শুভেন্দু ছিলেন এয়ার ফোর্স-এর পাইলট। এয়ার ফোর্স-এর একটি প্লেন দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান, কিন্তু সংসারের আবর্তে ছেড়ে যান স্ত্রী শান্তিপ্রিয়া এবং তিন বছরের মেয়ে ঈশিতাকে। এয়ার ফোর্স-এর তরফ থেকে যখন মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়, তখন শান্তি তার মেয়ে ঈশিতাকে তার কাকা ক্ষিতিমোহনবাবুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কারণ সে চায়নি এই বয়সেই তার ছোট্ট মেয়ে জানুক, যে সে পিতৃহারা।
তারপর কেটে গেছে দু-দুটি বছর। এখন ঈশিতা বছর পাঁচেকের। অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় একটু রোগাই, দুর্বলও বটে। পাশেই এয়ার ফোর্সের স্কুলে পড়ে সে। বাবাকে ঘিরেই তার যত প্রশ্ন।
ছবিটা ধোঁয়াটে হলেও তার আজও মনে আছে বাবা যখনই বাড়ি ফিরত, নানারকমের খেলনা আনত তার জন্য। এদিকে-ওদিকে কত বেড়াতে নিয়ে যেত। কতই না গল্প শোনাত তাকে।
এখন সে একটু একটু বুঝতে শিখেছে। তাই তার প্রশ্নও বেড়েছে অনেক। যার উত্তর দিতে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয় শান্তিকে।
এরকমই একদিন সকালে ঈশিতা তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘মাম্মা পাপা আসছে না কেন? কবে আসবে?’
উত্তরে শান্তি বলল, ‘সোনাই, তোমার পাপা যে ছুটি পাচ্ছে না। তাঁর নতুন বস ভীষণ শক্ত প্রকৃতির লোক, কিছুতেই তোমার পাপার ছুটি মঞ্জুর করছেন না। তাই পাপা তার দুষ্টু সোনাইয়ের কাছে আসতে পারছে না।ছুটি পেলেই উড়ে চলে আসবে তোমার কাছে।’
ঈশিতা তার পাপার বস-এর উপর বিদ্বেষ প্রকাশ করে বলল, ‘মাম্মা, পাপার বস খুব বাজে, খুব খারাপ।’
বছর একত্রিশের শান্তি, কলকাতারই একটি মিলিটারি ক্যাম্পাসের এয়ার ফোর্স স্কুলের টিচার। ফর্সা, লম্বা ছিপছিপে চেহারা তার। দেখতেও বেশ সুন্দরী। স্বামীর মৃত্যুর পর কর্তৃপক্ষকে বহু অনুনয়-বিনয় করে মেয়ের স্কুলেই ট্রান্সফার নিয়েছে সে। শান্তির বাবা-মা চেয়েছিলেন মেয়ে আবার বিয়ে করুক। কতই বা বয়স তার। মাত্র উনত্রিশ বছরেই বিধবা হয়েছে সে। কিন্তু তার একটাই কথা। ঈশিতা খুব কম বয়সে দুভার্গ্যক্রমে তার বাবাকে হারিয়েছে, তাই সে চায় না যে ঈশিতা তার মাকেও হারাক। সে নিজের চোখে দেখেছে মা-বাবা আবার অন্যত্র বিয়ে করলে বাচ্চারা কীভাবে অবহেলিত হয়। সিঙ্গল মাদার-ই হোক বা সিঙ্গল ফাদার- কারওর একার পক্ষেই বাচ্চা মানুষ করাটা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। সেক্ষেত্রে একজনকেই মা-বাবা দুজনেরই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। বিশেষ করে তার পাপাকে ঘিরে ছোট্ট ঈশিতার প্রশ্নবাণ, শান্তিকে বড়োই অসহায় করে তোলে।