ হবে এবং অকালে চুল পেকে যাওয়াও রোধ হবে। এছাড়া ন্যাচারালি এটি খুশকিও রোধ করবে। অনেকে অলিভ অয়েলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে আমন্ড অথবা রোজমেরি অয়েলও মিশিয়ে নেন, যেহেতু এই তেলগুলি চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই মাসাজের সঙ্গে যদি হট অয়েল ট্রিটমেন্ট ও করা হয় তাহলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
গরুর টাটকা দুধঃ এই পদ্ধতি বহু পুরোনো। টাটকা ফোটানো গরুর দুধ ঠান্ডা করে স্ক্যাল্পে মাসাজ করুন এবং একঘণ্টা এভাবে রেখে দিন, যাতে তা কাজ করে। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। রোজ করতে পারলে চুল পড়া বন্ধ হবে। অনেকে ফোটানো দুধের থেকে ‘র মিল্ক’ লাগানো বেশি পছন্দ করেন। একই ভাবে ফ্রেশ ক্রিম অথবা মাখনও একই কাজে অথবা উপকারে লাগে। মোষের দুধও এক্ষেত্রে কাজ দেবে।
রসুনঃ হার্বাল ওষধি হিসেবে রসুনেরও অপার গুণ। বিভিন্ন ত্বকের সমস্যায় রসুনের ব্যবহার করা হয়। নখের ফাংগাস, আঁচিল, জড়ুল, এগজিমা ইত্যাদি সারাতে রসুন ব্যবহৃৎ হয়। চুলের সমস্যাতেও রসুন নানাভাবে ব্যবহার করা চলতে পারে। যেমন রসুনের তেল, রসুনের রস, রসুন থেঁতো করে ইত্যাদি। মাথার যে-জায়গায় চুল বেশি উঠছে সেখানে এগুলোর একটা লাগিয়ে খানিক্ষণ রেখে শ্যাম্পু করে নিন। থেঁতো করা রসুন স্ক্যাল্প-এ লাগালে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। রসুনের তেল অথবা রসুনের রস চুলের গ্রোথ-এ সাহায্য করে। রসুন খেলেও উপকার হয়।
কালোজিরে এবং অলিভ অয়েলঃ ইউনাইটেড আরব রাজ্যগুলিতে চুল পড়ার সমস্যায় ভালো চিকিৎসায় কালোজিরের ব্যবহার করা হয়। কম আগুনের আঁচে পুড়িয়ে নিয়ে পিষে ডাস্ট তৈরি করা হয়। এটি অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে বোতলে স্টোর করে রেখে দেওয়া হয়। ব্যবহারের সময় ভালো করে মিশ্রণটি নাড়িয়ে নিয়ে, তাই দিয়ে স্ক্যাল্পে মাসাজ করে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হয়। এই চিকিৎসার পদ্ধতি প্রমাণিত এবং বহুল প্রচলিত। চুলের সুস্থ গ্রোথের জন্য এটি খুবই উপকারী।
নারকেলের দুধঃ নারকেলের দুধ সোজাসুজিই স্ক্যাল্পে লাগানো চলে চুলের ভালো গ্রোথের জন্য। টাটকা নারকেল কুরে নিয়ে ভালো করে চিপে দুধটা বার করে নিন। নারকেলের জলের সঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম করে মাথায় লাগান। ১ ঘণ্টা সেইভাবেই রেখে তারপর শ্যাম্পু করতে হবে। রোজ লাগানো যেতে পারে। এটি চুল গজাতে সাহায্য করে।