Monsoon বা বর্ষা কারও কাছে রোমান্টিক, কারও কাছে আবার বেশ অস্বস্তিকর। তাই, বাড়তি সতর্কতা জরুরি। এখন নানা রোগের গ্রাস থেকে যেমন বাঁচতে হবে, ঠিক তেমনই বর্ষাকালের অন্যান্য সমস্যাও কাটিয়ে উঠতে হবে। এর জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মেনে চলতে হবে জরুরি কিছু পরামর্শ।
বর্ষাকালে বৃষ্টির জলে ভিজে গিয়ে যেমন অসুখবিসুখ হতে পারে, ঠিক তেমনই সতর্ক না থাকলে জিনিসপত্র এবং অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তাই, আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
প্রথমে একটা ভালো ছাতা কিনুন। বাজার থেকে নিজের পছন্দমতো ভালো ব্র্যান্ড-এর একটা ছাতা কিনে রাখা প্রয়োজন। বাড়িতে যদি একাধিক সদস্য থাকেন, তাহলে তাদের প্রয়োজন মতো আরও একটা বা দুটো ছাতা কিনুন। আর যারা দু’চাকার গাড়ি চালান কিংবা ছাতা ব্যবহার করতে অসুবিধা অনুভব করেন, তারা অবশ্যই রেনকোট কিনে রাখুন। এখন বাজারে টু-পিস রেনকোটও পাওয়া যায়। প্রয়োজনমতো সংগ্রহে রাখুন। রেনকোট পরলে যেমন আপাদমস্তক বৃষ্টির জল লাগবে না, ঠিক তেমনই করোনার সংক্রমণও কিছুটা আটকানো যাবে ঠিকমতো স্যানিটাইজ করে ব্যবহার করলে।
ছোটো একটা ওয়াটার প্রুফ ব্যাকপ্যাকও কিনে রাখা জরুরি। কারণ টু-হুইলার চালালে কিংবা বাড়ির বাইরে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেরোলে, এই ওয়াটার প্রুফ ব্যাগ খুব কাজে লাগবে। এতে রেনকোট, ছাতা কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে গেলে চেঞ্জ করার জন্য একটা এক্সট্রা পোশাক রাখতে পারবেন। ব্যান্ড-এড, অ্যাডহেসিভ ব্যান্ডেজ, ডিসইনফেকট্যান্ট, স্ক্রাবস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রভৃতি রাখা আবশ্যক। রাস্তায় শরীরের কোথাও কেটেছিঁড়ে গেলে, বৃষ্টির নোংরা জমা জল লেগে যাতে সংক্রমণ না ঘটে, তার জন্য ব্যাগে অবশ্যই রাখুন ফার্স্ট-এড সামগ্রী।
বর্ষায় পায়ের যত্ন নিন। কিনে রাখুন রাবার স্যান্ডাল অর্থাৎ বর্ষার বিশেষ জুতো। কারণ, বর্ষা মানেই বৃষ্টির জল জমতে পারে চলার পথে এবং ওইসময় হাঁটতে গিয়ে যাতে কোনও অসুবিধায় পড়তে না হয়, তার জন্য রাবার বা প্লাস্টিক ফ্লিপ ফ্লপস, স্যান্ডাক প্রভৃতি পায়ে পরা জরুরি।
বর্ষাকালে খুব প্রয়োজনীয় একটি জিনিস হল হেয়ার-ড্রায়ার। কারণ, বর্ষাকালে মেয়েদের মাথার চুল সহজে শুকোতে চায় না। আর চুল ঠিকমতো না শুকোলে মাথায় ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে। যার ফলে চুল পড়া, স্কাল্প-এ ঘা প্রভৃতি সমস্যায় ফেলতে পারে। অতএব, ভেজা চুল অবশ্যই শুকিয়ে নিন হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে।
বর্ষায় বাইরে বেরিয়ে মাথা ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মাথার চুল তোয়ালে দিয়ে মুছে নেওয়া জরুরি, নয়তো ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। অতএব, আগে থেকে কয়েকটা হ্যান্ড টাওয়েল কিনে রাখুন।
বর্ষাকালে মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড় ইত্যাদির উপদ্রব বাড়ে। তাই রাতে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে শোবেন। আর এর জন্য আগে থেকে ভালো মানের মশারি কিনে রাখুন।
যেহেতু বর্ষাকালে রোদের ঘাটতি থাকে এবং জামাকাপড় ঠিকমতো শুকোতে চায় না, তাই অবশ্যই আয়রন করে নিতে হবে। অতএব কিনে রাখুন ভালোমানের একটা ইস্ত্রী।
ড্যাম্প-প্রুফ ওয়াল কিংবা ছাদের ঢালাই জলরোধক না থাকলে ঘরের অভ্যন্তর স্যাঁতস্যাঁতে থাকতে পারে। তাই আগে থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।
বর্ষার আগে খাবার জলের পাইপ চেক করে রাখুন। কারণ ওয়াটার পাইপ-এ লিকেজ থাকলে, ব্যবহার্য জল দূষিত হয়ে পেটের অসুখ হতে পারে।
আগে থেকেই ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করে রাখুন, যাতে বর্ষাকালে জলনিকাশ ঠিকমতো হয়। কারণ, নিকাশি ব্যবস্থা ভালো না থাকলে জল জমে বিপত্তি ঘটতে পারে।
