বহু নারীর প্রিয় শখই হল অবসরে নিজের Jewellery হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করা, বহু আদরে যত্নে সেই সম্পদকে লালন করা। বিয়ের বহু বছর পরেও বিয়ের দিনের স্মৃতির মতোই যদি গয়নাগুলোও থাকে অমলিন, বর্ণাঢ্যতায় উজ্জ্বল– তবে তা নিশ্চিত গর্বের বিষয়। তাই গয়না পরার সঙ্গে সঙ্গে, সেটির সংরক্ষণের বিষয়টিকেও সমান গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
যে-কোনও বাঙালি বাড়িতেই বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকে। লেগে থাকে নানা আচার-অনুষ্ঠানে অতিথি অভ্যাগতদের আনাগোনা। আর রীতিরেওয়াজ মাফিক সালংকারা হয়ে হাজির থাকতে হয় বাড়ির বধূ এবং গৃহিণীকে। তাই মাথায় রাখা দরকার, গয়না পরা মানেই, পারিপার্শ্বিক দূষণের ঝাপটা গয়নার উপরেও পড়বে। শুধু ধুলো ময়লাই নয়, ঘাম, প্রসাধনীতে থাকা রাসায়নিক এবং সর্বোপরি অপরিশুদ্ধ জলের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গয়না। তাই প্রতিবার গয়না পরার পর তা তুলে রাখার আগে, বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
আগে বুঝে নিন আপনার গয়নার বাক্সে থাকা মণি-মুক্তোগুলো কতটা স্ক্র্যাচ প্রুফ। পাথরের কাঠিন্য মাপার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে যে মানদন্ড ব্যবহূত হয়– তার নাম মো’স স্কেল। এই স্কেলের সংখ্যা যত উপরের দিকে হবে, ততই কঠিন বলে প্রমাণিত হবে পাথরটি। ধরা যাক হিরের কথাই। হিরের স্কেল রেটিং ১০, তাই এতে স্ক্র্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু পলা, চুনি, পান্না বা নীলা জাতীয়় পাথরের সহনশীলতা তুলনায় অনেক কম। সোনা-রুপো ও প্লাটিনামের কাঠিন্য মো’স স্কেল অনুযায়ী মাত্রই আড়াই।
তাই গয়নার ধরন, পাথরের কাঠিন্য বুঝে, গয়নাগুলি পৃথক বাক্সে সংরক্ষণ করুন। সাধারণত সফট পাউচ, বা ভেলভেট-যুক্ত বাক্সে গয়না রাখা উচিত। যদি গয়না অতিরিক্ত স্পর্শকাতর হয়, বাক্সে ঢোকানোর আগে টিস্যু পেপারে মুড়েও রাখতে পারেন। অনেকেরই ধারণা, গয়না একেবারে না পরলেই হয়তো এর উজ্জ্বলতা অটুট থাকবে। বিষয়টি একশো শতাংশ সত্যি নয়। গয়না, পরার পরও উজ্জ্বল থাকে, যদি তা সঠিক পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা যায়।
সোনা – সোনার অলংকারেও স্ক্র্যাচ পড়ে সতর্ক না থাকলে। হাতের গয়নাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অন্যান্য অলংকারেও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে প্রসাধন সামগ্রী-তে থাকা রাসায়নিকের কারণে। হেয়ার স্প্রে, পারফিউম, ক্রিম-লোশন, সবই গয়নার ঔজ্জ্বল্য কমিয়ে দেয়। সুইমিং পুলের ক্লোরিন-যুক্ত জলও একইরকমের ক্ষতিকারক। তাই এসবের সংস্পর্শে আসার আগে গয়না খুলে রাখাই শ্রেয়।
গয়না ময়লা হয়ে গেছে মনে করলে, সাবানজলে নরম ব্রাশ ডুবিয়ে পরিষ্কার করুন। গয়নার উপরে তেলচিটে ভাব জমে থাকলে তা সাধারণ অ্যালকোহলের সাহায্যে পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। তবে পরিষ্কার করার পর, খেয়াল রাখবেন গয়নায় যেন একটুও ভিজে ভাব না থাকে। ময়েশ্চার কিন্তু গয়নার পক্ষে ক্ষতিকারক।
রুপো – রুপো বাতাসের সংস্পর্শে এলে ঔজ্জ্বল্য হারায়। রুপোর জিনিস কখনওই প্লাস্টিক ব্যাগে সংরক্ষণ করবেন না। প্লাস্টিকে মজুত সালফার উপাদান, রুপোর উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেয়। এমনকী, কাঠ ও রাবারের খাপেও রুপোর গয়না রাখা উচিত নয় একই কারণে।
রুপোর হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে, একটি পাত্রে গরম জল নিয়ে তাতে বেকিং সোডা মেশান। এই জলে রুপোর গয়না দীর্ঘক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। এরপর অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের সাহায্যে রুপো পরিষ্কার করুন।
মুক্তো – মুক্তো আপনার অতি প্রিয় সম্পদ, যা আপনি আজীবন আগলে রাখতে চান। কিন্তু এই দুলর্ভ জিনিসটি অতি স্পর্শকাতর। পারফিউম, লোশন ও হেয়ার স্প্রে’র ব্যবহারে মুক্তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই উচিত হচ্ছে সমস্ত প্রসাধনী শেষ করে তারপর মুক্তোর গয়না পরা।
মুক্তো পরিষ্কার করার নিয়ম হল, এই অলংকার ঈষদুষ্ণ গরমজলে ডুবিয়ে রাখা। তারপর নরম তুলো দিয়ে মুছে শুকনো করে নেওয়া।
হিরে – সোনা যেভাবে পরিষ্কার করে সেভাবেই হিরে পরিষ্কার করুন। অর্থাৎ সাবানজল আর নরম ব্রাশের সাহায্যে হিরের ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনুন। হিরেতে হাত যত কম লাগানো যায়, ততই ভালো। হাতে লেগে থাকা খাবারের তেলেও হিরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্লাটিনাম – তুলনামূলকভাবে প্লাটিনাম অনেক বেশি সহনশীল। সহজে রঙের উজ্জ্বল্য কমে না। এর উপরে অন্য কোনও স্তরও জমে না, পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক কারণে। তবে এটি সংরক্ষণের সময় খেয়াল রাখবেন স্ক্র্যাচ যেন না পড়ে। সোনা পরিষ্কারের রীতিই এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
রঙিন মণি – সূর্যরশ্মির কারণে দুর্লভ মণি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রভাবে মণির উজ্জ্বলতা কমে যায়, রং নষ্ট হয়ে যায় এমনকী ক্র্যাকও হতে পারে। চুনি, পান্না, নীলা, পলা প্রভৃতি রত্ন তাই খুব সাবধানে রাখা উচিত এবং এগুলি সাবান জলের থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা যায় ততই ভালো।
যদি পরিষ্কার করতেই হয়, তাহলে ভিজে তুলো দিয়ে মুছে নেওয়াই যথেষ্ট। এই ধরনের দামি রত্নালংকার পরার আগে প্রসাধনী তথা পারফিউম লাগানোর কাজটা সেরে রাখুন। না হলে মণি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
১) সিংক এ গয়না পরিষ্কার করার সময় নালির মুখ বন্ধ রাখুন।
২) বাটির মধ্যে সাবানজল নিয়ে ছোটো ও সূক্ষ্ম অলংকারগুলি পরিষ্কার করুন।
৩) বারবার গয়নার দোকানে গয়না Jewellery পরিষ্কার করাতে দেবেন না, বিশেষ করে সোনার গয়না। এতে ওজন কমতে পারে গয়নাটির।