আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে গিয়ে, আজকাল বেশিরভাগ Working Woman সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকেন। তাই, ঘরোয়া কাজ ছাড়াও, পেশাগত বাড়তি পরিশ্রমের জন্য দিনান্তে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠেন। এর প্রধান কারণ– অপুষ্টি। আর এই অপুষ্টির প্রধান কারণ সঠিক সময়ে উপযুক্ত খাবার না-খাওয়া।
আসলে, দেহ-যন্ত্রটিকে সচল ও সুস্থ-স্বাভাবিক রাখার জন্য উপযুক্ত রসদের (Healthy food) জোগান দেওয়া যে প্রয়োজন, এ বিষয়ে অনেকে মাথা-ই ঘামান না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়– অসুখ। আর সবচেয়ে মজার ঘটনা এই যে, অসুখে পড়লে সব কর্মরতারই সেই একই অজুহাত, ‘কাজের চাপে একেবারেই খাওয়ার সুযোগ পাই না।’ কিন্তু মনে রাখবেন, এক্সকিউজ দিয়ে আপনজনের বকুনির হাত থেকে বাঁচা যায়, শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায় না। অতএব, দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকার জন্য এবং তারুণ্য ধরে রাখার জন্য শরীরকে উপযুক্ত রসদ জোগান দিতে হবে।
বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান রণিতা ঘোষের মতে, পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের বেশি পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার প্রয়োজন। কারণ, ঘরে-বাইরের কাজ ছাড়াও, মা হতে হয় মেয়েদের। তাই শরীর ও মনের উপর প্রবল চাপ পড়ে। আর এই চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, সঠিক সময়ে উপযুক্ত মাত্রায় প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।
যে যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সময়মতো শরীরকে পুষ্টি জোগানো উচিত। নয়তো, চল্লিশ বছর বয়সের পর চুল পড়া শুরু হবে, বাড়বে রক্তচাপও। শুধু কি তাই, অপুষ্টিতে ভুগে মা হলে, নিজের এবং বাচ্চার উভয়েরই ক্ষতি হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কর্মক্ষমতাও কমবে। অল্প বয়সেই নষ্ট হবে ত্বকের লাবণ্য এবং কমে যাবে আয়ুও। আর এসবের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে, ব্যবস্থা নিতে হবে নিজেকেই। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে কখন, কী কী খাবেন তা ঠিক করে নিতে হবে। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়কে বেছে নিতে হবে শরীরচর্চার জন্য।
ঘুম থেকে উঠে বেড-টি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ক্ষতি নেই। এতে পেট পরিষ্কার হবে। এরপর অফিসে যাওয়ার আগে কম সময়ে খাওয়া যায় এমন কিছু খাবার খেতে হবে। যেমন– বাটারযুক্ত ব্রেড, ওট্স, ডালিয়া প্রভৃতি। এসবের জন্যও যদি সময় না থাকে, তাহলে চারটে ভালো বিস্কুট, খেজুর, আমন্ড, জলে ভেজানো চিনে বাদাম এবং অঙ্কুরিত ছোলা খান কিংবা এক গেলাস ছাতুর শরবত খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন অফিসে।
দুপুরে খাওয়ার জন্য বাড়ির তৈরি খাবার খাওয়াই ভালো। যদি সকালে ভাত, মাছ, ডাল খেয়ে আসতে পারেন তাহলে খুবই ভালো। নয়তো দুপুরে শরীরকে এইসব খাবার জোগান দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ, সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে শরীরকে ভারী খাবার জোগাতেই হবে সুস্বাস্থ্যের জন্য। তবে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না, এতে হিতে বিপরীত হবে। তাই দুপুরে উপযুক্ত মাত্রায় খাবার খান চাহিদা অনুযায়ী এবং সেই সঙ্গে খান একটা পেয়ারা, সফেদা কিংবা আপেল।
বিকেলের দিকে যদি সম্ভব হয় তাহলে একটা ডিম সেদ্ধ এবং কিছুটা ছানা খেতে পারেন। তবে ভাজাভুজি যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর প্রত্যেকবার খাবার খাওয়ার দশ-পনেরো মিনিট বাদে নির্দিষ্ট মাত্রায় জল খাবেন। সারাদিনে অন্তত চার লিটার জল খাওয়া প্রয়োজন। বিশেষকরে, শীতকালে উপযুক্ত পরিমাণ জল খাওয়া হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কারণ, ঠান্ডার ভয়ে অনেকে শীতকালে কম জল খান, তাই তাদের হজমের গোলমাল হয় এবং ত্বক রুক্ষ্ম হয়ে ওঠে। অতএব, অবশ্যই জল খাবেন পরিমাণমতো।
সন্ধের সময় বাড়ি পৌঁছে, ফ্রেশ হয়ে নিয়ে গরম চা আর দুটো বিস্কুট খেতে পারেন। রাতে খান সবজি-রুটি কিংবা ভাত-সবজি। তবে রাতে অল্প খাবার খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। আর খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না, খানিকক্ষণ হাঁটাচলা করে ঘুমোতে যান। এতে ভালো হজম হবে এবং গভীর ঘুম হয়ে শরীর-মন ভালো থাকবে।
