স্বামীকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না।

মালবিকার সংসার Happy married life । বিয়ের প্রথম পাঁচ বছর সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো। স্বামী, দুই সন্তানকে নিয়ে একেবারে ‘হ্যাপি ফ্যামিলি’ মালবিকার। স্বামী অলোককে নিয়ে তার গর্বের অন্ত নেই। সংসার ও স্ত্রীর প্রতি সদা দায়িত্ববান ও যত্নশীল। কোনও কিছুরই ত্রুটি নেই। সেই অলোকের মধ্যে পরিবর্তন। দেরি করে বাড়ি ফেরা এবং নানা আছিলায় ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া। একদিন মালবিকার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, যখন জানতে পারল অন্য এক মহিলার প্রতি আকৃষ্ট তার স্বামী। শপিং মলে বান্ধবীর হাত ধরে অলোককে ঘুরতে দেখেছে মালবিকার মাসতুতো বোন।

প্রিয়া ও প্রশান্তের ম্যারেজ লাইফ দশ বছরের বেশি পুরোনো। দু’বছর আগে প্রশান্ত চাকরিতে প্রোমোশন পেয়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যায়। কলকাতার নামি স্কুলের শিক্ষকতার চাকরি এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কারণে স্বামীর সঙ্গে যেতে পারেনি প্রিয়া। দূরে একাকী থাকার ফলে ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে থাকে তাদের মধ্যে। নতুন শহরে, নিঃসঙ্গ প্রশান্ত খুঁজে নেয় আর-এক মনের মানুষকে, যা ফাটল ধরিয়ে দেয় প্রিয়া-প্রশান্তের দশ বছরের সুখের সংসারে।

প্রিয়া বা মালবিকার সংসার শুধু নয়, এই ঘটনা আজ শহুরে জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গেছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব, মানসিক ব্যবধানের একাধিক কারণ রয়েছে। অনেকাংশে স্ত্রীরাও এর জন্য দায়ী। কখনও স্বামীদের উদাসীনতাও ব্যবধানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাড়ির কর্তৃদের দ্বারা তৈরি সমস্যাগুলি একেবারে অচেনা নয়। একটু চোখ ও মন খোলা রাখলেই সমস্যাটির কারণ চিহ্নিত করা যায় এবং তা দূর করার সহজ পন্থাটিও বের করে ফেলা যায়। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সহমর্মিতা ও সহানুভূতির সঙ্গে স্বামীর সমস্যার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

স্ত্রীদের চালচলন, লাইফস্টাইল, সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড়ো বাধা

 সংসারে স্ত্রীদের কর্তৃত্ব ফলানো, সন্দেহ বা অবিশ্বাস, অবহেলা, পজেসিভনেস সমস্যার জট তৈরি করে। খুঁতখুঁতে মানসিকতা, অতিরিক্ত ঈর্ষা, লোভ, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে। আর এই সমস্যাগুলি দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হলে, দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। শারীরিক ও মানসিকভাবে স্ত্রীর সঙ্গে এই ব্যবধানটা অন্য মহিলার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে স্বামীদের।

স্বামীদের কীভাবে বশে রাখতে হয়, প্রাচীনকাল থেকেই মা-দিদিমারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সেই টিপস্ দিয়ে আসছেন। বর্তমানের ইন্টারনেটের যুগেও সে পরামর্শগুলি এখনও কার্যকর, যা মেনে চললে দাম্পত্য কলহের অনেক সুরাহা সম্ভব। স্বামী-স্ত্রীর কেমিস্ট্রিতে তৃতীয়পক্ষের আগমনের সম্ভাবনা আটকানোর পরামর্শ রইল আপনাদের জন্য।

প্রয়োজনীয় ৭-টি টিপস

(১) যত্নশীল হন। স্বামীর প্রয়োজনীয়তার দিকে খেয়াল রাখুন। স্বামী যখন ঘরে থাকবে বাড়তি মনোযোগ দেবেন। স্বামীর সাফল্যে ভাগীদার হন ও তার কাজের প্রশংসা করুন।

(২) ভোজন, স্বামীকে বশে রাখার সহজ রাস্তা। কী পছন্দ করে, কী করে না, সেদিকে খেয়াল রেখে, খাবারের টেবিলের মেনু সেইমতো সাজান। পরিমিত ও সুস্বাদু খাবার, সঠিক উদরপূর্তির মাধ্যমে সহজেই হূদয় জয় করে নিতে পারেন।

