কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে সুমনার সঙ্গে আলাপ ঋজুর। তারপর একসঙ্গে তিনটে বছর কলেজে কাটিয়ে মাস্টার্স করতে বিদেশে পাড়ি ঋজুর। এই তিন বছরে বন্ধুত্ব গড়িয়েছে প্রেমে। বিদেশে পড়া শেষ করে চাকরি। ততদিনে ঋজু বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে সুমনার কাছে। দুজনের পরিবারই রাজি এই বিয়ের জন্য। কিন্তু বিয়ে বলে কথা। দুটো পরিবারের সামনা-সামনি কথা বলার প্রয়োজন রয়েছে। ছেলে, মেয়েকে একে অপরের পরিবার চেনে না। পরিচয় পর্বটাও সারা দরকার। তবে ঋজুর মায়ের খুব শখ ছিল নিজে মেয়ে দেখে পছন্দ করে একমাত্র ছেলের বিয়ে দেবেন।

কথাটা ঋজুকে জানিয়েও ছিলেন এই ভেবে যে, যদি ছেলে বিয়ের ডিসিশন-টা বদলায়। কিন্তু সুমনা ছাড়া ঋজু অন্য কোনও মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি নয়।

সুমনার বাড়িতে, বিয়ের প্রস্তাবটা জানাতে ঋজু পুজোর ছুটিতে ভারতে আসে। মা-বাবাকে সঙ্গে করে সুমনার বাড়ি গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব রাখে সুমনার মা-বাবার কাছে। বাঙালি মাত্রই এই সময়টা খুশির মেজাজে থাকে। তাই দুটো পরিবারেও তেমনি উৎসবের মেজাজটা থাকতে থাকতেই নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে তোলার আনন্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। ঋজু আর সুমনা দুজনের পরিবারই সানন্দে এই বিয়ের জন্য সম্মত হল। দুটো সম্পর্ক যেমন প্রেম-ভালোবাসার সিঞ্চনে এক হতে পারল তেমনি উৎসবের গুরুত্বটাও কিন্তু এক্ষেত্রে অবহেলা করার ছিল না।

কিন্তু এমন ভাগ্য সকলের হয় না। উৎসবের মেজাজে গা ভাসালেও দুটো পরিবারের সামান্য ভুল, ত্রুটিও সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই ভাঙ্গার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই উচিত নিজেদের পরিবারকে অন্য পরিবারটির সম্পর্কে অবহিত করানো। মা-বাবা ও পরিবারের সকলকে কিছুটা ট্রেনিং দিয়ে রাখা, যাতে অন্য পরিবারটির সম্মুখীন হয়ে তাদের কোনওরকম অস্বস্তির মধ্যে যেন না পড়তে হয়। তবে সম্পর্ক গড়তে উৎসবের দিনগুলো হল সবথেকে ভালো সময় কারণ মানুষের আনন্দ এবং মনস্কামনা পূরণ করার এর চেয়ে উপযুক্ত সময় আর হতে পারে না। এই সময় মানুষ নেতিবাচক মনোভাব দূরে সরিয়ে রেখে পজিটিভ চিন্তা-ভাবনায় নিজেকে মগ্ন রাখে।

কাউন্সেলিং

সবাই মনে মনে চায়, বাড়ির লোক যখন প্রথম তার বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডকে দেখবে তখন তাদের ফার্স্ট ইম্প্রেশন ভালো হোক। বাড়ির বড়োদের এবিষয়ে জ্ঞান অনেক বেশি সন্দেহ নেই কিন্তু মাঝেমধ্যে মুখ থেকে বেরোনো সামান্য একটা শব্দও সামনে থাকা মানুষটার মনকে আঘাত করতে পারে। তার আত্মসম্মান হানি করতে পারে।

জীবনসঙ্গী বাছা হয়ে গেলে তাকে মা-বাবা, বাড়ির বড়োদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার। কিন্তু সেটা করার আগে সঙ্গীর সম্পর্কে সবকিছু মা-বাবাকে জানিয়ে রাখা উচিত। এরফলে মা-বাবাও এমন প্রশ্ন অপর পক্ষকে করবে না যাতে তারা বিব্রত বোধ করতে পারে। উত্তর দিতে গিয়ে তারাও যাতে ভয় বা সংকোচ বোধ না করে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই যেন দুই পক্ষ পারস্পরিক আলোচনা চালাতে পারে।

যদি অন্য পরিবারে কোনও সংবেদনশীল ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে প্রথমেই মা-বাবাকে সেটা বলে দেওয়া উচিত। ওই ঘটনার কথা প্রথম দিনই আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। ওই ঘটনার উল্লেখ সেই পরিবারের লোকজনকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে যে পরিবারে ঘটনাটি ঘটেছে। যেমন হয়তো পরিবারে কোনও বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে অথবা পরিবারে কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে লিভ্ টুগেদার করছে– এই ঘটনাগুলি এখনও সমাজের চোখে অন্যায় বলে মানা হয়। এই ধরনের প্রসঙ্গ উত্থাপন, অস্বস্তিকর হতে পারে। প্রথম পরিচয়েই যেন এই ধরনের কথাবার্তা না ওঠে।

