পারিপার্শ্বিক চাপে আপনার যৌবন কি খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাচ্ছে? গাছের শুকনো পাতার মতো লাবণ্যহীন হয়ে যাচ্ছে আপনার ত্বক? মুখ শ্রীহীন হয়ে পড়ছে বলিরেখার করাল আঁচড়ে? তাহলে এবার নিজের প্রতি মন দেওয়ার সময় হয়েছে। সময় হয়েছে হারানো জৌলুস ফেরাবার। শুধু মেক-আপ ট্রিক্স বা শরীর চর্চার প্রসাধন সামগ্রীই নয়– হালফিল সময়ের পঁয়ত্রিশ পেরোনো মহিলারা, আধুনিক কারিগরির সাহায্যও নিচ্ছেন যৌবনকে চিরস্থায়ী করার জন্য।
আসলে বাস্তব সত্যটা এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এই স্ট্রেসফুল লাইফস্টাইলই অনেকাংশে দায়ী আপনার অকাল বার্ধক্যের জন্য। অনুজ্জ্বল ত্বক, চোখের নীচে কালি, মুখে অজস্র কুঞ্চন, সবই এই সময়ের অযাচিত দান। তাই মধ্য-তিরিশে পা দেওয়া মাত্রই আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে বাজার ছেয়ে যাওয়া অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্টস্-এর উপর। ইদানীং ভীষণই চাহিদা বেড়েছে রিংকল ফিলার ক্রিমের উপর, যা ত্বকের বলিরেখা হ্রাস করতে সাহায্য করে। ডার্ক সার্কল সরানোর ক্রিমও জরুরি একটি সামগ্রী হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যকে দাগহীন করতে।
যৌবন ধরে রাখতে প্রসাধনীর যতই অবদান থাকুক, নিজেকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে ডায়েটের একটা বড়ো ভূমিকা আছে। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে এমন খাদ্য গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। ভেতর থেকে আপনি সুরক্ষিত হলে, তবেই তার প্রতিফলন পড়বে আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্যের উপর।
কিছু বিশেষ টিপ্স এখানে দেওয়া হল, যা আপনার সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে, তথা যৌবনকে প্রলম্বিত করতে সহায়তা করবে।
- বলিরেখার অন্যতম কারণ হল রোদ। তাই শীত-গ্রীষ্ম যখনই রোদে বেরোবেন, সানস্ক্রিনের সুরক্ষা প্রয়োগ করতে ভুলবেন না। এতে ত্বকের কুঞ্চন রোধ করা সম্ভব হবে।
- ত্বক অতি শুষ্ক হয়ে গেলেও, এতে বলিরেখার প্রভাব পড়ে। তাই ত্বক ভেতর থেকে আর্দ্র রাখুন। ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
- যারা প্রতিদিন রাস্তায় বের হন, ত্বক পরিষ্কার করাটা তাদের রুটিনের অঙ্গ হওয়া উচিত। প্রথমে ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। তারপর ফেসওয়াশ-এর সাহায্যে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর স্কিন টোনার ব্যবহার করুন ত্বকের শিথিলতা রোধ করতে এবং শুষ্কতা ঠেকাতে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করুন।
- ত্বকের লাবণ্য বজায় রাখতে লিকুইড বা ক্রিমি মেক-আপ ব্যবহার করুন।
- ত্বকে বলিরেখার আধিক্য থাকলে মেক-আপ করার সময় বিশেষ সতর্কতা নিন, যেন ব্লেন্ডিং ঠিকমতো হয়। তা না হলে মুখের লাইন্স আরও প্রকট হয়ে বিসদৃশ লাগবে।
ফেসিয়ালে ফায়দা
বিউটিশিয়ান শাহনাজ হুসেনের মতে, মধ্য তিরিশের পর ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে ফেসিয়াল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফেসিয়ালের দ্বারা, ক্লিনজিং, মাসাজ দুটি কাজই হয়। ফেস মাস্ক ব্যবহারে মৃত কোশ ঝরে যায়। মাসাজের ফলে ত্বকে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। সেই কারণেই ত্বকের লাবণ্য অচিরেই ফুটে বেরোয়।
- ত্বক পরিষ্কার করার অনন্য উপায় হল ফেসিয়াল।
- এর সাহায্যে বলিরেখা দীর্ঘদিন রোধ করা যায়।
- ত্বকের টানটান ভাব বজায় থাকে, ত্বকে চট করে শিথিলতা আসে না।
- অনুজ্জ্বল ত্বকে লাবণ্য ফিরে আসে।
- ত্বক মসৃণ হয়ে ওঠে ফলে মেক-আপ করার সময় ত্বকে অসামঞ্জস্য ভাব ফুটে ওঠে না।
ত্বক বাঁচাতে নয়া কারিগরি
- ফিলার-এর সাহায্য নিয়ে মুখের হারানো তারুণ্য ফিরিয়ে আনুন। মুখের শিথিল ভাব ভরাট করতে ডার্মাল ফিলার-এর ভূমিকা অতুলনীয়।
- গাল ঝুলে পড়লে হাই ডেনসিটি ফিলিং মেটিরিয়াল-এর সাহায্য নিতে পারেন। এতে ভাঙা গাল ভরাট দেখাবে।
- ত্বক শিথিল হলে থার্মাস স্কিন টাইটনিং-এর সাহায্য নিন। একটি সিটিং-এই ত্বকের বেহাল অবস্থা আয়ত্বে আসবে।
- এই পদ্ধতি ছাড়াও ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাইক্রোডার্মা অ্যাব্রেশন টেকনিক, যা ত্বকের উপর ব্রণ বা পুরোনো ক্ষত জনিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ ত্বককে সমান করে। এই প্রক্রিয়া ফেসিয়ালের চেয়েও কার্যকরী। বেশ কয়েকটি সিটিং নিলে ত্বকের বলিরেখা কমে যায় এই ট্রিটমেন্ট-এ। আজকাল মাইক্রোডার্মা অ্যাব্রেশন কিট্স পাওয়া যায়, যার সাহায্যে ঘরে বসেই স্কিন ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব।
ইয়ং থাকার সিক্রেট
মেক-আপ, প্রসাধনী বা আধুনিক কারিগরি– যেটারই শরণাপন্ন হন, মনে রাখতে হবে অন্তরের তারুণ্যই হল আপনার তরতাজা থাকার শ্রেষ্ঠ উপায়। তাই সাজগোজের পাশাপাশি ফিটনেস-এ মন দিন। হালকা এরোবিক্স বা যোগ ব্যায়াম করুন। সকাল বা বিকাল যখনই সময় পাবেন হাঁটুন। তেল-মশলা বর্জিত খাবার খান। ত্বক নমনীয় করতে ফল এবং জল– দুই-ই পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করুন।