স্বাভাবিক নিয়মে জীবনের নানা বাঁকে মানুষের জীবনে হতাশ হওয়ার মতো পরিস্থিতি আসতে পারে; দুঃখ-কষ্ট জীবনেরই অংশ। এসব এলে হতাশ হয়ে পড়া কিন্তু কাজের কথা নয়৷বিষণ্ণতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শুরুতেই এর প্রতি যথাযথ দৃষ্টি না দিলে এ থেকে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে, বড়ো ধরণের সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে৷ এটা অতিমারির পার্শপ্রতিক্রিয়াও বলা যেতে পারে৷বিষণ্ণতা তারই অংশ৷।কাজ হারানো বা প্রিয়জন হারানো মানুষের জীবনে জায়গা করে নিচ্ছে হতাশা৷ সামাজিক ভাবে মানুষটি বিচ্ছ্ন্ন হয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয় এই পরিস্থিতিতে৷ কিন্তু সুস্থ জীবনশৈলীতে ফেরার ইচ্ছেটাও থাকে মানুষেরই হাতে৷ তাই প্রথমেই চাই সচেতনতা৷

গবেষক ও চিকিৎসকরা মনে করেন, সাধারণভাবে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন তার জীবদ্দশায় কখনও না কখনও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা হতে পারেন।মনঃচিকিৎসকরা বলেন  বিষণ্ণতায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ শতাংশের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয়ে থাকে।আর খুব বড়ো একটা অংশের মানুষ নেশার জিনিস আঁকড়ে ধরেন হতাশা ভুলে থাকতে৷কিন্তু এই দুটোর কোনওটাই কিন্তু নিষ্ক্রমণের পথ নয়৷তাই গোড়াতেই এর থেকে বেরিয়ে আসা দরকার৷

মানুষের কোনো বিষয়ে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া বা এ ধরণের নানা কারণে মন বিষণ্ণ হতেই পারে। বিষণ্ণতা মানুষের মনের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।মনে রাখতে হবে টানা দুই সপ্তাহ মন খারাপ থাকা বা আগে যেসব কাজে  আনন্দ অনুভব করতেন, সেসব স্বাভাবিক কাজগুলোতে আনন্দ না পাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে, এটিকে বিষণ্ণতার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।একজন মানুষের মধ্যে যে-কোনও আবেগের পরিবর্তন এক দিনে হয় না৷  অনেক দিন ধরে নেতিবাচক চিন্তা করতে করতে যখন সেটা দৈনন্দিন কাজকে প্রভাবিত করে, তখনই বুঝতে হবে হতাশা ঘিরে ধরছে৷ তখনই আপনাকে সতর্ক হতে হবে।

কী করে বুঝবেন আপনি হতাশাগ্রস্ত?

  • দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকলে বা নেতিবাচক ভাবনা কাজ করলে
  • যেসব কাজে আনন্দ পেতেন সেসব কাজে আনন্দ ও আগ্রহ কমে গেলে
  • রাতে ঘুম অস্বাভাবিক কমে গেলে বা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘুম পেলে
  • খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া বা অতিরিক্ত খিদে বেড়ে গেলে
  • হঠাৎ করে ওজন কমতে শুরু করলে
  • কাজে ও চিন্তায় মন্থরতা শুরু হলে
  • সারাক্ষণ নেতিবাচক চিন্তা করা বা নিজেকে সবকিছুতে দায়ী মনে হওয়া
  • সিদ্ধান্তহীনতা বা মনোযোগ কমে যাওয়া
  • কষ্ট ভুলতে নেশার উপকরণ আঁকড়াতে চাওয়া
  • আত্মহত্যার চিন্তা বা আত্মহননের চেষ্টা করা

যতই হতাশা বোধ করুন না কেন, নিজে এর মুক্তির উপায় না খুঁজে একজন মনোবিদদের পরামর্শ নিন। নিজে থেকে অনেক সময় হয়তো সমস্যার সমাধান করা যায় না, কিন্তু অভিজ্ঞদের পরামর্শে আপনার সমস্যার জট খুলতে পারে।

যাদের ক্ষেত্রে সমস্যা অতটা জটিল নয়, তারা জীবনে কিছু জিনিস মেনে চলুন

  • ভুল হওয়ার ঝুঁকি মেনে নিয়ে কাজ শুরু করুন। কাজ করলে ভুলের আশঙ্কা থাকবেই, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও সামনে এগোনোর মনোভাব গড়ে তোলা উচিত।
  • ভুল করলে আপনার শেখার সুযোগ বেশি থাকে। ভুল থেকে শেখার মানসিকতা গড়ে তুলুন।হাল ছেড়ে না দিয়ে কাজটিতে আবার হাত দিন৷
  • নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে তারপর কাজ করুন।
  • আপনার ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাস আপনার কাজের মান ভালো করতে অনুপ্রেরণা দেবে।
  • যেকোনও কাজ করার আগে সময় নিন। তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজ করবেন না।
  • কোনো কাজ শেষ করে কয়েকবার পুনরায় পরীক্ষা করুন, ভুলত্রুটি কমানোর মাধ্যমে কাজের মান ভালো করা যায়।
  • নিজেকে নিজে পুরস্কৃত করতে শিখুন।এর ফলে একটা ফিল গুড ফ্যাক্টর কাজ করবে
  • জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে নিজে উত্‍সাহ দিতে শিখুন।

আসল কথা হল নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন৷ নিজেকে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে শিখুন৷ নিজের জন্য বই কিনুন, কিংবা  ছোট্ট অ্যাকুরিয়ামের মাছ উপহার দিন।পোষা প্রাণিটি আপনাকে সহানুভূতিশীল হতে শেখাবে৷ আপনার তার প্রতি দায়িত্ব তৈরি হলে বাঁচার তাগিদ বাড়বে৷ অন্যরা কে কী ভাবছে আপনাকে নিয়ে, তা না ভেবে কাজের দিকে মনোযোগ দিন।নিজের জীবনকে সুন্দর করে তুলুন৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...