(৩) স্বামী-স্ত্রীর কেমিস্ট্রি সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করবেন যথাসম্ভব কাছে থাকতে, সময় দিতে। চাকরির জন্য আলাদাভাবে থাকা, বাপের বাড়িতে দীর্ঘদিন কাটানো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। প্রয়োজনে কিছুটা ত্যাগও স্বীকার করতে হবে এহেন পরিস্থিতি কাটাতে।

(৪) সন্দেহ, অবিশ্বাস, সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করে। অন্ধকার বয়ে আনে বৈবাহিক জীবনে। তাবলে কি স্বামীকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করবেন? একেবারেই না। স্বামীর কাজকর্মের প্রতি ওয়াকিবহাল থাকাটা জরুরি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সাহায্য নিতে পারেন এব্যাপারে।

(৫) স্ত্রীদের সাপোর্টিভ ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীর খুঁটিনাটি বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। ডমিনেট করার মানসিকতা ঝেড়ে ফেলুন। হাসিমুখে, সুন্দরভাবে স্বামীর সামনে দাঁড়ান। স্ত্রীদের খুঁতখুঁতে, সন্দেহবাতিক মানসিকতা, অবহেলা এবং সান্নিধ্যের অভাবে বিরক্ত হয়ে অনেক সময় স্বামীরা বাইরে সময় কাটানো বেশি পছন্দ করেন। যার পরিণতিতে অন্য মহিলার মধ্যে ভালোবাসা খোঁজার চেষ্টা থাকাটা স্বাভাবিক ঘটনা।

(৬) স্বামীর বিশেষ ইচ্ছেতে কখনও না বলবেন না। হতে পারে আপনি ব্যস্ত, বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত কিংবা শরীর ভালো নয় বা ক্লান্ত, সেক্ষেত্রে সরাসরি ‘না’ নয়। বিনয়ের সঙ্গে বলতে পারেন ‘অন্য কোনও সময়ে’। তারপর সময় সুযোগ বুঝে স্বামীকে ডেকে নিন নিজের কাছে। অন্তরঙ্গ হয়ে তৈরি করুন রোমান্টিক পরিবেশ। একে-অপরের মধ্যে মিশে যান। মনে রাখবেন এব্যাপারে স্বামী যেন কখনওই মনে না করে সে অবহেলিত।

(৭) সন্তানদের প্রতি যত্ন নিন। কিন্তু স্বামীকে অবহেলা করে নয়। প্রত্যেক বাবা-মার উচিত সন্তানদের প্রতি নজর দেওয়া। তবে কখনওই নিজেদের সখ-আহ্লাদ-চাহিদাকে বাদ দিয়ে নয়। সন্তান ও স্বামীর মধ্যে ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত জরুরি। বাচ্চাদের কাজে স্বামীকেও সঙ্গী করে নিন। তাহলে তিনিও অনুভব করতে পারবেন সন্তানদের লালন-পালন কতটা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। আপনার কাজের চাপ, শারীরিক ও মানসিক ধকলের কথা মাথায় রেখেই অ্যাডজাস্ট করার কথা স্বামীও ভাববেন।  উপরোক্ত টিপসগুলি মেনে চললে পশ্চিমী দুনিয়ার মতো যখন-তখন ডিভোর্স নয়, আপনার দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠবে দীর্ঘ ও সুখের। আধুনিকতা মানে নিজের সংস্কৃতি, সভ্যতার ভালো গুণগুলি ভুলে গিয়ে পশ্চিমী কালচারকে অন্ধের মতো অনুকরণ, অনুসরণ করা নয়।

দাম্পত্য জীবনকে সুখের করে তুলতে Happy married life স্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিপসগুলি মানলে বারমুখী মনোভাবসম্পন্ন স্বামীকেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। টিকে থাকতে বর্তমান যুগের সঙ্গে পা মেলাতে হবে আমাদের সবাইকে। কিন্তু কখনওই মানুষের স্বাভাবিক ও সহজাত প্রকৃতিকে পালটে নয়, তাহলে আপনার জীবনে জটিলতা বাড়বে। বাড়বে দাম্পত্যকলহ, ডিভোর্সের প্রবণতা।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...