বর্ষার আগেই বাড়ির চারপাশের আগাছা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে রাখুন। এতে মশা এবং বিষাক্ত পোকামাকড় থেকে বাঁচবেন।
একে বর্ষাকাল, তার উপর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয় এই দুই কারণে এবার অনিবার্য ভাবে বেশিরভাগ সময়টাই গৃহবন্দি থাকতে হবে আমাদের। আর এই পরিস্থিতিতে শরীর ও মনের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। তাই জেনে নিন কীভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখবেন এবং বিন্দাস থাকবেন।
জরুরি পরামর্শ
- বর্ষায় যেহেতু বাইরে হাঁটা চলার সুযোগ খুব একটা মেলে না তাই বাড়িতেই ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন
- বর্ষাকালে আর্দ্রতা বেশি থাকে, তাই শরীরে জলের চাহিদা বেশি তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে ১০-১২ গেলাস জল পান করুন প্রতিদিন
- এই মরশুমে শসা, তরমুজ, খরবুজা এবং সিট্রাস ফল খাওয়া অত্যন্ত সুফলদায়ী। এগুলি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে
- সঠিক ডায়েট গ্রহণ করুন। টাটকা শাকসবজি বেশি করে খান। ভাজাভুজি কম খান। বেশি নুন কিংবা বেশি চিনি খাবেন না। গ্রিন টি পান করুন খালি পেটে এবং চিনি ছাড়া লিকার চা পান করুন বিকেল-সন্ধে। পাতিলেবু, কাঁচা হলুদ, থানকুনি পাতা প্রভতি রস খান মাঝেমধ্যে
- জানলা-দরজা খুলে রাখুন দিনেরবেলা এবং বিশুদ্ধ বাতাস ঘরে ঢুকতে দিন
- শাকসবজি রান্না করার আগে হালকা গরমজলে নুন দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে পোকামাকড়, জীবাণু প্রভৃতি মরে যাবে
- বৃষ্টিতে ভিজে গেলে, বাড়ি ফিরে হালকা গরম জলে সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই স্নান করে নেবেন
- পায়ের বিশেষ যত্ন নিন। পায়ে নোংরা জল লাগলে বাড়ি এসে সাবান দিয়ে ধুয়ে হালকা তেল কিংবা ক্রিম লাগান
- বাইরে বেরোলে মাস্ক পরুন। বাড়ি ফিরে সঠিক স্যানিটাইজ করুন। আর ভালো গান শুনে মন ভালো রাখুন।
- বর্ষাকালে বাড়িঘরের অতিরিক্ত যত্ন নিন। অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল লিকুইড দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করুন
- মেডিকেটেড সাবান দিয়ে স্নান করুন এবং অ্যান্টি ফাংগাল ক্রিম ও পাউডার ব্যবহার করুন
- ঠাণ্ডা লাগার হাত থেকে বাঁচার জন্য শরীরকে ভিটামিন সি-র জোগান দিন। এর জন্য আমলা জুস কিংবা পাতিলেবুর শরবত পান করুন প্রতিদিন
- ত্বকে কোনওরকম দাগছোপ দেখলে কিংবা চুলকালে, অ্যান্টি ফাংগাল ট্যাল্ক ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনে ডার্মাটোলজিস্ট-এর পরামর্শ নিন। কিন্তু ভুল করেও নখ দিয়ে চুলকোবেন না, এতে জীবাণুর আক্রমণ ঘটতে পারে
- আপত্কালীন পরিস্থিতির সাময়িক মোকাবিলা করার জন্য হাতের কাছে কিছু ওষুধ রাখুন। যেমন জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল, বদহজম আটকানোর ওষুধ, লুজ-মোশান আটকানোর ওষুধ ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রেও আপনার হাউজ ফিজিসিয়ানের সঙ্গে আলোচনা পরামর্শ করে ওষুধ কেনা এবং খাওয়া উচিত
- সপ্তাহে অন্তত একদিন সম্ভব হলে নিমপাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল স্নানের জলে মিশিয়ে স্নান করুন, দাদ-হাজার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন
- বর্ষাকালেও পেট গরম হতে পারে। তাই মাঝেমধ্যে থানকুনি পাতার রস পান করুন এবং টক দই খান। প্রয়োজনে ডাবের জলও খেতে পারেন
- রাতে পা ধুয়ে অল্প সরষের তেল লাগিয়ে রাখুন পায়ে এতে ঠাণ্ডা লাগবে না সহজে এবং পায়েও বিশেষ যত্ন নেওয়া হবে
বর্ষাকালে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। কিন্তু চোখ লাল হলে বা চুলকালে, আঙুল দিয়ে রগড়াবেন না। মাঝেমধ্যে পরিষ্কার জলের ঝাপটা দিন। আর না জেনে চোখে কোনও ড্রপ ব্যবহার করবেন না। এক্ষেত্রে অবশ্যই আই-স্পেশালিস্ট-এর পরামর্শ নিন।