হাসপাতাল, নার্সিংহোম থেকে ছোটোখাটো ক্লিনিক– সব জায়গাতেই সাদা পোশাকে কর্মরত নার্সদের উপস্থিতি মাস্ট। অসুস্থ রোগীর পরিচর্যা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দান থেকে মুমূর্ষুর সেবা– চাহিদার তুলনায় নার্সদের সংখ্যা অপ্রতুল। ফলে নার্সিং-এর ক্ষেত্রটিতে প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে। নার্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে যে-সুযোগ আপনিও পেতে পারেন। তার আগে এই প্রশিক্ষণ সম্পর্কে কিছুটা ওয়াকিবহাল হওয়া দরকার।

বিষয় যখন নার্সিং

নার্সিং হল রোগীর চিকিৎসা নির্ভর দেখভাল। বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণে তাই জোর দেওয়া হয়। সাইকোলজি, মাইক্রো বায়োলজি, ফিজিয়ো থেরাপি, নিউট্রিশন, আইটি প্রভৃতি বিষয় থাকে পাঠ্যক্রমে। নার্স মানেই অর্ধেক চিকিৎসক। কারণ, ডাক্তার না থাকলে মুমূর্ষু রোগীর প্রাথমিক সেবা ও চিকিৎসার ভার নার্সদেরই।

একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের গুরুত্ব তাই রোগীর কাছে অপরিসীম। বরণীয় ফ্লোরেন্স নাইটিংগল যার বীজটি বপন করেছিলেন। নাইটিংগল-এর প্রচেষ্টাতেই ভারতে প্রথম নার্সিংয়ের ভিত তৈরি হয়। তাঁর প্রস্তাব মেনে ১৮৭১-এ চেন্নাইয়ে (তৎকালীন মাদ্রাজ) প্রথম নার্সিং স্কুল স্থাপিত হয় চারজন মহিলাকে নিয়ে। আজ যে-সংখ্যাটা লক্ষাধিক। বর্তমানে সমাজের সমস্ত শ্রেণির মেয়েরাই জীবিকা হিসেবে নার্সিংকে বেছে নিচ্ছেন।

কর্মক্ষেত্র

হাসপাতালে প্রতিদিন হাজারো লোকের আনাগোনা। মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যবহার ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখাটা প্রয়োজন। প্রয়োজনে রোগীর পরিবারকে যথাযথ গাইড করার ব্যাপারটিও বর্তায় নার্সদের উপর।

প্রশিক্ষণ

বর্তমানে দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ও বহু বেসরকারি সংস্থায় নার্সিং পড়ানো হয়। অক্সিলিয়ারি নার্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি (২ বছর), জেনারেল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি (সাড়ে ৩ বছর), বিএসসি (৩-৪ বছর), এমএসসি (২ বছর), এম ফিল (১-২ বছর), পিএইচডি (৩-৫বছর)– এই কোর্সগুলি রয়েছে নার্সিংয়ে। কোন কোর্সে ভর্তি হবেন তা নির্ভর করবে আপনার যোগ্যতার উপরেই।

যোগ্যতা

নার্সিং ডিপ্লোমা ও বিএসসি ট্রেনিংয়ের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ১০+২ (আর্টস অথবা  সায়েন্স)। তবে নার্সিং কোর্সে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। এমএসসি ডিপ্লোমার জন্য বিএসসি পাশ হতে হবে। বয়স সীমা ১৭-৩৫ বছর। বিবাহিতরা এই প্রশিক্ষণের জন্য অনুপযুক্ত। তবে নার্সিং ট্রেনিং সম্পন্ন হওয়ার পর কোনওরকম বিধিনিষেধ নেই।

প্রবেশ প্রক্রিয়া

জেনারেল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি পাঠ্যক্রমের জন্য গোটা দেশে ২১৮০-টি কেন্দ্র, বিএসসি নার্সিংয়ের জন্য ১৩৭৫-টি কলেজ এবং মাস্টার ডিগ্রির জন্য ৪০৫-টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি হল– ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট, ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হসপিটাল (চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল), ক্যালকাটা নার্সিং ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, জিএনএম স্কুল অফ নার্সিং, এসএসকেএম হাসপাতাল। ট্রেনিং চলাকালীন শিক্ষার্থীদের স্টাইপেন্ড-এরও ব্যবস্থা রয়েছে। পাঠ্যক্রম শেষের পর এক বছরের বিশেষ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক।

কর্মসংস্থানের সুযোগ

একটা সময় পেশাদার নার্সদের প্রয়োজনীয়তা সীমাবদ্ধ ছিল সরকারি হাসপাতালেই। আজ চিত্রটা বদলে গেছে। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল-সহ বহু ধরনের চিকিৎসাকেন্দ্রে চাকরির সুযোগ রয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সদের। সব মিলিয়ে সারা দেশে এই পেশায় কর্মসংস্থানের সংখ্যাটা সাত লাখেরও বেশি।

  • হাসপাতাল, নার্সিংহোমে রোগীদের পরিচর্যায় স্টাফ নার্স পদে।
  • ওয়ার্ড সিস্টার কিংবা নার্সিং সুপারভাইজার পদে।
  • সেনাবাহিনীতে। মিলিটারি নার্সিং সার্ভিস ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম অংশ। লেফটেন্যান্ট থেকে মেজর জেনারেল স্তরের পদমর্যাদা পযন্ত দেওয়া হয় নার্সদের।
  • ফার্মাশিউটিক্যাল কোম্পানিগুলিতে ভালো মাইনের চাকরির সুযোগ।
  • এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলি যাত্রী পরিষেবার জন্য নার্স নিয়োগ করে।
  • নার্সিং ট্রেনিং ইন্সটিটিউটগুলিতে শিক্ষকতার সুযোগ।
  • ক্লিনিক্যাল ইন্সট্রাক্টর, মেডিসিন কাউন্সেলরের মতো বিকল্প চাকরির পথও খোলা থাকে।
  • বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য চাইল্ড কেয়ারেও নার্স নিয়োগ করা হয়।

উপার্জন

শুরুতে হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলিতে অনভিজ্ঞ নার্সদের বেতন মোটামুটি মাসে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পারিশ্রমিকের অঙ্কটা বেড়ে ২৫-৩০ হাজার কিংবা তারও বেশি হয়। পূর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সরা চাইলে নিজস্ব মেটারনিটি হোম খুলে মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা অনায়াসে উপার্জন করতে পারেন।

সেবার মানসিকতা ও কাজের প্রতি দায়বদ্ধতার পাশাপাশি আত্মসংযম ও শালীনতাবোধ– এই গুণগুলি যদি আপনার মধ্যে থাকে, তাহলে অনায়াসেই এই পেশাকে বেছে নিতে পারেন। আত্মসুখী, আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা নিয়ে নার্সিংয়ে না আসাই ভালো। মনে রাখবেন এই পেশায় রাতেও কাজ করতে হয়। সুতরাং মানসিক ও শারীরিক ভাবে পরিশ্রম করার জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...