Healthy food habit
খাদ্য তালিকায় সবরকম খাবার রাখা প্রয়োজন। কারণ, বিভিন্ন খাবারের থাকে পৃথক গুণ। তাই, সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য শরীরকে সবরকম খাবার সরবরাহ করা উচিত। এবং জেনে রাখুন কোন খাদ্যের কী কী গুণ রয়েছে।
টাটকা শাকসবজি
বাঁধাকপি, ওলকপি, ব্রকোলি, মুলো, গাজর প্রভৃতিতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’। এই দুই ভিটামিন চোখের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি, মস্তিষ্ক উর্বর করে। এছাড়া, স্ট্রোকস, অ্যালজাইমার’স, ক্যানসার প্রভৃতি থেকে অনেকটাই রেহাই দেয়।
ফলমূল
শরীরকে ভিটামিন ‘ই’, আয়রন এবং পটাশিয়াম জোগান দেওয়ার জন্য পেঁপে, কলা, পেয়ারা এবং আপেল খেতে হবে। তারুণ্য ধরে রাখার জন্য এসব ফল খাওয়া খুবই দরকার। সেইসঙ্গে, খাদ্য-তালিকায় রাখবেন আঙুর এবং স্ট্রবেরি। কারণ, এই দুই ফল খেলে হজম শক্তি বাড়বে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক রাখবে।
টম্যাটো
টম্যাটো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত সবজি। যা করনারি হার্ট ডিজিজ এবং ক্যানসার প্রতিরোধক। তাছাড়া, চোখ এবং ত্বক ভালো রাখার জন্যও টম্যাটো খাওয়া উচিত।
রসুন
কোলেস্টেরল লেভেল লো করার জন্য এবং রক্তচাপ কমানোর জন্য রসুন খাওয়া প্রয়োজন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, মুখ থেকে উগ্র গন্ধ বেরোবার ভয়ে অনেকে রসুন খান না। কিন্তু মাছ, মাংস কিংবা শাকসবজি রসুন দিয়ে রান্না করে খেলে উগ্র গন্ধের সমস্যা তেমন থাকে না। তাই শরীর ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন কিছু পরিমাণ রসুন খাবেন।
বাদাম
চিনে, পেস্তা, কাজু প্রভৃতি বাদামে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘ই’, আয়রন, পটাশিয়াম, জিংক এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা খেলে ত্বকের তরতাজা ভাব বজায় থাকবে এবং কোলেস্টেরল লেভেলকে স্বাভাবিক রাখবে।
দই এবং মধু
শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দই খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া, ভারী খাবার হজম করাতেও সাহায্য করে দই। আর ইন্সট্যান্ট এনার্জির জন্য খাওয়া উচিত মধু। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে মধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
সয়াবিন্স
সয়াতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালশিয়াম থাকে। অস্টিয়োপোরোসিস-এর মতো রোগের হাত থেকে মুক্ত করে এবং অস্থি বা হাড়় মজবুত করতে সাহায্য করে সয়া। এছাড়া, অ্যালজাইমার’স এবং হার্ট ডিজিজ থেকেও বাঁচা যাবে মাঝেমধ্যে সয়া খেলে।
ফলের রস
তরমুজ, মুসম্বি, কমলালেবু প্রভৃতি ফলের রস খান নিয়মিত। কারণ, এইসব ফলের রসে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ সবই থাকে। তারুণ্য ধরে রাখার জন্য এইসব ফ্রুট জুস খাওয়া খুবই দরকার।
অবশ্য, সঠিক সময়ে উপযুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি, ফিটনেস-এর জন্য আরও কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।
Fitness tips
প্রতিদিন সকাল-সন্ধে অন্তত ১০ থেকে ২০মিনিট হাঁটুন।
কথা না বলে চুপচাপ একা বসে থাকুন ১০ মিনিট।
রাতে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমোবেন।
এনার্জি, এন্থুসিয়জ্ম এবং এমপ্যাথিঃ এই তিন ‘ই-পাওয়ার’-এর উপর জোর দিন।
সারাদিনের কাজ আগের রাতে ভেবে ঠিক করে রাখুন। এতে মানসিক চাপ কমবে।
সারাদিন মুখ গম্ভীর করে রাখবেন না, মাঝেমধ্যে মন খুলে হাসবেন।
হাওয়া বদলের জন্য মাঝেমধ্যে বেড়াতে যাবেন।
কর্মরতাদের ডায়েট চার্ট
সকাল ৭টাঃ
১ গেলাস জল, ১ মুঠো অঙ্কুরিত ছোলা
সকাল ৮টাঃ
লিকার চা, সঙ্গে দুটো বিস্কুট
ব্রেকফাস্ট
সকাল ৯টাঃ
ডালিয়া অথবা ওট্স ৫০ গ্রাম কিংবা
দুটো বাটার ব্রেড এবং ২০০ মিলিলিটার দুধ।
সকাল ১১ঃ৩০ মিনিটঃ
যে-কোনও ১টা মরশুমি ফল
লাঞ্চ
দুপুর ১ঃ৩০ মিনিটঃ
রুটি বা ভাত সঙ্গে ডাল ২৫ গ্রাম,
অল্প সবজি, মাছ ১০০ গ্রাম অথবা দুটো রুটি বা ভাজি সঙ্গে মাছ অথবা চিকেন অথবা ডিম এবং ১টা ফল
বিকেল ৪টেঃ
লিকার চা ১ কাপ, সঙ্গে ১টা বিস্কুট
সন্ধ্যে ৬টাঃ
৩০০ মিলিলিটার দুধের ছানা, সামান্য মুড়ি অথবা খই অথবা ড্রাই চিকেন ফ্রাই ৫০গ্রাম।
ডিনার
রাত্রি ৯টাঃ
রুটি ২ থেকে ৪টি,সঙ্গে ডাল ২০গ্রাম, সামান্য সবজি অথবা ১০০গ্রাম চিকেন অথবা মাছ অথবা পনির এবং স্যালাড।