রিয়া নিজের মুখটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। সুন্দরী না হলেও ভালো দেখতে বলা চলে তাকে। ত্বকের গ্ল্যামার এখনও আগের মতোই আছে কিন্তু বয়স বাড়ছে। ও যে-পেশায় রয়েছে তাতে গ্ল্যামার ধরে রাখার প্রয়োজন রয়েছে। ৩০-এর কোটা দুবছর আগেই পার করে এসেছে সে। রিয়া মনে মনে ঠিক করে নেয় কোনও ভালো বিউটিশিয়ানের কাছ থেকে একটা পরামর্শ নিয়ে নেবে।
গ্ল্যামার ধরে রাখার ইচ্ছে প্রতিটি নারীই মনে মনে পোষণ করে। অতীতে ভেষজ প্রসাধনী ব্যবহারের মাধ্যমে নারীরা নিজেদের রূপচর্চা করতেন। ত্বকের যত্ন নিতেন, যৌবন ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাতেন। এখন বিজ্ঞানের যুগে চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়েছে। বাড়ির ন্যাচারাল প্রোডাক্টস ছাড়াও এখন বাজারে বিকল্প রয়েছে৷বড়ো বড়ো প্রসাধনী কোম্পানিগুলো নিয়ে এসেছে দামি এবং ফলপ্রদ বিউটি প্রোডাক্টস। এগুলোই এখন মহিলারা ব্যবহার করছেন রূপ-যৌবন অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চেহারা এবং নিখুঁত ত্বক বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন বিউটি ট্রিটমেন্ট করাতেও এখন আর কেউ পিছপা হচ্ছে না।
আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে ডার্মাল ফিলার এখন বলিরেখা দূর করে ত্বককে সজীব রাখার আধুনিকতম উপায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের টানটান ভাব নষ্ট হয়ে যায়। ত্বক ঝুলে পড়ে ফলে বলিরেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চোখের নীচের ত্বক কুঁচকে যায়, গাল ভিতর দিকে ঢুকে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। ঠোঁটের ত্বকও তার কোমলতা হারিয়ে ফেলে শক্ত এবং রুক্ষ হয়ে ওঠে।
নন-সার্জিক্যাল কসমেটিক ট্রিটমেন্ট
ডার্মাল ফিলার এক ধরনের নন-সার্জিক্যাল কসমেটিক ট্রিটমেন্ট যার দ্বারা ঠোঁটের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনে ত্বককে টানটান, উজ্জ্বল এবং মসৃণ করে তোলা যায়। এই পদ্ধতির সাহায্যে ত্বকের বলিরেখা, কোঁচকানো ভাব অথবা ত্বকের যে-কোনও সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব হয়। প্রকৃতিগত কারণে এবং সূর্যের প্রখর রশ্মির জন্যেও বয়স বাড়ার সঙ্গে ত্বকেও যৌবন হারিয়ে বার্ধক্যজনিত বলিরেখার প্রভাব পড়তে দেখা যায়। এছাড়াও স্মোকিং, সঠিক ডায়েট অনুযায়ী খাদ্যগ্রহণ না-করা ইত্যাদি কারণও রয়েছে, ত্বকের বার্ধক্যজনিত ক্ষয়ক্ষতির জন্য।
বয়সের সঙ্গে কোলাজেন ফ্যাট এবং অন্যান্য তত্ত্ব যা ত্বককে পুষ্টি প্রদান করে, সেটার মাত্রা কম হতে শুরু হয়।ফলে ত্বক পাতলা ও স্পর্শকাতর হয়ে যায়। ত্বকের রেখা এবং কোঁচকানো-ভাব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ত্বকের লাবণ্য এবং মসৃণতা নষ্ট হওয়া শুরু হয়।
আধুনিক নারীরা আজ সকলেই নিজের নিজের পেশায় পরিচিতি বাড়াতে ব্যস্ত। তাই সকলেই সৌন্দর্য সচেতন। যৌবনকে ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সঙ্গে, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বেরও অনিবার্যতা এখন অপরিহার্য হয়ে গেছে। ওয়ার্কিং উয়োমেন অথবা শুধুমাত্র গৃহিণী, সকলেই ত্বকের টানটানভাব বজায় রাখতে অথবা ঠোঁটের সৌন্দর্য ধরে রাখতে কসমেটিক সার্জারির সাহায্য নিচ্ছেন। সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য নতুন পন্থা আবিষ্কৃত হয়েছে। কসমেটিক সার্জারির মতো এই টেকনিকে ছুরি-কাঁচির কোনও প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র দরকার একটা ইঞ্জেকশনের। এটাকেই বলা হচ্ছে ডার্মাল ফিলার। ঢুকে যাওয়া, তুবড়ে যাওয়া মুখে এবং সৌষ্টবহীন ঠোঁটে ভলিউম বাড়াবার জন্য এই ডার্মাল ফিলারস-এর প্রয়োগ করা হয়।