এগুলো ছাড়াও যাকে জীবনসঙ্গী করতে চলেছেন তার কোনওরকম অ্যালার্জি, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অথবা সে আমিষ কি নিরামিষাশী সেটাও নিজের বাড়িতে আগে জানিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয়। এর ফলে কোনও পক্ষকেই অপ্রিয় পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।

জীবনসঙ্গীরও ট্রেনিং দরকার

জীবনসঙ্গী হিসেবে যাকে বেছেছেন, তার সঙ্গে নিজের পরিবারের পরিচয় করাবার আগে তাকে নিজের পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত খুলে বলা উচিত। যাতে প্রথমবার সে যখন আপনার বাড়িতে আসবে, সহজেই আপনার বাড়ির লোকেদের মন জিতে নিতে পারে। তবে পরিবারের ভিতরে কোনও ঝগড়া, বিবাদ থাকলে সেটা গোপন রাখাই ভালো কারণ ভবিষ্যতে এই ধরনের রেষারেষির কারণে, সম্পর্কে বিঘ্ন পর্যন্ত ঘটতে পারে।

কমন বিষয়গুলি আলোচনা করুন

অনেকেই এমন লোকজন পছন্দ করে যাদের শখের সঙ্গে নিজেদের শখ মিলে যায়। এই মানসিকতার সুযোগ নিন। জীবনসঙ্গী হিসেবে যাকে বেছেছেন তার সঙ্গে নিজের বাড়ির লোকেদের কোন শখটা অথবা অভ্যাসটা মেলে, সেটা নিজের প্রেমিক, প্রেমিকাকে জানিয়ে রাখুন। বাড়িতে এসে তাহলে আলোচনায় বিষয়টি কমন পড়লে দুই পক্ষই মনে মনে খুশি হবেন নিজেদের পছন্দের বিষয়টা এক জেনে। যেমন হয়তো দুই পক্ষই বাগান করতে ভালোবাসেন অথবা দুজনেরই বিজ্ঞান অথবা খেলাধূলায় রুচি রয়েছে।

বাড়িতে অতিথি এলে সকলেরই জানা আছে তাদের মা-বাবার কী প্রতিক্রিয়া হয়। কেউ হাত বাড়িয়ে অতিথিকে আপ্যায়ন করেন, আবার কেউ বা প্রথম সাক্ষাতেই গলা জড়িয়ে ধরেন। অনেকে হাত তুলে নমষ্কারও করেন। ছোটোরা প্রথম এসে বাড়ির বড়োদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে সম্মান জানাবে এই ইচ্ছেও অনেকের মনেই সুপ্ত থাকে। মা-বাবার মনের ইচ্ছেটা সঙ্গীকে আগে থেকে জানিয়ে রাখলে জানবেন প্রথম সাক্ষাতেই সঙ্গীটি আপনার অভিভাবকদের গুড বুকে স্থান পেতে চলেছে।

বাড়ির নিয়মগুলোর সঙ্গে পরিচয়

সব বাড়িরই কিছু নিয়ম থাকে যেগুলো ওই বাড়ির সদস্যরা মেনে চলেন। কোনওরকম নিয়ম লঙঘন হলে বাড়িতে অশান্তি লেগে যায়। সেজন্য নতুন কাউকে বাড়িতে পরিচয় করাতে নিয়ে আসার আগে বাড়ির নিয়মগুলো তাকে আগে জানিয়ে রাখা উচিত। যেমন বাইরে জুতো খুলে ঘরে ঢোকা, শালীনতা বজায় রেখে কথা বলা, স্লঁটো খাবার প্লেটে ছেড়ে দেওয়া অথবা স্লঁটো হাতে জলের গেলাস ধরা বাড়ির কেউ পছন্দ করে না। এই জিনিসগুলো আগে থেকে জানিয়ে রাখা কর্তব্য।

নিজস্ব কর্তব্য

সকলেই জানেন তার নিজের বাড়িতে সকলে কী পছন্দ করে। বাড়ির বড়োদের পছন্দ, অপছন্দ সবকিছুই তাদের জানা। তাই নতুন অতিথিকে প্রথমবার যখন বাড়ির সকলের সঙ্গে পরিচয় করাবার জন্য আনবেন, তার সঙ্গে সঙ্গে থাকাটা আপনার কর্তব্য। তাতে সে অনেক সহজ বোধ করবে।

মা-বাবার সামনে ওকে সহজ করে তোলার চেষ্টা আপনাকে করতে হবে। সঙ্গীটির প্রশংসা করুন যাতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে। একলা ছেড়ে দিলে মা-বাবার সঙ্গে কথাবার্তা চলাকালীন কোনও অপ্রিয় প্রসঙ্গ উত্থাপিত হতে পারে, ফলে সম্পর্কেও ফাটল ধরতে পারে। সম্পর্ক গড়তে এই নিয়মগুলো মেনে চললেই, বন্ধন অটুট হবে একথা জোর দিয়ে বলা যায়। তাই সম্পর্ক গড়ে তুলতে বেছে নিন উৎসব মুখরিত দিনগুলিকে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...