পারিবারিক বন্ধন  Family Bonding শব্দটির সঙ্গে মিশে আছে সুখ-শান্তি, সহানুভূতি, দায়িত্বশীলতা, আন্তরিক সহযোগিতা, অপরিসীম সহনশীলতা ও ভালোবাসার এক মায়াময় বাঁধন। অন্যদিকে যদি দেখা যায় এই অনুভূতিগুলের ঘাটতি আছে, স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মানসিক পরিস্থতি ভালো থাকে না৷

আমাদের দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই মধ্যবিত্ত শ্রেণির আর এই শ্রেণির বেশির ভাগ মানুষ চাকরিজীবী। বিভিন্ন পেশায় নানা রকমের কাজ করতে হয় তাদের। ওই কর্মক্ষেত্র হতে পারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি-সহ যে কোনও ধরনের প্রতিষ্ঠান। কর্মক্ষেত্র যেমনই হোক সেখানে কাজের চাপ থাকেই৷ আর এর সঙ্গে মিশে থাকে স্ট্রেস ও টেনশন৷গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের পারিবারিক জীবন সুখ শান্তিময়, তারা খুব সহজেই অফিসের এই স্ট্রেস কাটিয়ে উঠতে পারেন৷ কিন্তু ঘরে বাইরে যদি অশান্তি নিয়ে বসবাস করতে হয়, তাহলে মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে৷

সারাদিনের পর কোনও ব্যক্তি যখন অফিসের কাজ শেষে পরিবারের কাছে ফিরে যান, তখন তিনি স্বভাবতই একটু শান্তি চান৷ কিন্তু যদি দেখা যায় এর উল্টো চিত্র অর্থাৎ, গৃহকর্তা তার পরিবারের সবার সঙ্গে চিৎকার করছেন, নিজেকে পারিবারিক কলহে নিযুক্ত করছেন, সন্তানের সঙ্গে একটুতেই খারাপ আচরণ করছেন। এর মূল কারণ বুঝতে হবে তিনি অফিসের কাজের প্রেশারে অতিরিক্ত স্ট্রেসড৷ মানুষ সব সময় স্বাভাবিক থেকে পৃথিবীতে বসবাস করতে চায়। কিন্তু যখন সেটি করতে না পারে, তখন সে বাধ্য হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে।কর্মক্ষেত্রের পরিস্থিতির কারণেও অনেক সময় পারিবারিক বন্ধন অনেকটা আলগা হয়ে আসে।

এই নশ্বর পৃথিবীতে মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল তার নিজস্ব পরিবার। পরিবারে সবারই কিছু দায় ও কর্তব্য থাকে। আমাদের সমাজে খুব সাধারণ একটা পারিবারিক গঠন যদি আমরা চিন্তা করি- তা হলে সেখানে স্বাভাবিকভাবে একজন মা, একজন বাবা ও ভাই-বোন থাকেন। আর অফিসে একজন বড়ো কর্মকর্তা, মধ্যকর্মকর্তা, নিম্নকর্মকর্তা ও পিয়ন মিলিয়ে একটা অফিস। এটিও একটি কর্মপরিবার। পরিবারের পরই যাদের কাছে বেশি সময় কাটানো হয়, সেটি হলো কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে। এই কর্মক্ষেত্রে অশান্তি সৃষ্টি হলে, পারিবারিক অশান্তি তৈরি হয় মানসিকভাবে। যেমন- কর্মক্ষেত্রে অশান্তির জেরে অনেক সময় ডিভোর্সের মতো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন আমাদের সমাজের অনেকেই। তাই কর্মক্ষেত্রে শান্তির পরিবেশটা বজায় রাখা আমাদের যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনই বাড়িতেও শান্তি রাখা অত্যন্ত জরুরি।

মানুষ পরিবারের সাহচর্যেই বেঁচে থাকে, এটিই ধ্রুব সত্য। তাই পরিবারের বন্ধন   Family Bonding মানেই প্রেম-বিরহ-ভালোবাসার একটি সংমিশ্রণ গড়ে তোলা৷ পরিবারে ঝগড়া অশান্তি যদি এক আধবার হয়ও, সকলকে বিবাদ ভুলে আবার কাছে আসতে হবে৷কর্মক্ষেত্র থেকে যখন বাড়ি ফিরবেন, তখন কর্মক্ষেত্রটি সম্পূর্ণ ভুলে সন্তান-সহ পরিবারের অন্য সবাইকে নিয়ে খাবার টেবিলে একসঙ্গে খেতে বসবেন। হোক না খাবার টেবিলের আয়োজন অতিক্ষুদ্র, এতে কী যায়-আসে! একটু হাসি-ঠাট্টা নিয়ে আমরা তৈরি করতে পারি দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন। মনে রাখতে হবে, পরিবারের সবার ভালোবাসা কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে তৈরি করতে পারে।

চেষ্টা করুন ছুটির দিনগুলোয় পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে৷ একসঙ্গে পার্কে বা গঙ্গার ধারে বেড়িয়ে আসুন, ফুড স্টল বা ছোটোখাটো রেস্তোরাঁয় খান৷ বাড়িতে বসে সকলে মিলে একসঙ্গে সিনেমা দেখুন৷ ছোটোদের গল্পের বই পড়ে শোনান৷ আসল কথা হল পরস্পরের প্রতি জেনুইন ভালোবাসাটা অক্ষুন্ন রাখুন৷ এটাই ভালো থাকার পাসওয়ার্ড৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...