Preparation বা প্রস্তুতি শব্দটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জীবনে যে-কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজেই প্রস্তুতি নিতে হয়। প্রস্তুতি ছাড়া সঠিক ভাবে লক্ষ্যপূরণ কিংবা সাফল্যলাভ সম্ভব হয় না।
আজকাল মেয়েরাও উচ্চপদে এবং মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরি করে এবং করতে চায়। কিন্তু শুধু চাইলেই তো আর ইচ্ছেপূরণ হয় না, এরজন্য পরিশ্রম করতে হয় এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে হয়।
সন্তান, বিশেষকরে কন্যা সন্তানের জন্য গুরুদায়িত্ব পালন করা উচিত অভিভাবকদের। কারণ, কেরিয়ার গড়ার জন্য যে সময় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেই সময় মেয়েরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিণত-মনষ্ক হয়ে ওঠে না। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই, প্রার্থীটির হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে মা-বাবাকেই।
এখন প্রতিযোগিতার যুগ। শিক্ষিত এবং প্রতিভাবান প্রতিযোগীর সংখ্যাও কম নয়। তাই, উপযুক্ত চাকরি পাওয়া এবং সাফল্যলাভ করা আজকাল খুব চাপের বিষয়। অতএব মনোমতো চাকরি পাওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। চাকরি পাওয়ার পর নিজেকে প্রেজেন্টেবল্ করতে প্লিজিং পার্সোনালিটিরও দরকার আছে। আর এই সমস্তরকম প্রস্তুতির জন্য প্রথমেই নিতে হবে বিহেভিয়েরাল অ্যান্ড সফ্ট স্কিল ট্রেনিং। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় প্রফেশনাল গ্রুমিং-এর এমন বহু প্রতিষ্ঠানই আছে। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে পেশাগত প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এইসব প্রতিষ্ঠানে। এবার জেনে নিন কীভাবে, কোন-কোন বিষয়ে এবং কত টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয় এই প্রশিক্ষণ।
পেশায় প্রবেশের পূর্বপ্রস্তুতির পর্বকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। একেবারে প্রথম ভাগটি ‘কেরিয়ার কাউন্সেলিং’। প্রসঙ্গত, ‘ব্লু স্কাই এডুকেশন সেন্টার’-এর কর্ণধার মহাশ্বেতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘কোনও স্টুডেন্ট আমাদের কাছে এলে প্রথমে তাকে আমরা কাউন্সেলিং করি। অর্থাৎ, প্রার্থী কী ধরনের পেশা বেছে নিতে চায় এবং সেই অনুযায়ী তার যোগ্যতা আছে কিনা তা জেনে নিয়ে বাকি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রার্থী দিশেহারা থাকে। কোন পেশা বেছে নেবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর সবকিছু যাচাই করে সঠিক পথনির্দেশ করা হয়। এই কাউন্সেলিং-এর জন্য সময় লাগে তিন দিন। প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা করে মোট তিন দিন কাউন্সেলিং-এর জন্য প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ১৫০০ টাকা।’ তবে কেরিয়ার কাউন্সেলিং-এর জন্য কলকাতার সব প্রতিষ্ঠান একইরকম মূল্য নেয় না, প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী অর্থের পরিমাণের হেরফের হয়।
সারা পৃথিবীতে আজকাল নানারকম নতুন-নতুন পেশা তৈরি হয়েছে। প্রশিক্ষকদের মতে, ‘নতুন তৈরি হওয়া পেশাগুলি যেমন প্রার্থীকে আনন্দের সঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনই আর্থিক দিকটিও সমৃদ্ধ করে। তাই, মেয়ে বলে পিছিয়ে যাবেন না, আপনার যোগ্যতা বিচার করে, আপনাকে এই সমস্ত নতুন পেশায় যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেবে এবং সাহায্য করবে এইসব সংস্থা।’
অ্যানিমেশন, পেজ ডিজাইনিং, এডিটিং প্রভৃতি কম্পিউটার রিলেটেড চলতি পেশাগুলি ছাড়াও, ফ্যাশন ডিজাইনিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মডেল কো-অর্ডিনেটর, সেলিব্রিটির সেক্রেটারি, টুর অ্যান্ড ট্রাভেল অপারেটর, টি-টেস্টার, পাবলিক রিলেশন্স অফিসার, এইচ আর ম্যানেজার প্রভৃতি প্রায় শতাধিক লোভনীয় পেশায় এখন প্রতিযোগিতা তুলনায় কম। একজন স্মার্ট তরুণী হিসাবে যদি আপনার আত্মবিশ্বাস থাকে, আপনিও এই ধরনের পেশায় যোগ দিয়ে অর্থ এবং যশ দুই-ই পেতে পারেন।