প্রথমেই আমাদের কারও মুখের উপর চোখ আটকায়। কিন্তু অনেক সময়েই মুখে কিছু ঘাটতি চোখে পড়ে। অনেক মেয়ের চোখের নীচটা একটু ফোলা থাকে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ‘ব্যাগস’ বলা হয়। এর জন্য সৌন্দর্য হ্রাস পায়। বয়সের সঙ্গে শারীরে তার ছাপ পড়ে প্রকৃতির নিয়মেই। এ ক্ষেত্রেও ডার্মাল ফিলার ইঞ্জেকশন দিয়ে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কতটা মাত্রায় এই ফিলার ইনজেক্ট করা হবে তা পুরোটাই নির্ভর করে শরীরের কোন অংশে এটার প্রয়োগ করা হচ্ছে তার উপর। আধুনিক মেডিকেল সায়েন্স-এ ডার্মাল ফিলার পদ্ধতি সবথেকে আধুনিকতম চিকিৎসা, ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে যেটির কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
সহজ প্রক্রিয়া
কসমেটোলজিস্টদের মতে, ত্বকের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, সৌন্দর্য হারিয়ে ত্বক ঝুলে পড়ে। বলিরেখা ফুটে ওঠে এবং ত্বকে ভাঁজ পড়তে আরম্ভ করে। ডার্মার ফিলার ত্বকের এই খামতিটাকে পুরণ করে। ঢুকে যাওয়া মুখ ও ঠোঁটে পূর্ণতা এনে, চেহারায় লাবণ্যের দ্যুতি ছড়িয়ে দেয়। রেস্টিলেন এবং হাইলোরোনিক অ্যাসিড, এই ট্রটমেন্টের প্রধান দুটি উপকরণ। হাইলোরোনিক অ্যাসিড শরীরে জলের সঙ্গে মিশে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাইলোরোনিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যেতে থাকে ফলে ত্বক ঝুলে পড়ে। ট্রিটমেন্টের অঙ্গ হিসেবে হাইলোরোনিক অ্যাসিড (এইচএ) বেস জেল ত্বকের নীচের অংশে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এটা যেমন ত্বকের ‘ইয়ং লুক’ ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে তেমনই মুখ, গাল, ঠোঁট ইত্যাদির সৌন্দর্যের ব্যালেন্স সঠিক রাখতেও সাহায্য করে। ডার্মাল ফিলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শরীরে ইঞ্জেক্ট করে দেওয়া হয় এবং পরিণাম শীঘ্রই চোখে পড়ে। এই ট্রিটমেন্টে কোনওরকম ব্যথা অনুভূত হয় না। শুধু যে-জায়গায় ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় সেখানটা ২ থেকে ৩দিন একটু ফোলা থাকে তারপর নিজে থেকেই ফোলাভাব কমে যায়।
ঠোঁট করে তুলুন সুডৌল ও আকর্ষণীয়
‘সেক্সি লুক’ যদি আপনার ড্রিম প্রজেক্ট হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মুশকিল আসান করবে ডার্মাল ফিলার। যে-কোনও ভালো ডার্মাটোলজিস্ট আপনার এই ইচ্ছে সহজেই পূরণ করতে পারবেন।ডাক্তারের মত, ডার্মাল ফিলার-এর সাহায্যে ঠোঁট আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। সব মেয়ের ঠোঁটই যে প্রকৃতিগতভাবে সুন্দর আকারের এবং আকর্ষণীয় হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। অতিরিক্ত পাতলা অথবা মোটা ঠোঁট অনেক সময়েই মেয়েদের সৌন্দর্য ম্লান করে দেয়।
সৌন্দর্যচর্চাজনিত কিছু পরীক্ষানিরীক্ষায় এই কথাই প্রমাণিত হয়েছে যে, মেয়েদের শরীরের সবথেকে সেক্সি অঙ্গ হিসেবে ঠোঁট-কেই চিহ্নিত করা হয়েছে। নারীশরীরকে আকর্ষণীয় করে তোলা এবং সৌন্দর্যের দীপ্তির প্রতিফলন প্রথমেই ঠোঁটের আকৃতির উপর নির্ভর করে। ঠোঁটের সৌন্দর্যের জন্যই সেলিব্রিটিদের মধ্যে প্রিয়ংকা চোপড়া, ক্যাটরিনা কইফ, অ্যাঞ্জেলিনা জোলির নাম, বারবার খবরের পাতায় নানাভাবে চর্চিত হয়েছে। ঠোঁট অতিরিক্ত পাতলা অথবা অসুন্দর হলে ডার্মাল ফিলারস-এর সাহায্যে ঠোঁটকে সুডৌল, সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। আধুনিক যুগে জুভিডার্মের মতো ঠোঁটের সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনে ন্যাচারাল লুক দেয় ফিলার। এই কারণেই লিপ অগমেন্টেশন করার পরিবর্তে ফিলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। এই ট্রিটমেন্টে কাটাছেঁড়া করার কোনও প্রয়োজন হয় না।কোনও সাইড-এফেক্ট নেই৷
সধারণত ৩৫ থেকে ৪৫বছরের মহিলারা এ চিকিৎসা করিয়ে থাকেন। ডার্মাল ফিলার শুধুমাত্র মুখ, গাল অথবা ঠোঁটের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, এমন নয়। এটা মুখের ব্রণ, অ্যাকনে ইত্যাদির দাগও মুছে ফেলতে সাহায্য করে। যেখানে দাগ বেশি থকে ওই জায়গায় ইনজেকশন দেওয়া হয়। চিকিৎসার খরচ, অপারেশনের খরচ অপেক্ষা অনেক কম। এই ট্রিটমেন্টের খরচ পড়ে ৩৫০০-৫০০০ টাকার কাছাকাছি। এই ট্রিটমেন্টের জন্য হাসপাতালে থাকার দরকার পড়ে না ফলে খরচের পরিমাণ অনেকটাই কম হয়ে যায়।