আপনি কোন পেশার জন্য যোগ্য তা বুঝে নেওয়ার পর, শুরু হবে প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় পর্যায়। এই পর্যায়টি হল– ‘পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট’। কলকাতার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে, তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে, পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট কোর্স করানো হয়। মোটামুটিভাবে দশটি ক্লাস করতে হয়। পেশা অনুযায়ী ড্রেস, হেয়ারস্টাইল, হাঁটাচলা, কথা বলা, বডি ল্যাঙ্গোয়েজ প্রভৃতি কেমন হবে তা শেখানো হয় এই কোর্সে। এছাড়া, ল্যাঙ্গোয়েজ-এর একটি ছোট্ট কোর্স করতে হয় একইসঙ্গে। দেশে-বিদেশে ভালো কোনও চাকরি করতে হলে কমিউনিকেশন স্কিল ভালো হতে হবে।
বাংলা, হিন্দির পাশাপাশি, বিশেষভাবে দক্ষ হতে হবে ইংরেজিতে। এই প্রসঙ্গে প্রশিক্ষক মহাশ্বেতা জানান, ‘বেশিরভাগই দেখা যায়, বাংলা মিডিয়ামে লেখাপড়া করা প্রার্থীরা
ইংরেজিতে খুবই দুর্বল। মোটামুটিভাবে লিখতে পারলেও, ইংরেজিতে কথা বলতে অসুবিধা হয়। তাই তাদের জন্য রাখা হয়েছে ‘স্পোকেন ইংলিশ’-এর একটি কোর্স। বর্তমানে এই কোর্সটির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।’ এই ‘স্পোকেন ইংলিশ’ কোর্সটির মেয়াদ তিন মাস। খরচ পড়ে ৩,৫০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা। অবশ্য যারা ইংরেজিতে খুবই দুর্বল, তাদের জন্য ৬ মাসের ‘স্পোকেন ইংলিশ’-এর কোর্স চালু রেখেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে কোর্স ফি-ও বেশি হবে। তবে ‘স্পোকেন ইংলিশ’ কোর্সটির সঙ্গে অ্যাকসেন্ট ট্রেনিংও দেওয়া হয়ে থাকে।
ওয়ার্কিং উয়োম্যান হওয়ার প্রস্তুতিপর্বের চতুর্থ তথা শেষ পর্যায়টি হল ‘সিভি রাইটিং’। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘অনেকেই সিভি রাইটিং-কে যতটা সহজ কাজ ভেবে থাকেন, বিষয়টা ততটা সহজ নয় মোটেই। কারণ, প্রার্থীর মেধা, যোগ্যতা প্রভৃতি অনেকটাই আন্দাজ পাওয়া যায় সিভি দেখে। তাই, নিজেকে এমপ্লয়ার-এর কাছে আকর্ষণীয় ভাবে তুলে ধরার জন্য সঠিক ভাবে কিংবা বলা যায় কৌশলে সিভি তৈরি করতে হবে। আর এর জন্য বিশেষ ট্রেনিং-এর প্রয়োজন আছে।’ এই সিভি রাইটিং-এর প্রশিক্ষণের জন্যও সামান্য টাকা খরচ করতে হবে।
এবার আসা যাক বিদেশে কর্মপ্রাপ্তির প্রসঙ্গে। আজকাল অনেক মেয়েই বিদেশে গিয়ে ভালো কোনও বড়ো প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে চাকরি করতে চান কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান না থাকার জন্য আশাপূরণ করতে পারেন না। আর এর জন্যই অর্থের বিনিময়ে সাহায্যকারী সংস্থার শরণ নিতে হবে। ওরাও প্রার্থীর ইচ্ছে অনুযায়ী সবরকম সাহায্য করবে। যেমন— কোন দেশে, কোন প্রতিষ্ঠানে আপনি উপযুক্ত চাকরি পাবেন, কীভাবে যোগাযোগ করবেন, চাকরি পাওয়ার পর কোথায় থাকবেন, এমনকী আপনার পাসপোর্ট এবং ভিসা পাওয়ার বিষয়টিতেও সাহায্য করবে ওই পেশাদারি সংস্থা।
অবশ্য শুধু চাকরিই নয়, ব্যাবসা করার ক্ষেত্রেও পেশাদারি সংস্থার দ্বারস্থ হওয়াই ভালো। কারণ, কোন ব্যাবসা কীভাবে করতে হয়, কোথা থেকে কাঁচা মাল সংগ্রহ করতে হয়, তৈরি জিনিস কোথায়-কীভাবে রপ্তানি করতে হয়, মূলধন কীভাবে জোগাড় করতে হয়, কীভাবে প্রোডাক্টের মার্কেটিং করলে মুনাফা আসবে প্রভৃতি, নানারকম বিষয়ে উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণের পরই ব্যাবসা শুরু করা উচিত। শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয়ে বিনামূল্যে যাবতীয় সাহায্য করে কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মিলেনিয়াম ম্যামস’। প্রয়োজনে প্রখ্যাত ব্যাবসায়ীদের সঙ্গেও ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রার্থীকে কথা বলার সুযোগ করে দেয় এই সংস্থা।
অবশ্য ব্যাবসা ছাড়া যদি কেউ চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে চান, তাহলে অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন কলকাতার বিভিন্ন সংস্থায়। আইআইটিএম, নোপানি ইন্সটিটিউট, থ্রি এজ স্টাডিজ, ব্লু স্কাই এডুকেশন, জেটকিং ইনফোট্রেন, ওয়াইএমসিএ, সিকিম মণিপাল ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিতে পারেন শিক্ষা। নিয়মিতভাবে সংবাদপত্র এবং ইন্টারনেট-এ চোখ রাখলে পাওয়া যাবে এইসব প্রতিষ্ঠানের দূরভাষ নম্বর এবং ঠিকানা। অতএব আর দেরি না করে, এখনই শুরু করে দিন নিজেকে একজন স্মার্ট প্রফেশনাল হিসাবে তৈরি করার জন্য, ওয়ার্কিং উয়োম্যান হিসাবে যাতে নিজেই নিজেকে নিয়ে গর্বিত হতে পারেন।